বিহারে এনকেফেলাইটিসে মৃত্যু ৫৫ শিশু সহ ৬৫ জনের, গরমেই ছড়িয়ে পড়ছে রোগ, মন্তব্য সরকারের

বিহারে কার্যত মহামারীর আকার ধারণ করেছে অ্যাকিউট এনকেফেলাইটিস সিনড্রোম। ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ শিশু। মুজফ্ফ‌রপুরের শ্রী কৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ ও কেজরিওয়াল ম্যাটারনিটি ক্লিনিকেই এই ৬৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, অতিরিক্তি গরমের ফলেই এই এনকেফেলাইটিস ছড়িয়ে পড়ছে হু হু করে।

সূত্রের খবর, এই আকিউট এনকেফেলাইটিস সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের বেশিরাভাগই পূর্ব চম্পারণ, পশ্চিম চম্পারণ, সীতামারহি, শেওহর, বৈশালী ও সমস্তিপুর এলাকার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, এই সব শিশুদের প্রত্যেকেই প্রচণ্ড জ্বর, বমি, মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তারপরে হঠাৎ করেই শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ফলে তাদের বাঁচানো যায়নি।

মুজফ্‌ফরপুর জেলা প্রশাসনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে অ্যাকিউট এনকেফেলাইটিস সিনড্রোম (এইএস) সন্দেহে মোট ১৭৯ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশে এনকেফেলাইটিসের হানায় মৃত্যু হয়েছিল ৩৫১ জনের।

বিহার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা সঞ্জয় কুমারের দাবি, “চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। হাসপাতালগুলিতে ভর্তি করা হয়েছে অসংখ্য শিশু ও মহিলাকে।” স্বাস্থ্য দফতর যদিও এনকেফেলাইটিসের তত্ত্ব মানতে রাজি নয়। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, বিহারের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে গরমের সময় যথেচ্ছ ভাবে লিচু খায় বাচ্চারা। এই লিচু থেকে নির্গত টক্সিনই রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার ঘটনাকে বলা হয়, ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’। রক্তে সোডিয়াম বা পটাসিয়ামের মতো ধাতব মৌলের পরিমাণ কমে গেলেও হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হন রোগী।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা সঞ্জীব কুমারের কথায়, বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন গরমের সময়তেই লিচু থেকে ওই বিশেষ টক্সিন বার হয়। যেটা শিশুদের লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাঁর মতে, মুজফ্‌ফরপুরে ব্যাপক হারে লিচু চাষ হয়। তাই এই টক্সিনের কারণেই মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গরমের প্রভাব কমে গেলে এই রোগের হানাও কমে যায় আশ্চর্যজনক ভাবে, কারণ তাপমাত্রা কমলে লিচুতে আর ওই বিশেষ টক্সিন তৈরি হয় না।

বিহার, উত্তরপ্রদেশের হাসপাতাল গুলিতে গিয়ে এই রোগের কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল টিমের সদস্যরাও। জানা গেছে, কয়েকটি শিশুর মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সেখানেও লিচু থেকে বেরোনো টক্সিনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই সব শিশুরা বেশিরভাগই অপুষ্টির শিকার। তার উপর টক্সিনের প্রভাবে লিভার ও মস্তিষ্কের কোষ কাজ করা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, লিভার বা যকৃত গ্লাইকোজেন সঞ্চয় করে রাখে। রক্তে শর্করার পরিমাণ আচমকা কমে গেলে সেই গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ বা শর্করা রক্তে মিশে ব্লাড-সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু, টক্সিনের প্রভাবে লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয়, ফলে অতিরিক্ত শর্করা রক্তে মিশতে পারে না। তার প্রভাবেই ব্রেন ডেথ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.