না, না! বামপন্থীরা স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙতেই পারে না…!
জেএনইউ-তে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির তলায় অশ্লীল কথা লেখার ঘটনায় বাম বিপ্লবীদের দোষী বলায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বামপন্থীরা এমন করছেন, যেন ওঁরা পরম বিবেকানন্দ ভক্ত, অনুরাগী, চিরকাল স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করে এসেছেন, তাই এরকম কাজ নাকি ওঁরা করতেই পারেন না। সব চক্রান্ত করে ওঁদের ফাঁসাবার জন্য, নাম বদনাম করার জন্য করা হয়েছে। তাই নাকি কমরেড? তাহলে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন, মনোভাব আর কার্যকলাপের একটা রিমাইন্ডার হয়ে যাক। তারপর নাহয় বিচার করা যাবে, এটা আপনাদের করা অপকর্ম হতে পারে কিনা।
১) ১৯২০ খ্রীস্টাব্দে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হওয়ার মাত্র দু’বছর পরেই, ১৯২২-এ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-পুরোধা-সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায়, আরেক প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য অবনী মুখার্জি-র সহায়তায় একটি বই লেখেন―“India in Transition”। সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ বিষয়ে ভারতীয় কমিউনিস্টদের আদি মূল্যায়ন পাওয়া যায়। সেখানে এম এন রায় লেখেন―স্বামী বিবেকানন্দ, তাঁর আদর্শ-ভাবনা, সেই আদর্শে তৈরি স্বাধীনতা সংগ্রাম, সেই সময় ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের সব সমস্যার মূল কারণ ভাবা―এই সবকিছুই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এবং শ্রেণী সংগ্রামের পথে বাধা। (India in Transition/Chapter 7-Political Movement II)
২) পঞ্চাশের দশকে অরবিন্দ পোদ্দার তাঁর “ঊনবিংশ শতাব্দীর পথিক” বইতে স্বামীজী এযুগের জন্য প্রয়োজনীয় নন, তিনি একজন ব্যর্থ মানুষ, ইতিহাস থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হোক, ইত্যাদি যুক্তি প্রচার করেছেন। (ঊনবিংশ শতাব্দীর পথিক/স্বামী বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ)
৩) ষাটের দশকের গোড়ায় স্বামীজীর জন্মশতবার্ষিকীর সময় “শনিবারের চিঠি”-তে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে নিন্দা-কুৎসা করে প্রবন্ধ লেখা হয়েছিল বামপন্থী সবজান্তাদের তরফ থেকে। (স্বামী বিবেকানন্দের সমালোচনা প্রসঙ্গে/স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ/“উদ্বোধন” প্রকাশিত “বিবেকানন্দ-শতবার্ষিক সংখ্যা”)
৪) ষাট এবং সত্তরের দশকে বামপন্থী আন্দোলন এবং অতিবাম বিপ্লব যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে, তখন থেকে জোর কদমে বিবেকানন্দ কুৎসাও শুরু হয়। সম্ববত এই সময়েই কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত বলেন—“আমাদের হাতে ক্ষমতা এলে বেলুড় মঠের মন্দিরকে আমরা কফি হাউস বানাবো।” (আমার সন্ন্যাস-জীবন ও বেলুড় মঠ/স্বামী সোমেশ্বরানন্দ)