একাদশে বৃহস্পতি মনে হলেও আসলে তাদের শিরে সংক্রান্তি! কালাশনিকভধারী তালিবান যোদ্ধাদের যতই কেউকেটা মনে হোক, আসলে তারা তা নয়, অতীতেও পারে নি দেশ চালাতে; বুভুক্ষু দেড় কোটি দেশবাসীর মুখে খাবার তুলে দিতে না পারলেই আবার শুরু হবে গৃহ যুদ্ধ

তালিবানের এখন একাদশে বৃহস্পতি মনে হলেও আসলে তাদের শিরে সংক্রান্তি। তাবড় সমর বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ কেউই ভাবতে পারে নি একদা পর্বত কন্দরে ঘাপটি মেরে বসে মার্কিন সৈন্যের উপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া অশিক্ষিত বর্বরদের দল একদিন আফগানিস্তানের রাজ্যপাট দখল করবে।

এখন পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা প্রচারিত বুলেট প্রুফ ভেস্ট পরিহিত কালাশনিকভ রাইফেল ধারীদের ও তাদের অস্ত্রের বাহার রীতিমতো ভীতি জাগানোর মতো মনে হতে পারে কিন্তু দেশ চালানোর রসদ কতটা আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে ।
আফগান সেনার ফেলে যাওয়া মার্কিন ফৌজের অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল থেকে শুরু করে মিসাইল সিস্টেম। ইটা স্পষ্ট যে ভাঁড়ারে মানুষকে হত্যা করার সরঞ্জামের অভাব নেই কিন্তু নেই পর্যাপ্ত খাবার। তালিবানি শাসনে অনাহরের মুখে পড়তে চলেছেন অন্তত ১ কোটি ৪০ লক্ষ আফগানিস্তানবাসী ।

বুধবার বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের প্রধান মেরি এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি কাবুল থেকে রাষ্ট্রসংঘকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। দেশজুড়ে চলা নৈরাজ্য ও অরাজকতার মাঝে সাধারণ আফগানদের কাছে খাদ্য সংগ্রহ করা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে। জঙ্গিদের ভয়ে ব্যবসার সাধারণ নিয়ম ও পরিকাঠামো সমস্ত কিছুই প্রায় ভেঙে পড়েছে। ফলে খাদ্য পরিবহণও ধাক্কা খেয়েছে। একইসঙ্গে মার খেয়েছে উৎপাদনও। তবে খাদ্য সঙ্কটের কারণ হিসাবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি। শেষ তিন বছরে দু’বার মারাত্মক খরার মুখে পড়েছে এই দেশটি, তার উপর করোনা পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অনেকটাই পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছে। এর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। এর ফলেই সামগ্রিক পরিস্থিতি দেশটিকে খাদ্য সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির ছবি রাস্ত্রসংঘের কাছে তুলে ধরে ম্যাকগ্রোয়ার্টি বলেছেন, ‘‘অনাবৃষ্টির কারণে দেশের একটা বড় অংশের ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া তালিবান একের পর এক প্রদেশে যুদ্ধ করেছে, তার ফলে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। ফসলের গোলা পুড়ে গিয়েছে, এমন উদাহরণও রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ফসল ইতিমধ্যে নষ্ট। শীত ক্রমে এগিয়ে আসছে। তার আগে যথেষ্ট পরিমাণ ফসল উৎপাদিত না হলে তীব্র খাদ্য সঙ্কট তৈরি হতে পারে।’’
উল্লেখ্য, পঞ্জশিরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। স্থানীয় প্রতিরোধে বেশ কিছু এলাকা হারিয়েছে তালিবান জঙ্গিরা। আর তালিবান বিরোধী এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সদ্য-প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানির (Ashraf Ghani) ‘ডেপুটি’ আমরুল্লা সালেহ। তিনি বুধবারই ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।  উত্তর-মধ্য আফগানিস্তানের এই এলাকা দিয়েই কাবুল থেকে মাজার-ই-শরিফের পথ গিয়েছে। ফলে ফের দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে চলেছে বলে আশঙ্কা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.