পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নই বিজেপির সংকল্প, সেই লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করবে বিজেপি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির জনসভা থেকে বঙ্গবাসীকে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট নিয়ে যেমন তোপ দেগেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তেমনই জবাব দিয়েছেন বহিরাগত আক্রমণের। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন এ রাজ্যের ভূমিপুত্রই। বুধবার কাঁথি রেলস্টেশনের প্রভূতি মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই ভোটে যাঁরা প্রথমবার ভোট দেবেন, তাঁদের জন্যও এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুবকদের সামনে আগামী ২৫ বছরের পশ্চিমবঙ্গ নির্মাণের দায়িত্ব। তার জন্যই আসল পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সোনার বাংলা গড়ার কথা এখানকার সবাই শুনছেন। বাংলার প্রতি ঘর থেকে, সবার মুখে একটাই আওয়াজ উঠছে। ২ মে দিদি যাচ্ছেন। আসল পরিবর্তন আসছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিদি এখনও তাঁদের কাছে জবাব দিতে পারেননি, যাঁদের ঘর বাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছিল আমফানে। বাংলার মানুষ দিদিকে জিজ্ঞেস করছে, যারা আমফানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা কেন কিছু পেল না? সাধারণ মানুষের চাল কোথায় গেল? কেন সাধারন মানুষ এখনও আমফানে ভেঙে যাওয়া ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন? ভাইপো উইন্ডোয় কাটমানির টাকা ঢুকেছে। দিদির খেলা ধরা পড়ে গিয়েছে। যখন প্রয়োজন, তখন দিদি দেখেন না। আর ভোট আসলে উনি বলেন, দুয়ারে সরকার। এটাই আপনার খেলা। পশ্চিমবঙ্গের শিশুরা পর্যন্ত আপনার খেলা বুঝে গিয়েছে। এই জন্যই ২ মে দিদিকে দুয়ার দেখিয়ে দেবে। মানুষ আপনাকে দরজা দেখিয়ে দেবে। মেদিনীপুরে এসে দিদি বারবার নাটক করছেন। কিন্তু দিদি সেইসব মানুষদের কোনও উত্তর দিতে পারছেন না, যারা আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কিছু সাহায্য পায়নি।”তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “তৃণমূলের খেলা শেষ হবে। আর বিকাশ আরম্ভ হবে। বাংলার বিকাশ এটা বিজেপির সংকল্প। এর জন্য বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এটা আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি। বাংলার মানুষ কুশাসনের জবাব দিতে তৈরি। মা-বোনেরা তৃণমূলকে সাজা দিতে তৈরি। তৃণমূলের খেলা শেষ হবে। উন্নয়ন শুরু হবে। বাংলায় হবে শিল্প, শিক্ষা, কর্মসংস্থান। বাংলার উন্নয়নই বিজেপির সংকল্প। তাই বাংলায় দরকার বিজেপি সরকার।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলার কৃষকরা তাঁদের উপর হওয়া দিদির অন্যায়কে কখনওই ভুলতে পারবেন না। দিদি তাঁর নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পিএম সম্মান নিধি থেকে বাংলা কৃষকদের বঞ্চিত করেছেন। তৃণমূল সরকার কিছু করেনি। উন্নয়ন আনবে ডবল ইঞ্জিন সরকার। বঙ্গ বিজেপি নেতাদের ধন্যবাদ। সংকল্প পত্রের জন্য ধন্যবাদ। ২ মে বাংলায় বাধার প্রাচীর ভেঙে যাবে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে গত তিন বছরের টাকা মিলবে।”কাঁথির জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “এবার বাংলার মানুষ ডাবল ইঞ্জিল সরকার তৈরি করবে। এর লাভ মেদিনীপুরবাসীরা পাবেন। এর লাভ কৃষকরা পাবেন। এর লাভ বাংলার সমস্ত মা-বোনেরা পাবেন। এর লাভ সমস্ত মৎস্যজীবীরা পাবেন।” বহিরাগত নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মোদী বলেছেন, “যে পশ্চিমবঙ্গ পুরো ভারতকে বন্দে মা তরম-এর স্লোগান শিখিয়েছে, দিদি সেই বাংলায় দাঁড়িয়ে বহিরাগত বলছেন? বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগররা বলেছেন, আমরা সবাই ভারতমাতার সন্তান। এখানে কোনও ভারতবাসী বহিরাগত নয়। সবাই ভারতমাতার সন্তান। যে বাংলা থেকে গুরুদেব সব ভারতবাসীকে এক মালা পরিয়েছিলেন, এই বাংলা থেকেই যে গুরুদেব পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাত মারাঠা… বলেছিলেন, আমরা সেটাই বলি সব সময়। সেই বাংলায় আপনি বহিরাগতর কথা বলছেন দিদি? পর্যটক বলা হচ্ছে, অপমান করা হচ্ছে। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ভূমিতে কাউকে বহিরাগত হিসেবে দেখতেন না। বাংলায় যে বিজেপি-র সরকার আপনারা বানাতে চলেছেন, তার মুখ্যমন্ত্রী এখানকার ভূমিপুত্রই হবেন।”মমতাকে কটাক্ষের সুরে মোদী বলেছেন, “দিদি আপনি সবসময় বলেন ‘খেলা হবে’। আমরা খেলব না, আমরা মানুষের সেবা করব। বিজেপি-র একটাই মন্ত্র, গরিবের রোজগার, গরিবের বাড়ি, গরিবের সম্মান। দিদি, বাংলার মানুষ আপনার খেলা বুঝে গিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, এখানে নন্দীগ্রামের বদনাম করার জন্য একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। নন্দীগ্রাম আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সেই নন্দীগ্রামের মানুষেরই বদনাম করছেন? পুরো ভারতবর্ষে তাঁদের বদনাম করছেন। নন্দীগ্রামের আত্মাভিমানী মানুষ এর জবাব দেবেন।” বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণ দিয়ে মোদী বলেছেন, “অসমে দেখুন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জঙ্গিরা পর্যন্ত মূলস্রোতে ফিরছেন। আর এখানে বোমাবাজিতে বাড়িঘর পর্যন্ত উড়ে যাচ্ছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দিদি বসে বসে দেখছেন। বাংলায় শান্তি চাই। বন্দুক, বোমা থেকে মুক্তি চাই। আর বিজেপি সেই কাজটাই করবে। দিদি, ও দিদি। আমাকে বারবার বলতে হয়, কারণ উনি কারও কথা শোনেনই না। তৃণমূল সরকার হিংসা আর অত্যাচারের অন্ধকারের সরকার। দিদি অন্ধকার দিয়েছেন শুধু। বিজেপি-র সরকার সোনার বাংলা দেবে।”
2021-03-24