১৯৫২ সালের ছবি, ‘Singing in the Rain’, যেখানে লম্বা কালো ছাতাই হয়ে উঠেছিল ‘সিগনেচার’। জিন কেলির স্মরণীয় ট্যাপ নাচের প্রতীক ছিল ছাতাই।
‘Come on with the rain/ I’ve a smile on my face/ I’ll walk down the lane/ With a happy refrain/ Just singin’ in the rain’…..
বর্ষা আসলেই ঘর থেকে পথ সর্বত্র নজরে পড়ে হরেক রকমের ছাতা। বিভিন্ন সব আকার, নানান নকশা এবং নানান রঙের ছাতা নিয়ে যাতায়াত করে পথচারীরা। আভিজাত্যের প্রতীক থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে পরিণত হওয়ার এক দীর্ঘ এবং ঘটনাবহুল জার্নি রয়েছে ছাতার। ভারতের মাটিতে ছাতার ব্যবহারিক জনপ্রিয়তার আড়ালেও রয়েছে এক গল্প।
ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতে এসেছিল ছাতা। সেকালে মূলত অভিজাততন্ত্রের চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল ছাতা। সে এক সময় ছিল, যখন ‘ভদ্রলোক’ বাঙালি ‘বাবু’ তার পাশে সর্বব্যাপী ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না। বলা ভালো, পোশাক এবং জুতোর সঙ্গে ছাতাও ছিল একটি আনুষঙ্গিক সাজ, যা সেসময়ের বাবুদের আভিজাত্য বাড়িয়ে দিতো। বছরটি ছিল ১৯৪২। সমগ্র দেশ জুড়ে তখন তীব্র অস্থিরতা দানা বেঁধেছে। জাপানি শক্তির আকস্মিক বোমা হামলার ভয় তীব্র হওয়ায় বেশিরভাগ কলকাতাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামীণ এলাকায় আশ্রয় নেয়। রাজনৈতিক সংকটও বেড়ে যায়।
এই ধরনের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে, কার্তিক চন্দ্র পাল শহরে ফিরে আসেন। এবং তার পিতা তুলসীদাস পালের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার দেখাশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ছাতা তৈরি করা শুরু করেন এবং কলকাতার বড়োবাজার অঞ্চলের পুরুষোত্তম রায় স্ট্রিটে খোলেন তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রথম বিপণী। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে তাদের ছাতাগুলি। চাহিদা এতোটাই বেড়ে যায়, যে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কয়েকটি দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৪৭ সালে, তুলসীদাস ৫২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ যদিও ততদিনে, তাঁর ব্র্যান্ডটি জনপ্রিয়তার শিখরে। পরবর্তীকালে বছরের পর বছর ধরে অভ্যন্তরীণ বিবাদের ফলে পারিবারিক ব্যবসায় বিভাজন ঘটে ঠিকই কিন্তু ব্র্যান্ড নামে কোনোও পরিবর্তন ঘটেনি। ছাতার কোম্পানি হিসেবে কে.সি.পালের নাম প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কে.সি.পালের ছাতা মানেই উচ্চতর মানের কারিগরের প্রতীক। এতো বছর ধরে কোম্পানিটি পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে আপোস করেনি বলেই ‘কে সি পাল’ নামটি মানুষের প্রবল বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে।
চিরাচরিত কালো রঙের ছাতা থেকে শুরু করে উজ্জ্বল রঙের বাহারি নকশা করা ছাতা, অন্যদিকে পুরোনো ধাঁচের ‘সিঙ্গেল ফোল্ড’ ছাতা থেকে শুরু করে ‘থ্রি-ফোল্ডিং’ ছাতা, আবার স্বচ্ছ কাপড়ের নকশা করা ছাতা, সবেতেই কে.সি. পাল বিভিন্ন আকার এবং ডিজাইনে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, শৈলী এবং উপযোগের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে। ৮০ বছর বয়সী কোম্পানিটি বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং কে.সি. পালের নাতি-নাতনিরা এখন ব্যাবসার দায়িত্ব পালন করছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁরা ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করেছে। বর্তমানে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বিভিন্ন জায়গায় কে.সি.পাল তাদের ব্র্যান্ড নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে।