রিচার্ড নিক্সন, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই নামটি কুখ্যাত। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তাঁর মতো ভারত বিদ্বেষী এখনও কেউ নেই। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বা বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ইন্দিরা গান্ধীকে নিরস্ত্র করতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর পাঠিয়েছিলেন নিক্সন, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর বিচক্ষণ ‘রুশ চালে’ সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। নিক্সনের আমলেই তলানিতে থেকে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক। তবে সে সময়কার মার্কিন কূটনীতির উপর অনেকটাই প্রভাব ফেলেছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ব্যক্তিগত পছন্দ। বরাবরই ভারতীয়দের তিনি সইতে পারতেন না। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর গলায় গলায় ভাব ছিল।
সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গ্যারি বসের দৌলতে হোয়াইট হাউসে নিক্সনের গোপন কথাবার্তার একাধিক অডিও টেপ প্রকাশ্যে এসেছে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে কতটা বর্ণবিদ্বেষী ছিলেন নিক্সন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে ওভাল অফিসে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “সন্দেহ নেই যে ভারতীয় মহিলারা একেবারেই আকর্ষণীয় নয়। লোকে আফ্রিকার মানুষের কথা বলে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরাও এদের থেকে অনেক ভাল। অন্তত পশুদের মতো একটি বন্য বা আদিম আকর্ষণ রয়েছে তাদের মধ্যে। এদের মধ্যে কিছুই নেই। সত্যি ভারতীয়রা জঘন্য। আমি তাদের একদমই সইতে পারি না। ভারতীয় মহিলাদের কথা না বলাই ভাল। তাদের দেখলে আমার মধ্যে কোনও দৈহিক অনুভূতি আসে না। তাই ওই মহিলাদের সঙ্গে কড়া ব্যবহার করা সহজ।”
শিক্ষাবিদ গ্যারি বসের মতে, এহেন ঘটনা নতুন কিছু নয়। বহুবার তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হ্যানরি কিসিংগারের সামনে ভারতীয়দের প্রতি বিদ্বেষ উজাড় করে দিয়েছে নিক্সন। তাঁর এই ব্যতিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে রীতিমতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। এদিকে, অডিও টেপগুলি থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেখানে পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন ইন্দিরা। তিনি বুঝিয়ে দেন, আমেরিকার চাপের মুখে মাথা নত করবে না ভারত। আর এতেই চটে লাল হয়ে ওঠেন নিক্সন। অত্যন্ত নোংরা ভাষায় তিনি বলেন, “ওই মহিলা একটি পশু।”
উল্লেখ্য, নিক্সনের ভারত বিদ্বেষের আরও একটি কারণ হচ্ছে, ‘নন এলাইনমেন্ট মুভমেন্ট’ শুরু করলেও বরাবরই সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষেই ছিল নেহেরুর ভারত। যদিও এর মূল কারণ ছিল পাকিস্তানকে দেওয়া মার্কিন মদত। পাঁচের দশকেই বাগদাদ চুক্তিতে সই করে মার্কিন হাতিয়ার পেতে শুরু করে ইসলামবাদ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েতের দিকে ঝুঁকে পড়ে ভারত। সেই সম্পর্ক বজায় রাখেন ইন্দিরা গান্ধীও। আর এতেই ভারতীয়দের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন নিক্সন। সেই সাজাও অবশ্য তিনি পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয় তাঁকে।