প্রশান্তকে চেনেন? না খুনী পিকে নয়, আমাদের বাংলার শিক্ষিত ছেলে প্রশান্ত! বেকারত্বের জ্বালায় সে আজ পাগল,আকাশ বাঘারিয়ারা মমতার আদেশে, নির্দেশে লিগ্যাল অ্যাকশন নিয়ে এমন কত প্রশান্ত তৈরি করেছে, করবে আমরা কেউ জানি কি ?

আকাশ বাঘারিয়া । সম্ভবত ডি সি সাউথ । কলকাতা পুলিশের ।

আজ ভবানী ভবনের সামনে ধমকাচ্ছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের । পুলিশের কনস্টেবল এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যাঁরা চাকরিটা শেষ পর্যন্ত পাননি তাঁদের ।

কি তাঁদের অপরাধ ? তাঁরা জন্মেছেন এই বাংলায় । পড়াশুনা করেছেন এই বাংলায় । ব্যবসা বাণিজ্য না করে একটা চাকরির খোঁজে দিবারাত্র দৌড়েছেন । শেষপর্যন্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা নিতে গিয়েছিলেন ২০২১ এর ২৭ জানুয়ারি । গিয়ে শোনেন রিক্রুটমেন্ট জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়েছে কোর্টে । না মিটলে চাকরি হবে না । হাইকোর্ট পাঠিয়েছে স্যাটে । স্যাট এ ঝুলছে সেই মামলা । সরকার লড়াইতে গো স্লো পদ্ধতি নিয়েছে ।

অতঃপর ? সাড়ে ৬ হাজার ছেলে চাকরিটা পেয়েও পেল না । ৮৪১৯ জনের মধ্যে ১৮৭১ জনকে এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে আদালতের দোহাই দিয়ে বাকি উত্তীর্ণদের জন্য দরজার ছিটকিনিটা তুলেছে সরকার । বলেছে আদালতে মিটুক । তারপর দেখা যাবে ।

কাদের বলেছে ? তাদেরই একজন ফোন করেছিলেন দুপুরে । বললেন আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই । পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে বাড়ি যাচ্ছি । ডান হাতটা তুলতে পারছি না । আঙুল কিছু ভেঙেছে মনে হচ্ছে । বাবা দিনমজুর । নিজে প্রাইভেট টিউসানি করে পড়াশুনা শেষ করেছি । মাস্টার্সে ভালো নম্বর পেয়েও কনস্টেবলের চাকরির জন্য ঝাঁপিয়েছিলাম খেলাধুলায় ভালো বলে । উত্তীর্ণও হয়ে গিয়েছিলাম । শেষে সরকার ঠকিয়ে দিল । আর বেঁচে লাভ কি স্যার ! কাঁদতে কাঁদতেই ফোনটা কেটে দিল ।

এই ছেলেগুলোকেই আজ ভবানী ভবনের সামনে ডি সি সাউথ আকাশ বাঘারিয়া নবান্নের নির্দেশে বলছিলেন ৫ মিনিটের মধ্যে না উঠলে লিগ্যাল অ্যাকশন নেব । নিলেনও সেই “লিগ্যাল অ্যাকশন” । চাকরি চাইতে আসা ছেলেগুলোকে বেধড়ক ঠেঙ্গালেন । কলার ধরে থাপ্পড়, ঘুঁষি মারতে মারতে কাউকে কাউকে প্রিজন ভ্যানে তুললেন । কাউকে কাউকে মাটিতে ফেলে পেটালেন । চাকরি চাইতে এসেছিস ? অমুকের বাচ্চা ……

এরা চাকরিটা পেলে, আজ যারা বেধড়ক মারল তাদেরই সঙ্গে হয়তো ডিউটি করত । আজ উল্টে কি ঘটল ? হাতজোড় করে প্রাপ্যের ভিক্ষে চাইতে গিয়ে জখম হয়ে ফিরে গেল বসিরহাট, শান্তিপুর, বারুইপুর, শ্রীরামপুর, বর্ধমানের গরীব ঘরের শিক্ষিত ছেলেগুলো । দেহে আর মনে বড় বড় ক্ষতচিহ্ন গুলো সঙ্গে করে নিয়ে ফিরল । অনুদান অভ্যস্ত একটা সমাজে ওরা চাকরি চেয়েছিল, গতরে খাটতে চেয়েছিল । এর বেশি কিছু ? হয়তো কিছুটা অবুঝের মত ।

যেভাবে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে বাবা মা ‘ র একমাত্র এক “অবুঝ সন্তান” প্রশান্ত মান্ডির কথা সম্প্রতি জেনেছি আমরা টিভি নাইনের দৌলতে । পড়াশুনাটা শিখেছিল অত্যন্ত মেধাবী এই প্রশান্ত । খুব গরীব ঘরের ছেলে । এক বেলা না খেয়েও উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ২০১৬ তে একটা হাইস্কুলে পার্শ্ব শিক্ষকের ইন্টারভিউ এর ডাক পায় প্রশান্ত । পরীক্ষা দিয়ে এসে সেই সন্ধ্যে থেকেই ছেলেটা কথা বলা বন্ধ করে পরিবারের সঙ্গে । স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সার্টিফিকেট ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করে প্রশান্ত ।

তারপর ? প্রশান্ত আর স্বাভাবিক হয়নি । গত পাঁচটা বছর প্রশান্তকে বাড়ির দাওয়ায় শেকল বেঁধে রাখতে হয়েছে । এখনো, ৬ বছর বাদেও, এই একুশেও প্রশান্ত এখনো শেকল বন্দী । ( ছবি নীচে) বাঁকুড়ায় ।

আকাশ বাঘারিয়ারা মমতার আদেশে, নির্দেশে লিগ্যাল অ্যাকশন নিয়ে এমন কত প্রশান্ত তৈরি করেছে, করবে আমরা কেউ জানি কি ? কিন্তু এটা তো আমরা সবাই জানি যে এ রাজ্যে আনন্দবাজার বা কৌশিক সেন এর মত বুদ্ধিজীবীদের চোখে এসব কিছুতেই ধরা পড়ে না ।

মাঝে মাঝে জানতে বড় ইচ্ছে হয় যে এ রাজ্যে চাকরি থেকে বঞ্চিত করাটা কি “অধিকার” কাড়া নয় ? এই অধিকারগুলো রক্ষার জন্য কেউ সুজাত ভদ্র বা রঞ্জিত শুরদের কখনো কথা বা শব্দ খরচ করতে দেখেছেন ?

এ রাজ্যে এস এস সি, পি এস সি, গ্রুপ ডি থেকে পুলিশের চাকরিতে জালিয়াতি করা হয় যাতে লোকে বাধ্য হয়ে আদালতে যায় । আর আদালতে গেলে টাকাটা বাঁচে সরকারের । এই বিশেষ ইকোনমিকসের প্রবক্তা মমতা আর তার অর্থ মন্ত্রী অমিত মিত্র ।

নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন কিম্বা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা কি খবর রাখেন এই তত্ত্বের ? জানিনা । এরাজ্যে এই অর্থনীতির ধারায় প্রাপ্য চাকরি না পাওয়া কত প্রশান্তরা কিভাবে মরেও এখনো বেঁচে আছেন খবর রাখেন তাঁরা ? বিশ্বখ্যাত বাঙালি নোবেল জয়ীরা ?

জানতে ভীষণ ভীষণ ইচ্ছে হয় ।।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.