আজ ব্যঘ্র দিবস। দিনটি বাঘের হলেও বাঘেরা ব্যাপারটা সম্বন্ধে ঠিক ওয়াকিবহাল নয়। জঙ্গলের বাঘকে তার কমবেশি কু্ড়ি বছরের জীবৎকালের প্রতিটি দিনই লড়াই করে বাঁচতে হয়। প্রতিটি দিনই তার কাছে জলজ্যান্ত সমস্যা। এমনটা অবশ্য ছিল না চিরকাল। বাঘ এককালে ছিল জঙ্গলের রাজা। তারপর মানুষ এল ওদের কাছে বিভীষিকা হয়ে। হাজারে হাজারে বাঘ মারা গেল মানুষের হাতে। জঙ্গলের রাজার সীমানা ছোট হতে লাগল। বাড়তে লাগল মানুষের সীমানা। তারপর আবার চাকা ঘুরল। ঘুরতে হতই একদিন।
মানুষ যেদিন থেকে জঙ্গলের রাজাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে শিখল, জানল তার গুরুত্ব (অবশ্যই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে) – সেদিন থেকে বাঘেদের দিনগুলি কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক হয়েছে সম্ভবত। হিসেব তাই বলছে। বর্তমানে বিশ্বে টিকে থাকা কমবেশি হাজার তিনেক বাঘ এবং তাদের জন্য নির্ধারিত অভয়ারণ্যের সংখ্যাবৃদ্ধি এই বয়ানের সত্যতা বয়ান করছে। বাঘ অল্প হলেও বেড়েছে গত শতকের তুলনায়- যা একটি স্বস্তিদায়ক ইঙ্গিত, এই বিশ্বের ইকোসিস্টেমের টিকে থাকার নিরিখে।
বাঘেদের মূলত দুইটি প্রজাতি- কন্টিনেন্টাল (প্যান্থেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস) এবং সুন্দা (প্যান্থেরা টাইগ্রিস সন্দাইকা)। একটি আকারে বৃহত্তর মূল মহাদেশীয় প্রজাতি এবং অপরটি মূলত দ্বীপ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্রাকার প্রজাতি। এদের আরও কতকগুলি উপপ্রজাতি রয়েছে। মোটামুটি নয় ধরনের বাঘ এই পৃথিবীতে অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে পাওয়া যায়। সুন্দা প্রজাতির তিনটি – সুমাত্রা, বালি এবং জাভা। মহাদেশীয় বা কন্টিনেন্টাল প্রজাতির মধ্যে বেঙ্গল, মালয়, ইন্দোচিনা, আমুর (সাইবেরিয়ান), দক্ষিণ-চিনা, ক্যাস্পিয়ান। এদের মধ্যে অধুনা অবলুপ্ত প্রজাতিগুলি হল সুন্দা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত বালি এবং জাভা বাঘ, কন্টিনেন্টাল প্রজাতির মধ্যে দক্ষিণ -চিনা বাঘ এবং ক্যাস্পিয়ান বাঘ।
চিনেরা মানুষ সহ এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকুলের কাছেই এক ভয়াবহ বিপজ্জনক জনগোষ্ঠী। এদের কারণেই বহু প্রাণী আজ হয় অবলুপ্ত অথবা অবলুপ্তির পথে দিন গুনছে। একটি আপামর কুসংস্কারাচ্ছন্ন কুৎসিত মানসিক বিকারগ্রস্ত মনুষ্যজাতি। নিজেদের ভিত্তিহীন বিশ্বাসের বশে কাতারে কাতারে বাঘ, সিংহ, গণ্ডার, হাতি থেকে শুরু করে প্যাঙ্গোলিন, সাপ, পাখি নিকেশ করে চলেছে। বিশ্বের কোনও আইনই এই কুচক্রী দেশটির অধিবাসীদের সিধে করতে পারেনি। সারা বিশ্বের আশিভাগ চোরাশিকারীকে এরাই নিয়ন্ত্রণ করে, সে আফ্রিকার জঙ্গলই হোক কিমবা আমাজন, সুন্দরবন। এদের সবকিছু চাই- সুন্দর ত্বক, নখ, চুল, চোখ, জননাঙ্গ। আর এসবের উৎস নাকি ভিন্ন ভিন্ন পশুপাখির চামড়ায়, হাড়ে, আঁশেই গুঁজে ভরে দিয়েছেন এঁদের ঈশ্বর। তাই এরা অকাতরে হত্যা করে সারা বিশ্বের প্রাণীকুল। কারও ক্ষমতা নেই এদের আটকায়।
বাঘ যে তবুও সংখ্যায় বাড়ছে এর কারণ সম্ভবত ভারতের কঠোর বণ্যপ্রাণী আইন এবং ভারতের বনবিভাগের অধুনা তৎপরতা। বিশ্বের সত্তর ভাগ বাঘ বর্তমানে ভারতেই বসবাস করে। চিনেরা ইদানীং শোনা যায়, খানিকটা দমে গিয়ে নিজেরাই বাঘের চাষ শুরু করেছে। অতীব হিংস্র, কুৎসিত একটি জাতি। স্বার্থপর পরস্বহারী নিকৃষ্ট মানসিকতার একটি দেশ। সারা বিশ্বের মানুষকে নিয়ে ইদানীং কি খেলাই না শুরু করেছে! অথচ বিশ্বের বাকি দেশগুলি আশ্চর্যজনকভাবে নীরব; নিশ্চেষ্টভাবে এই অন্যায় আক্রমণকে মেনে নিয়েছে!
হচ্ছিল বাঘের কথা। যাই হোক, বাঘ বাঁচলে মানুষও বাঁচবে। এটা মানুষ দেরিতে হলেও বুঝেছে, এটাই মঙ্গল। আসলে শুধু বাঘ নয়, বাঘ একটি প্রতীকি অম্তভাগে অবস্থান করে। বাঘ টিকে থাকার অর্থ হল, পুরো খাদ্যশৃঙ্খলটিই টিকে যাওয়া – যা মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। চিনা চাতুর্যকে ঠেকিয়ে রেখে মনুষ্য সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভারতকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এই বিশ্বে বাঘ রক্ষার দায়িত্ব যে দক্ষতার সঙ্গে পালন করে চলেছে ভারত, তাতে আমরা আশাবাদী অম্তত হতেই পারি।
সুপ্রীতি সান্থাল মাইতি