‘শ্যামসিদ্ধির মঠ’, ভারতীয় উপমহাদেশের উচ্চতম স্তম্ভ।

ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে উঁচু স্তম্ভ বা মিনার কোনটি ? আট থেকে আশি সবাই জবাব দেবেন, কেন দিল্লির কুতুবমিনার ! স্বাভাবিক, কারণ ইতিহাস বই থেকে সাধারণ জ্ঞানে সেটাই লেখা আছে। আর আমাদের পাঠ্য ইতিহাসের পাতা শুধুই যে সুলতানী ও মোগল আমলের কীর্তিকলাপে ভর্তি। এর বাইরেও যে কিছু আছে, তাতো আমাদের জানতেই দেয়া হয়নি !

এবার বলুনতো কুতুব মিনারের উচ্চতা কতো….. ? বেশ আমি বলছি, ২৩৬ ফুট। আর বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জে রয়েছে শ্যামসিদ্ধির মঠ যার উচ্চতা ২৪১ ফুট, মানে কুতুবের থেকে আরও পাঁচ ফুট বেশী। অথচ প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই পুরাকীর্তির আমরা নামই শুনিনি। মঠটির গায়ে সোনারং অঞ্চলের কিছু স্থাপত্য কর্মের নমুনা আছে যা দেখতে ঠিক ফনা তোলা সাপের মতো। এছাড়া লতাপাতার অলংকরণের নকশা দিয়ে চারদিকে সজ্জিত। অষ্টাভুজাকার দেয়ালের প্রত্যেকটিতেই জানালার মতো প্যানেল আছে যেগুলো অবশ্য খোলা যায় না।

শোনা যায় বিক্রমপুরের এক ধনী ভূস্বামী শম্ভুনাথ মজুমদার মঠটি নির্মাণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর শ্যামসিদ্ধি গ্রামে তাঁর দাহ সংস্কার করেন। কথিত আছে শম্ভুনাথ স্বপ্নে তার পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পান। তারপর ঐ জমিতেই তিনি মঠটি নির্মাণ করেন। একসময়ে মঠের সাতাশ ফুট উঁচু প্রবেশ দ্বার মূল্যবান পাথর এবং পিতলের কলসি দিয়ে সাজানো ছিলো। এখন আর সেসবের অস্তিত্ব নেই। এমনকি মূল কাঠামোর নকশা করা দরজা জানালা অনেক আগেই চুরি হয়ে গেছে। মঠের ভিতরে ৩ ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের একটি শিবলিঙ্গ ছিল, বছর তিরিশ হলো, এক রাতে সেটিও চুরি হয়ে যায়।

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র আঠাশ কিলোমিটার দূরে মঠটির অবস্থা বর্তমানে খুবই শোচনীয। কুতুব মিনারের মতো এটি সরকারী ভাবে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি নয়। অবহেলায় ফাটল ধরেছে উঁচু গম্বুজে, খসে পড়ছে প্লাস্টার। আর শুধু এটাই নয়, বিক্রমপুরের হিন্দু রাজাদের বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার্থে এ অঞ্চলে বহু মঠ ও মন্দির নির্মাণ করেন। ওদেশের সরকারের উদাসীনতায় সবকটিরই আজ ভগ্নদশা, দিন গুনছে কবে মিশে যাবে ধরিত্রীর বুকে। সেই সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বাংলার বুক থেকে হিন্দু রাজবংশের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।

লিখেছেন – স্বপন সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.