পাকিস্তান ‘জিহাদ’এর নামে সন্ত্রাস বন্ধ না করলে আলোচনার প্রসঙ্গই ওঠে না, রাষ্ট্রপুঞ্জের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে গর্জে উঠলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি তথা রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আকবরউদ্দিন। তাঁর সাফ যুক্তি, “জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ।”
ভারত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পরেই পাকিস্তান বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার জন্য সওয়াল করেছিল পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধু চিন। সেইমতো শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে। সেখানে ভারত বা পাকিস্তান কেউ ছিল না। শুধু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে ছিল চিন। বৈঠক শেষ হতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ভারত সরকার। তাই এই সিদ্ধান্ত এবং প্রাথমিক ভাবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে কাশ্মীরে।” তাঁর দাবি, সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান, কাশ্মীর নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে অযথা উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
১৯৭২ সালে শিমলা চুক্তির সময়ে শেষ বারের মতো কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের টেবিলে। পাকিস্তানের অভিযোগের ভিত্তিতে চিনের অনুরোধেই ফের জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেল নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের দূত ঝ্যাং জুন বলেন, “কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। কাশ্মীর নিয়ে একতরফা পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে ভারত ও পাকিস্তান উভয পক্ষকেই।”
রাষ্ট্রপুঞ্জে আলোচনার আগেই মার্কিন উপবিদেশসচিব জন সালিভানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতের কাশ্মীর-নীতিকে পুরোপুরি ‘দ্বিপাক্ষিক বিষয়’ বলে জানিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। এমনকি নিরাপত্তা এবং সুস্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে নয়াদিল্লির সঙ্গে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে আমেরিকার পক্ষ থেকে।
৫ অগস্ট ভারত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করে। রাজ্যটিকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে দেওয়া হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করে। ভারত বরাবরই বলে এসেছে, ৩৭০ ধারা বাতিল করা তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তান সেই সত্যিটা মেনে নিলেই ভালো করবে। কাশ্মীর প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চিন বাদে রাশিয়া ও ফ্রান্সকে পাশে পেয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি মনে করছে, কৌশলগত প্রশ্নে, প্যারিসেরও সমর্থন মিলবে। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে আমেরিকাও।