নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় অশান্তি ছড়িয়েছে সারা দেশে। অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি একের পর এক অশান্তির ঘটনায় সোমবার উদ্বেগপ্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ধরনের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং হৃদয়বিদারক’ বলে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে ‘কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর’ পাতা ফাঁদে পা না দিতেও আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার বিকেলে একাধিক টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত রবিবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর পুলিশি আক্রমণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশি আক্রমণের অভিযোগ ওঠে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপরেও। এই ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে সোমবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে টুইটারে আক্রমণ শানাতে শুরু করেন বিরোধী নেতারা। এই টুইট যুদ্ধের মাঝেই এ দিন বিকেলে একের পর এক টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন বিরুদ্ধ স্বর দমাতেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপর পুলিশের আক্রমণ নেমে আসছে।, এ দিন প্রধানমন্ত্রী জানান, আলাপ-আলোচনা, বিরোধিতা সব কিছুই গণতন্ত্রের অঙ্গ। কিন্তু, এরপরেই তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে আলাপ-আলোচনা হতেই পারে কিন্তু সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে স্বাভাবিক জনজীবন স্তব্ধ করে কোনও আন্দোলন হতে পারে না।’
এই আন্দোলনের বদলে দেশের উন্নতিতে এগিয়ে আসতে দেশবাসীকে ডাক দেন তিনি।
আরও একটি টুইটে তিনি দেশের কিছু ‘বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন। তিনি বলেন, ‘কিছু বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী দেশে বিভেদের মাধ্যমে অশান্তির সৃষ্টি করতে চাইছে।’
যদিও এই ‘সুবিধাবাদী গোষ্ঠী’ কারা তা পরিষ্কারভাবে কিছু জানান নি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, রাজনৈতিক মহলের ধারণা প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় মূলত কংগ্রেস নেতৃত্ব। চলতি মাসেই নির্বাচনী প্রচারে ঝাড়খণ্ডে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস এবং তার অশুভ জোটসঙ্গীরা উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে এই নাগরিকত্ব আইন ঘিরে অশান্তিতে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন। কিন্তু মানুষ এই ধরনের প্ররোচনায় পা দেবে না।’
এই আইন বহু অসহায় নাগরিকদের বাঁচার আশা জোগাবে বলে টুইট করেন তিনি। টুইটে তিনি লেখেন, ‘এই আইন তাঁদের জন্য যারা বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। যাদের ভারত ছাড়া আর কোনও দেশ ছিল না।’
শেষ টুইটে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আমি ভারতের প্রতিটি নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে যেকোনো ধর্মের ভারতীয় নাগরিকদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।’
দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে অশান্তির জন্য ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রতিটি রাজ্য সরকারের কাছে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানোর নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র। কোনও ধরনের ‘আপত্তিজনক মন্তব্য’ যা অশান্তি ছড়াতে পারে এইধরনের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই নির্দেশিকায় রাজ্য সরকারগুলি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসকদের শান্তি-সম্প্রীতি এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে কেন্দ্র।