দা ওয়্যার কারা চালান কেউ জানেন ? এই গোষ্ঠীর সঙ্গে কংগ্রেস এবং পি কের সম্পর্ক কত গভীর কেউ জানেন ?

পেগাসাস নিয়ে আমরা ব্যস্ত, উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠিত, চিন্তিত, ব্যথিত । আমাদের মৌলিক অধিকার হরণ করছে সরকার । তাইতো ?

তিনজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে নাকি চল্লিশটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধির ওপর নজরদারি ছিল । এমনই রিপোর্ট বা অনুসন্ধান করেছে দা ওয়্যার নামক সংবাদ প্রতিষ্ঠানটি ।

কেন্দ্রীয় সরকার পুরো রিপোর্টটি অস্বীকার করেছে । বিরোধীরা বলছে ঘোর চক্রান্ত । কে সত্যি ভবিষ্যতই বলবে । কিন্তু সমস্ত বিষয়টির অনেক গুলো দিক রয়েছে । যা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন

১. সময়টা খেয়াল করুন । ঠিক বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন একটি বিশেষ সংবাদ মাধ্যম গোষ্ঠী ছড়ালো এই রিপোর্টটি ।

২. কোন প্রমাণ বা এভিডেন্স নেই । শুধুই তদন্ত রিপোর্ট । এবং হওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া বেশ কিছু নাম ।

৩. রাজনৈতিক নেতার নাম তালিকায় খুবই কম, সাংবাদিকদের এবং সংবাদমাধ্যমের নাম গিজ গিজ করছে তালিকায় ।

৪. তিনজন পরিচিত বিরোধী নেতার মধ্যে রাহুল এবং অভিষেক । ভূ ভারতে বিরোধী নেতার নামে টান ?

৫. এরই মধ্যে প্রশান্ত কিশোরের ফোন পরীক্ষা হয়ে গেল, তার ফোনে ইজরায়েলে তৈরি পেগাসাস সফটওয়্যার হানাও দিয়ে দিল । প্রথমে লোকসভা ভোটের আগে তার মোবাইল হ্যাক করার চেষ্টা হয় তা নাকি উনি জেনেও গেছেন । তারপর পশ্চিমবঙ্গের ভোট গ্রহণ চলাকালীন তার ফোনে পেগাসাসের দেখাও মিলল । রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পি কের বৈঠকে পেগাসাস নাকি গিয়েছিল সব কিছু গোপনে শুনতে ।

এত সব কিছু রাহুলের সঙ্গে পিকের বৈঠকের তিনদিনের মধ্যে জানাও হয়ে গেল । সংবাদ মাধ্যমে তা ছড়িয়েও দেওয়া হল ।

গল্পের পর গল্প । কিন্তু বড্ড বেশি কাঁচা গল্প । আমার মনে হয়েছে ।
দা ওয়্যার কারা চালান কেউ জানেন ?
এই গোষ্ঠীর সঙ্গে কংগ্রেস এবং পি কের সম্পর্ক কত গভীর কেউ জানেন ?
কোন খবরের পোর্টালে ৯.৫৯ কোটি টাকার ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে কেউ কি জানেন ?
মাত্র ৬ মাসে সেই সংস্থায় ২৮.৪৬ কোটির বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে কেউ আমরা জানি ?
এই রিপোর্ট পেগাসাসের মত হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া রিপোর্ট কিন্তু নয় । সব প্রমাণ হাতে নিয়ে এই তথ্য ইডি বার করে এনেছে ।

আমার মনে হয়েছে পেগাসাসের মধ্যে বড় গল্প কিন্তু লুকিয়ে আছে । লক্ষ করুন ইজরায়েলি সংস্থা এন এস ও শুধু সরকারকে তাদের সফটওয়্যার বিক্রি করে এই দাবী প্রচারকরা মান্যতা দিচ্ছে । কিন্তু এন এস ও যখন বলছে ভারতে যা রটছে তা সর্বৈব ভুল এবং মিথ্যাচার তখন সেটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য হয়ে যাচ্ছে । আসলে বিশ্বাস আর অবিশ্বাস এখন চালিত হয় স্বার্থের প্রয়োজনে, অর্থেরও প্রয়োজনে ।

রাজনীতি থেকে সংবাদ জগৎ সর্বত্র । সবটাই ইনভেস্টমেন্ট ওরিয়েন্টেড । সঙ্গে সংস্থা,প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির নিজ নিজ রাজনৈতিক লক্ষ্যের এবং মুনাফার প্রয়োজনে ।

এই বাংলার কথাটাই ধরুন । একটা উদাহরণ পেশ করি । ভগবান ছাড়া যারা কাউকে ভয় করেনা প্রচার করে তাদের দশা শুনবেন ? বরুণ সেনগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত “বর্তমান” পত্রিকার কথাই বলছি । এই নির্বাচনের ঠিক আগে মাত্র ১৫ দিনে (১৬ ই জানুয়ারি, থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২১) শুধুমাত্র টেন্ডার বিজ্ঞাপন ছাপার জন্য নবান্ন “বর্তমান”কে দিয়েছে ১ কোটি ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৫০ টাকা । (মেমো নং ১৯৪৪- আই সি এ (এন))। প্রমাণ হিসেবে মেমোর প্রতিলিপি নীচে দিলাম । ডিসপ্লে বিজ্ঞাপনের টাকা আলাদা । সেটা প্রায় দ্বিগুণ । শুধু ১৫ দিনের হিসেবটা পেশ করলাম । মাসের অঙ্কটা এবার হিসেব করে নিন ।

এই সংবাদ মাধ্যম ভুলেও আপনার যন্ত্রণার কথা লিখবে ? এরা পেগাসাসের ছড়ানো গল্প নিয়ে আপনাকে মশগুল করে রাখবে । “প্ল্যান পি কে”র জন্য প্রাণ বাজী রাখবে, গল্প ছড়াবে । ভুলেও কখনো প্রশ্ন করবে না পেগাসাসের গডফাদার রাজীব কুমারকে ওয়েবেলে বসিয়ে মমতা এখনও তাঁকে দিয়ে কোন কম্মটি করান ? ২৭ মার্চ মুকুল রায়ের সঙ্গে শিশির বাজোরিয়ার ফোন ট্যাপিং নবান্নের সরকার কোন পেগাসাসকে দিয়ে করিয়েছিল ? বাংলার ১৭৭ জন রাজনৈতিক নেতা, ৬৮ জন আমলা, এবং সামান্য সরকার বিরোধী শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক, আমলা, নাট্যকার যারা যে কোনে আছেন সবার ফোনালাপ কোন যাদুমন্ত্র পৌঁছে যায় নবান্নের এক বিশেষ অফিসারের ল্যাপটপে ? এবং সেখান থেকে বাছাই করে একটি স্মার্ট ফোনে ।

পেগাসাস ভারতে এসেছে কি না, কার কার ফোনে ছোঁয়া দিয়েছে ভবিষ্যত বলবে । কিন্তু পেগাসাসের বাবারা এই বাংলায় বংশ বৃদ্ধি করেছে কিন্তু বহুদিন । তাঁদের চেনা যায়নি, ধরা যায়নি, কারণ তাঁদের যাঁরা ধরতে পারতো তাঁরা শুধুমাত্র ১৫ দিনেই নবান্ন থেকে ১ কোটি ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৫০ টাকার ইনাম নিয়ে যায় ।

আর এমন ইনাম পেলে কেউ কি ঠিক থাকতে পারে বলুন ? “বর্তমান” বলে কি তাঁরা “তাঁদের ভবিষ্যত” নিয়ে উদাসীন থাকবেন ? থাকা কি উচিত না সম্ভব ? বলুন ? তাঁরাও তো রক্ত মাংসের মানুষ । তাঁদেরও তো বাড়িতে বউ বাচ্চা আছে !!

ফলে এই বাংলায় পেগাসাসের বংশ বৃদ্ধি হয় নীরুপদ্রবে । প্রহরীহীন একটা সমাজ ব্যবস্থায় ভণিতা আর ভন্ডামীর আড়ালে স্পর্ধা বাড়ে শাসকের । আমার ফোনের অন্য প্রান্তে আপনার সঙ্গে আর কে বসে আছেন ঘাপটি মেরে আমি আপনি কি জানতে পারি ? জানা সম্ভব ? বলুন ?

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.