মৃত্যুর আগে পর্যন্তও চিনের বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। শেষের কয়েকদিন বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কথা হত, তখনও মেসেজে চিনা দ্রব্য ব্যবহার করতে বারণ করতেন। লাদাখ সীমান্তে চিনা ফৌজের নৃশংসতার শিকার শহিদ বাঙালি জওয়ান রাজেশ ওরাওঁয়ের (Rajesh Oraon) বন্ধুদের স্মৃতিতে উঠে এল সেইসব কথাই। তিনি যখন চিনা দ্রব্য ব্যবহারে বারণ করতেন তা শুনতেন বন্ধুরা। কিন্তু সেই বন্ধু রাজেশই আর নেই। এখনও মেনে নিতে পারছেন না বন্ধুরা। হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের গ্রুপে পাঠানো বরফে ঢাকা পাহাড়ের ছবি এখনও জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু রাজেশই আর বেঁচে নেই। পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বন্ধুদের।
হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের একটা গ্রুপ ছিল রাজেশের। সেখানে সীমান্তের প্রচুর সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে পাঠাতেন রাজেশ। প্রতিদিন গ্রুপে সবার খবর নিতেন। যখন বাড়ি ফিরতেন, সেইসময় বন্ধুদের সঙ্গে চলত আড্ডা-ইয়ার্কি। চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করলে বন্ধুদের চিনা দ্রব্য ব্যবহার করতে মানা করতেন রাজেশ। সবই কথোপকথন চলত সেই গ্রুপে। মহম্মদবাজারের ভূতুরা পঞ্চায়েতের এই আদিবাসী পরিবারের ছেলে রাজেশ ওরাওঁ ছিলেন এলাকার কাছে এক অনুপ্রেরণা। ২০১৫ সালে শেওড়াকুড়ি বংশীধর উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেই সেনাবাহিনীর বিহার ব্যাটালিয়নে যোগ দেন রাজেশ। স্বপ্ন ছিল, দিনমজুর বাবা সুভাষ এবং মা মমতাকে একটু সুখ, শান্তি-স্বচ্ছন্দে রাখার। চেষ্টাও করেছেন। তাই ২৬টি বাড়ির বেলগড়িয়া গ্রামের একমাত্র পাকা বাড়ি রাজেশদেরই। এলাকায় একমাত্র সরকারি চাকুরেও রাজেশ।
গ্রামবাসী বামি ওরাওঁ বললেন, “ছেলেটা গ্রামে এলে যে গ্রামটা জেগে উঠত! সবাইকে নিয়ে খেলা, হাসি-ঠাট্টা, গল্পে মশগুল থাকত দিনরাত। গতবার সরস্বতী পুজোয় শেষ এসেছিল গ্রামে। জ্যেঠতুতো ভাই অভিজিৎ বলছিলেন, এবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল রাজেশের। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আত্মীয়দের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার। শেষবার যখন ফোনে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল, শুধু বলেছিল, ‘বাবা, মা, বুনিকে দেখিস।’ কিন্তু ও যে এভাবে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবে ভাবিনি কখনও।”