বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্যকে নিয়ে আবার বিতর্ক তার শেষ সময়েও l অনেকেই প্রশংসা করছেন এবং অনেকেই নিন্দা l বিতর্কিত এই মানুষটি করো কাছে বিরাট মাপের, করো কাছে শুন্য l জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যর্থ হলেও ওনার মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালের প্রথম ছয় বছর কিন্তু একটা বড় সাফল্য দাবী করে l জ্যোতিবসুর ২৪ টা কালো বছর কাটানোর পর ২০০০ থেকে ২০০৬, বাঙালীর কাছে একটা শুদ্ধ অক্সিজেনের মত ছিল l শিল্প পার্ক, সড়ক সম্প্রসরণ, বন্দর, বিমানবন্দর, বড় সেতু, মেট্রো রেল, রেল ব্রিজ, সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ফিনান্সিয়াল হাব ইত্যাদি অনেক প্রচেষ্টা ছিল l কিছু সাফল্যও ছিল l ডঃ অসীম দাশগুপ্তর বিকল্প অর্থনীতিকে ধাপার মাঠে ফেলে, বহুজাতিক পরামর্শদাতা কোম্পানি এনে রোডম্যাপ বানান রাজ্যের উন্নতির l কিন্তু তার নির্বাচনী পরাজয় সব ভুলিয়ে দেয় l

কিন্তু তার ব্যর্থতা এবং ভুল এই সাফল্যর চেয়ে অনেক বেশী l ইংরেজী তুলে দেয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন বুদ্ধবাবু l ১৯৯১ তে পুরমন্ত্রী হয়ে বহরমপুর পুরসভায় হেরে তাঁদের টাকা বন্ধ করায় চিরতরে মুর্শিদাবাদ থেকে বিদায় নিতে হয় তাকে l ২০১০ সালে তার নিজের দেয়া বিধানসভার বিবৃতি অনুযায়ী, ১৯৯৬ তে উনি সরাষ্ট্র দপ্তর পাওয়ার পর প্রতি দিন গড়ে ৫ জন রাজনৈতিক খুন হয় পরের ১৫ বছর l ১৯৭৭ থেকে প্রমোদবাবু ওঁনাকে বাংলার সাংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব দেন l ২০১১ তে বাংলার সিনেমা, থিয়েটার, নাটক, সাহিত্য, কবিতা, কবি গান, লোকগীতি, ধ্রুপদী সঙ্গীত, পুজো সংখ্যা, মাসিক ম্যাগাজিন, পুজোর গান সব শেষ হয়ে যায় l যদিও উনি মুখ্যমন্ত্রী হবার পর সিনেমা একটু ভাল হয়েছে l তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী অবস্থাতেও কিছু ব্যর্থতা আছে ওনার l শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, কুটির শিল্প, কৃষি, সেচ, গ্রামীণ ও জেলা সড়ক, বিদ্যুৎ, জল, নগরোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জ্যোতিবাবুর মতই ব্যর্থ ছিলেন তিনি l ট্রেড ইউনিয়ন অত্যাচার, দাদাগিরি অনেক বেড়ে যায় তার আমলে l কেশপুর গড়বেতা, আরামবাগ ইত্যাদি জায়গা ভয়ঙ্কর অত্যাচার চলে তার নিজের নির্দেশে l যাওয়ার আগে হিন্দু বাঙালীদের পিঠে সবচেয়ে বড় ছুরি মেরে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য OBC কোটায় রাজ্যের ৯০% মুসলিমদের দান করে, হিন্দুদের বঞ্চিত করে l

বুদ্ধবাবু সম্পর্কে তার অনুগামীরা বলেন খুব ভদ্রলোক l কিন্তু ঘটনা হচ্ছে অত্যন্ত অহংকারী মানুষ এবং এই অহংকার ওঁনার পতনের মূল l টাটা ওঁনার কাছে পানাগড় বা খড়্গপুরে জমি চায় l কিন্তু ২০০৬ তে সিঙ্গুরে হার সহ্য হয় নি বলে সিঙ্গুরবাসীকে টাইট দেবার জন্য ওখানে জমি নেন এবং তারপর ইতিহাস l আরও একটা কথা তার স্তবকরা বলেন l ওঁনার মত শিক্ষিত মানুষ নাকি রাজনীতিতে এসে বাঙালীকে ধন্য করে দিয়েছে এবং ওনার শিক্ষাজগতেই থেকে যাওয়া উচিত ছিল l এই প্রসঙ্গে বলি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে (officially) সবচেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ওনার এবং উনি স্নাতকস্তরে কম নাম্বার পান বলেই শিক্ষাজগতে আর বেশী দিন আর থাকতে পারে নি l আর যে মানুষ মরিচঝাঁপি, বিজনসেতু থেকে নেতাই হত্যার জন্য কোন দিন ক্ষমা চাননি, তিনি ভদ্র ও ভাল মানুষ, এটা বলা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে l

তবে সাফল্য এবং ব্যর্থতার মধ্যে একটা জিনিস মানতেই হবে, আমাদের জ্ঞান হওয়ার পর একমাত্র ওঁনার প্রথম ছয় বছরই আমরা দেখেছি রাজ্য সরকার কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে l একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাজ্যেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন এবং কিছুটা সফলও হয়েছেন l আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে যে রিপোর্টটি উনি বানিয়েছিলেন ওই বহুজাতিক পরামর্শদাতা কোম্পানিকে দিয়ে, সেটাকে ঝুল ঝেড়ে বের করতে হবে কিন্তু l এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রচেষ্টা ছিল l একমাত্র উনিই করেছিলেন l

ওঁনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.