ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফিরে গেছেন উমা। তাই মন ভালো নেই। প্রতিবারের মতো এই বিষাদ মুহূর্তেই তারামায়ের আবির্ভাব উৎসবে আজ মেতে উঠল তারাপীঠ। বহু বছর ধরে শুক্লা চতুর্দশী অর্থাৎ লক্ষ্মী পুজোর আগের দিন মায়ের আবির্ভাব তিথি পালিত হয় তারাপীঠে। শুক্লা ত্রয়োদশী থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে মন্দির প্রাঙ্গণে। বিশেষ পুজোর পাশাপাশি বসে মেলাও।
কথিত, পাল রাজত্বের সময় জয়দত্ত সওদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন শ্বেত শিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নিচে মায়ের শিলা মুর্তি রয়েছে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে দেবীর শিলা মুর্তি উদ্ধার করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই থেকেই এই তিথিকেই মায়ের আবির্ভাব দিবস হিসেবে পালন করা হয় তারাপীঠে।
তারামা উত্তরমুখে আসীন হলেও এ দিন পশ্চিম মুখে বসিয়ে আরাধনা করা হয় তাঁর। এর পিছনেও রয়েছে এক কাহিনী। কথিত, বাংলার ১১০৮, ইংরাজির ১৭০১ সালে তৎকালীন তান্ত্রিক পুরোহিতরা আবির্ভাব তিথিতে মাকে বিরাম মন্দিরের পূর্ব দিকে বসিয়ে পুজো শুরু করেন। সে সময় মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। তা দেখে তন্ত্রসাধক ও পান্ডারা রাজাকে আসন থেকে তুলে দিয়ে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজাও তখন মায়ের প্রতি অভিমান করে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে চলে আসেন। এখানেই ঘট প্রতিষ্ঠা করে তারামায়ের পুজো করে গ্রামে ফিরে যান তিনি। সেই রাতেই তারাপীঠে তৎকালীন প্রধান তান্ত্রিক আনন্দনাথকে তারামা স্বপ্নে আদেশ দেন, রাখরচন্দ্র তাঁর ভক্ত, অভিমান করে চলে গেছেন। তাই এ বার থেকে মায়ের পুজো যেন পশ্চিম মুখে মলুটির কালীবাড়ির দিকেই করা হয়। তারপর থেকেই বিশেষ এই তিথিতে তারামায়ের পুজো পশ্চিম মুখেই করা হয়ে থাকে।
আবার অন্য মত, এ দিন তারামায়ের বোন ঝাড়খণ্ডের মুলুটিমা দেখা করতে এসেছিলেন বলেই তারামা পশ্চিমমুখে বসে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর জন্য।
বছরের এই বিশেষ দিনে ভোর তিনটের সময় তারামায়ের বিগ্রহ মূল মন্দির থেকে বের করে বিশ্রাম মঞ্চে ভক্তদের মাঝে রাখা হয়। সেখানেই চলে আরাধনা। সন্ধ্যায় ফের মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দেবীমূর্তি। এ দিন দুপুরে ভোগ দেওয়া হয় না দেবীকে। সন্ধ্যায় মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ভোগ নিবেদন করা হয়।
বিশেষ তিথিতে আজ সারাদিনই ভক্তদের উপচে পড়ে মন্দির চত্বরে।