বিশেষ এজেন্ডায় স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ যাওয়া – বাংলার বীর হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্য রায়! যার নাম শুনে ভয়ে কাঁপতো মুঘল রাজারা।
ভারতীয়দের আসল ইতিহাস পড়ানো হয় না, ইতিহাস না জানার কারণে জাতি দুর্বল ভীরু হতে শুরু হয়েছে। তবে ভারত দেশে যে প্রান্তের ইতিহাস সবথেকে বেশি লুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো বাংলার ইতিহাস। কারণ ইংরেজরা বাংলাতেই সবথেকে বেশি সক্রিয় ছিল, একইসাথে রাজনৈতিক কারণেও বাংলার মানুষ তাদের ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বাংলার মানুষ মনে করেন যে, সিরাজউদ্দৌলা থেকে বাঙালি তার বীরত্বের শুরু করেছিল। বাংলার মহাপুরুষদের কথা বললে সবথেকে প্রথমে আসে সুভাষচন্দ্র বসুর নাম। তবে সুভাষচন্দ্র বসু যে হিন্দু রাজাদের বীরত্বের কাহিনী পড়ে অনুপ্রাণিত হতেন তাদের আজ ইতিহাস ও সমাজ ভুলিয়ে দিয়েছেন।
বাংলার এমনি এক রাজার মধ্যে ছিলেন প্রতাপাদিত্য রায়। যার বীরত্বের কাহিনী শুনে শিবাজী মহারাজ ছত্রপতি শিবাজি হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। এছাড়াও সুভাষচন্দ্র বসুও রাজ প্রতাপাদিত্যর কাহিনী পড়ে দেশকে স্বাধীন করার জন্য অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। রাজা প্রতাপাদিত্য জমিদারি থেকে শুরু করে হয়েউঠেছিলেন এক মহান হিন্দু রাজা। যিনি মায়ানমারের কিছু এলাকা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিলেন। বর্তমানের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, যশোর সব এলাকা ছিল তার রাজত্বের অংশ। সংস্কৃতি ভাষায় দক্ষ ও বেদ পাঠে ছিল তার বিশাল পান্ডিত্য।
১৫৯৫ থেকে ১৫৯৮ পর্যন্ত রাজা প্রতাপাদিত্য মুঘলদের সাথে টানা তিনটি যুদ্ধ করেছিলেন। তিনটি যুদ্ধে হিজলপতি ঈশা খাঁ, মুঘল সেনানী শের খাঁ ও ইব্রাহিম খাঁকে পরাজিত করেছিলেন। ১৫৯৯ সালে আকবরের বশ্যতা অস্বীকার করে তার যশোরের সর্বাত্মক স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এইভাবেই বঙ্গদেশে হিন্দু রাজ শক্তির অভ্যুত্থানের ঘটনা দ্রুতবেগে পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বহু বছর মুঘলরা আর রাজা প্রতাপাদিত্যর কাছে ঘেঁষতে পারেনি। ১৬০৯ সালের দিকে নিজের দেশের রাজদের ঢোকাবাজির জন্য প্রতাপাদিত্যকে হারের সম্মুহীন হতে হয়েছিল।
বাংলার এমন আরো মহান রাজা রয়েছেন যাদেরকে আজ ইতিহাস থেকে বিলুপ্ত করে শুধুমাত্র মুঘলদের ইতিহাস পড়ানো হয়।এমনও কিছু রাজা ছিলেন যারা ভারত জুড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। অবশ্য এক্ষেত্রে বাংলার মানুষও কিছুটা দায়ী। মহারাষ্টের মানুষজন শিবাজী মহারাজকে ভোলেননি, রাজস্থান মোহরানা প্রতাপ কে ভোলেনি, কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের মহান হিন্দু রাজাদের ভুলে গেছে।
✍️সায়ন চক্রবর্তী