করোনা-সঙ্কটকে আত্মনির্ভর ভারতের জন্য সুযোগে পরিণত করা উচিত : প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাস (Coronavirus) -সঙ্কটকে আত্মনির্ভরশীল ভারতের জন্য সুযোগে পরিণত করা উচিত। দেশের প্রতিটি নাগরিক এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে সুযোগে পরিণত করার জন্য সঙ্কল্প করছেন। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-এর ৯৫ তম বার্ষিক সাধারণ সভায়, ভার্চুয়াল ভাষণে এই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, সমগ্র বিশ্ব করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ভারতও এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, আরও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখে দেশ, যেমন বন্যা, পঙ্গপালের উপদ্রব, শিলাবৃষ্টি, তেলের কূপে আগুন, মৃদু ভূমিকম্প, দু’টি ঘূর্ণিঝড়-আমরা একসঙ্গে এ সবের লড়াই করছি। এসব চ্যালেঞ্জকে পেরিয়ে আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতে যাব। এই চ্যালেঞ্জ পেরোবে যে, সেই সত্যিকারের বিজয়ী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, হার মানলেই পরাজয়, জয়ের সঙ্কল্প করলেই বিজয়। দেশের প্রতিটি নাগরিক এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে সুযোগে পরিণত করার জন্য সঙ্কল্প করছেন। দেশের জন্য এই সময়কে টার্নিং পয়েন্টে পরিণত করতে হবে, কিন্তু কী সেই টার্নিং পয়েন্ট? একটি আত্মনির্ভরশীল ভারত। উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সঙ্কটের সময় নিজেকে মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে। পরিবারে কেউ সাবালক হলে আমরা বলি, নিজের পায়ে দাঁড়াও। অন্য দেশের উপর নির্ভরতা যতটা সম্ভব কমানোই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, কৃষকরা এখন দেশের যে কোনও স্থানে উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করতে পারেন। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোই হোক, বা তাঁদের দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা করা, কৃষকদের উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য। ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-এর ৯৫ তম বার্ষিক সাধারণ সভায়, ভার্চুয়াল ভাষণের শুরুতেই দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে যে অবদান রেখেছে তা প্রশংসনীয়। ভারতের উন্নয়নের গতিতে আপনারা সাক্ষী থেকেছেন। এই সভা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন দেশ একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, সমগ্র বিশ্ব করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ভারতও এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, আরও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখে দেশ, যেমন বন্যা, পঙ্গপালের উপদ্রব, শিলাবৃষ্টি, তেলের কূপে আগুন, মৃদু ভূমিকম্প, দু’টি ঘূর্ণিঝড়-আমরা একসঙ্গে এসবের লড়াই করছি। এসব চ্যালেঞ্জকে পেরিয়ে আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতে যাব। এই চ্যালেঞ্জ পেরোবে যে, সেই সত্যিকারের বিজয়ী

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশবাসীর মধ্যে এক নতুন আশা দেখতে পাচ্ছি। আত্মিনির্ভর ভারতের এই ভাবনা বহু বছর ধরে এক আশা নিয়ে বেঁচেছে।..আমাদের ভাবনা রয়েছে, আমরা যদি প্রতিরক্ষা, কয়লা ক্ষেত্র, সৌরক্ষেত্র, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আমরা যদি আত্মনির্ভর হতে পারতাম। এই রকম বহু ভাবনা দেশবাসীর সঙ্গে বহু দিন ধরে রয়েছে..করোনা সঙ্কট আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, করোনা সঙ্কট আমাদের এই আত্মনির্ভর হওয়ার প্রতিজ্ঞা করিয়েছে। ভারতকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে যে সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার সুবিধা নিন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী যুব সম্প্রদায় এগিয়ে আসুন

প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেছেন, স্থানীয় পণ্যের জন্য ক্লাস্টার বেসড অ্যাপ্রোচের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে সবাই সুবিধা পাবেন। পশ্চিমবঙ্গে জুট কিসান উদ্যোগের জন্য ক্লাস্টার তৈরি হবে। সিকিম তথা উত্তর ভারত অর্গানিক পণ্য উৎপাদনের হাব তৈরি হতে পারে, সরকার যে বিপুল কর্মসূচির ঘোষণা করেছে, তাতে পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারত তার লাভ পাবে। কলকাতা ফের দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ”আমি মনে করি, কলকাতা আবার দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে। কলকাতায় উৎপাদনের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ছিল। আমরা সব সময় শুনে এসেছি, ‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমোরো’” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘বিশ্বের জোগান শৃঙ্খলে ভারতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পিপল, প্ল্যানেট অ্যান্ড প্রফিট— এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে চলতে পারে। ভারতে আমরা এলইডি বাল্ব প্রকল্প শুরু করেছিলাম। পাঁচ বছর আগে একটা এলইডি বাল্ব ২০০ টাকা লাগত, এখন সেটা ৫০ টাকায় মিলছে। এর চাহিদা এত বেড়েছে যে, দাম কমলেও বিপুল লাভ বেড়েছে। এলইডির জন্য প্রতি বছর বিদ্যুতের বিলে ১৯ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এর লাভ প্ল্যানেট তথা পৃথিবীরও লাভ হয়েছে, কারণ এতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে বিপুল জলসম্পদ রয়েছে। কলকাতা-হলদিয়া জলপথ চালু হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতেও জলপথ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে পরিবহণ খরচ কমবে, রাস্তায় যানবাহন জট কম হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, দেশে আরও একটা অভিযান চলছে। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করার চেষ্টা চলছে, এতে তো পশ্চিমবঙ্গের আরও বেশি লাভ। কারণ, এতে এখানকার পাটশিল্পের ব্যাপক লাভ হবে। ভাবুন পশ্চিমবঙ্গে তৈরি পাটের ব্যাগ সারা দেশের মানুষের হাতে থাকলে রাজ্যের কী বিরাট লাভ হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমাদের যে প্রযুক্তিগত বিপ্লব হয়েছে, তাতেও বিপুল সুবিধা হয়েছে। অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে নিরাপদ লেনদেন হচ্ছে, ভিম অ্যাপ, রুপে কার্ড বহু মানুষ ব্যবহার করছেন। যখন আমরা প্ল্যানেট বা এই পৃথিবীর কথা বলছি, তখন দেখবেন সৌরশক্তির ক্ষেত্রে এক বিরাট বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের এই বিপ্লবে ভারতও কৃতিত্বের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। আইসিসি-কে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিসি-র মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছি, দেশেই সৌর প্যানেল, ব্যাটারি তৈরি করুন। সৌরশক্তির মাধ্যমে ব্যাটারি রিচার্জ করার এক বিরাট বাজার তৈরি হচ্ছে, ভারতের উদ্যোগপতিরা কি এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে না? এই সময় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময়,সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যখন আমরা যাই, তখন তার থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি আশ্বস্ত করছি, এতে সরকার আপনাদের সব রকম সাহায্য করবে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটাই প্রার্থনা, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.