পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর গত এক সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অন্তত ৬০ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক সেনারা। বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার পাল্টা প্রত্যাঘাতের পর ভারতের লক্ষ্য করে হামলার তীব্রতা বেড়েছে বহুগুণ। কুপওয়াড়ায় সিআরপিএফ ক্যাম্পে জঙ্গি হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শোপিয়ানের সেনা শিবির লক্ষ্য করে ফের গুলিবর্ষণ শুরু করেছে জঙ্গিরা। আগে থেকেই সতর্ক থাকায় পাল্টা জবাবও দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সূত্রের খবর, সন্ধে থেকে শুরু হওয়া গুলির লড়াই এখনও চলছে।
সেনা সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধেয় শোপিয়ানের নাগবালে ভারতীয় সেনার ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ক্যাম্প লক্ষ করে গুলি ছুড়তে শুরু করে সন্ত্রাসবাদীরা। জঙ্গি হানা হতে পারে গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবর পেয়ে আগে থেকেই সতর্ক ছিল কাশ্মীর পুলিশ। জঙ্গিদের গুলির মুখে পাল্টা জবাব দেয় তারাও। সেনা শিবির চত্বর ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জইশ জঙ্গির আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে মৃত্য হয় ৪০ সেনা জওয়ানের। তারই প্রত্যাঘাতে গত বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বালাকোটের একাধিক জঙ্গি শিবির। জইশ, লস্কর-ই-তৈবা, হিজবুল-সহ খতম হয় প্রায় ৩৫০ জঙ্গি। তার পর দিনই পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান এফ-১৬ কে তাড়া করতে গিয়ে পাক সেনাদের হাতে আটক হন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।
বস্তুত, অভিনন্দনকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলাকালীনই নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাবর্ষণ শুরু করেছিল পাক সেনারা। শুক্রবারই উপত্যকার কৃষ্ণাঘাটিতে পাক গোলায় ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে একটি বাড়ি। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৪ বছরের এক গৃহবধূ ও তার দুই নাবালক সন্তানের। সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু গুলি নয়, বেছে বেছে ভারতের গ্রামগুলি লক্ষ্য করে ছোড়া হচ্ছে মর্টার ও হাউইতজার ১০৫ মিমি গোলাও। পুঞ্চের মানকোটে পাক ও ভারতীয় সেনাদের গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গুরুতর জখম হন এক মহিলা। গত বৃহস্পতিবার পুঞ্চে পাকিস্তানের গোলায় নিহত হন ২৭ বছরের আমিনা আখতার। জাকির হুসেন নামে এক সৈনিকও মারা যান। মানকোট, সালোত্রি ছাড়াও পাক হামলা চলছে কৃষ্ণাঘাটি লক্ষ করে।
পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবারই সীমান্তের স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত স্কুল বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের বাড়ির বাইরে বার হতে নিষেধ করা হয়েছে। ২০০৩ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু পাকিস্তান তার পরে প্রায়ই চুক্তি ভেঙে গোলাবর্ষণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০১৮ সালেই তিন হাজারের বেশি বার ভারতের গ্রাম ও সেনাঘাঁটিকে নিশানা বানিয়ে গোলাগুলি চালিয়েছে পাক সেনা।