জ্বরের সঙ্গে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। মাঝে মাঝে বমি। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছেন গুজরাতের কোলাত গ্রামের আমিনা মোমিন। তিনি রোজ গরু চরাতে যেতেন। অসুস্থ হওয়ার পরে আর পারেন না। কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর ৩০ বছরের আমিনা ভর্তি হলেন প্রাইভেট হাসপাতালে। কিন্তু বেশিদিন বাঁচেননি।
তাঁকে অ্যাটেন্ড করেছিলেন চিকিৎসক গগন শর্মা ও নার্স আশা জন। তাঁদের দেহেও কিছুদিনের মধ্যে আমিনার মতোই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠল। তাঁরাও আর বেশিদিন বাঁচেননি।
পরে জানা যায়, আমিনার যে রোগটি হয়েছিল, তাঁর নাম ক্রাইমিয়ান-কঙ্গো হ্যামারেজিক ফিভার। তাঁর সংস্পর্শে এসে ডাক্তার ও নার্সও ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এটা ২০১১ সালের ঘটনা। তার আট বছর পরে, গত কয়েক মাসে রাজস্থানের যোধপুর ও জয়সলমির থেকে দু’জনের কঙ্গো ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য সরকার আরও ১৩৪ জনের রক্তের নমুনা পাঠিয়েছে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভায়রোলজিতে। যেখানে কঙ্গো ফিভার ছড়িয়েছে, সেখানে পৌঁছে গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিম। রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আক্রান্ত এলাকায় রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পোকার কামড়ে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও টিস্যুর সংস্পর্শে এলে কারও দেহে কঙ্গো ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। ওই রোগে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। গত এক দশকে ভারতে বেশ কয়েকটি ভাইরাসবাহী রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। তার মধ্যে আছে নিপা, অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, সার্স এবং চিকুনগুনিয়া। এবার কঙ্গো ফিভার ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে চিকিৎসাবিদদের আশঙ্কা।
কাকে বলে কঙ্গো ফিভার?
হু জানিয়েছে, পোকার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ ও পশুর দেহে এমন একরকমের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে যা আক্রমণ করে তার নার্ভাস সিস্টেমকে। একসময় আফ্রিকা, ইউরোপের বলকান অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়ার নানা অঞ্চলে কঙ্গো ফিভারের প্যানডেমিক বা অতি মহামারী দেখা দিয়েছিল। ২০১১ সালের আগে ওই রোগের অ্যান্টিবডির সন্ধান পাওয়া যায় ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে। ২০১১ সালে গুজরাতে মানুষ ও পশুর দেহে ওই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে জানা যায়, কঙ্গো ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনের মৃত্যু ঘটে। এই রোগ হলে আচমকাই জ্বর হয়, পেশিতে যন্ত্রণা হয়, মাথা ঘোরে, ঘাড়ে, পিঠে ও মাথায় যন্ত্রণা হয়, চোখ জ্বালা করতে থাকে। রোগী আলো সহ্য করতে পারে না।
আক্রান্ত ব্যক্তির বমি হতে পারে। ডাইরিয়া, পেটে ব্যথা বা গলায় ব্যথা হতে পারে। তিন-চারদিন বাদে এই লক্ষণগুলি অনেক সময় থাকে না। তার বদলে রোগীর সারাক্ষণ ঘুম পায় এবং সে অবসাদে ভুগতে থাকে।