স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব, নেই কোনো ওষুধের দোকানও। বীরভূমের মধ্যেই থাকা ইলামবাজার ও বোলপুর মধ্যবর্তী শালবনের ২৫০ হেক্টর জায়গাতে চৌপাহড়ী অঞ্চল। এই অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ৮টি আদিবাসী গ্রাম। সেই গ্রামে প্রায় ৬-৭ হাজার মানুষের বসবাস করে। কিন্তু তাঁদের গ্রামে নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এমনকি নেই কোনো ওষুধের দোকানও। এই ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যেও এরকম চিত্র দেখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন একটাই আসে, আদিবাসীরা কি সবসময় পিছিয়েই থাকবে? এই কঠিন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পেয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না বহু মানুষকে। সেখানে এই আদিবাসীদের অবস্থা তাহলে কিরকম?
গ্রামবাসীর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তাঁদের পেতে হলে আসতে হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। যার দূরত্ব গ্রাম থেকে ১৬ কিলোমিটার। দিনের মধ্যে মানুষ অসুস্থ হলেও তাঁকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা তাও পাওয়া যায়, কিন্তু সমস্যা বাড়ে রাত্রির পর। রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও যদি বাড়বাড়ন্ত কোনো রোগের মুখে পরে গ্রামবাসী, তাহলে তাঁকে নিয়ে যেতে হয় বহু দূরে ইলামবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।
এখানেই শেষ নয়, আদিবাসী গ্রামবাসী, সেভাবে নেই আর্থিক অবস্থা। তার মধ্যে যদি বাড়ির কেও অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে ঘটি বাটি বিক্রি করার মতো অবস্থা হয়ে যায়। রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যদি অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়িতে খবর দেওয়া হয়, তাহলে আবার চালকের মনের ওপর নির্ভর করে। চালকের মন হলে আসেন, না হলে আসেন না। আবার সেই চালক বোলপুর যাওয়ার জন্য ভাড়া নেয় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। কিন্তু এত টাকার সামর্থ থাকে না গ্রামবাসীদের। তখন তাঁরা টোটোর ব্যবস্থা করে, কিন্তু সেই টোটো বোলপুর হাসপাতাল পর্যন্ত ভাড়া নেয় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
এই ঘটনায় গ্রামের বাসিন্দা রাম প্রসাদ বাউরি বলেন, “চৌপাহড়ী অঞ্চলে চারদিকে শুধু শালবন। তবে জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। মোট গ্রামের সংখ্যা রয়েছে ৮ টি। রাঙাবাঁধ, মোরগাবুনি, নীমবুনি, পাঁশকুড়া, খয়েরডাঙা, লক্ষ্মীপুর, জামবুনি, আমখোই গ্রামগুলোতে হাজার ছয় সাতেক মানুষের বসবাস।”
অন্যদিকে, বছর ২০ এবং ২২ এর মেয়ে শ্যামলী সোরেন ও সোনালী সোরেন বলেন, “নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে হয় আমাদের ‘আমখোই’ আদিবাসীদের। যদি সামান্য কোনো কিছু শারীরিক সমস্যা হয়, তার জন্য আমদের ১০০ টাকা টোটো ভাড়া করে যেতে হয়। রাত ৮ টার পর গ্রাম কেউ অসুস্থ হলে তাঁর পাশাপাশি যন্ত্রানা পোহাতে হয় রোগী পরিজনদেরও।”