প্রতি শুক্রবার করে স্কুল কামাই করত ১৬ বছরের মেয়েটা। প্রতি সপ্তাহের ওই দিন তাকে দেখা যেত সুইডেনের পার্লামেন্টে। তার হাতে ব্যানার, ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট।’ আর এই কাণ্ড করেই গ্রেটা থানবার্গ নামের সেই কিশোরী পৌঁছে গেল নোবেল শান্তি পুরস্কারের দোরগোড়ায়।
নরওয়ের জনপ্রতিনিধিরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য এই ষোড়শীর নাম মনোনীত করেছেন। কারণ এই কিশোরী বিশ্বের জয়বায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লডা়ই চালাচ্ছে প্রায় এক বছর ধরে। শুধু নিজে একা নয়, তার মতো আরও হাজার স্কুলপড়ুয়াকে সে সামিল করেছে এই আন্দোলনে।
গ্রেটার এই সপ্তাহিক প্রতিবাদ আন্দোলনের সূচনা ২০১৮-র অগস্টে। যে আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিতি পায় #FridaysForFuture নামে। সুইডেনের গণ্ডি ছাড়িয়ে ক্রমেই ভাইরাল হয়ে ওঠে নেট দুনিয়ায়। প্রায় শ’খানেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তার এই লড়াই।
নরওয়ের সমাজকর্মী ফ্রেডি আন্দ্রে বলেন, “আমরা নোবেল কমিটির কাছে গ্রেটার নাম প্রস্তাব করেছি। কারণ এখনও যদি পরিবেশ বাঁচাতে আমরা সচেষ্ট না হই তাহলে তা যুদ্ধ, বিবাদ এবং আরও শরণার্থীদের জন্ম দেবে এই পৃথিবী। গ্রেটা একটি গণ-আন্দোলনের শুরু করেছে, যা আমার মনে হয় শান্তির পথে একটা বিশাল অবদান।”
এর আগে ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন পাকিস্তানের কিশোরী, মালালা ইউসুফজাই। তালিবানের গুলি মাথায় নিয়েও শান্তির পথে শিক্ষার অধিকার চেয়েছিল সেই অসমসাহসিনী কন্যা। এখন পর্যন্ত সে-ই নোবেল পুরস্কার পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ মানুষ। তবে সুইডেনের গ্রেটা থানবার্গ এই পুরস্কার পেলে, সে-ই হবে শান্তিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী।
পরিবেশ রক্ষায় গত বছরের আগস্ট মাস থেকে গ্রেটার শুরু করা ‘ইয়ুথ স্ট্রাইক’ আন্দোলন ইতিমধ্যেই সুইডেন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশ্বের ১০৫টি দেশের ১,৬৫৯টি শহরের জনগণ ও কয়েক লক্ষ কিশোর-কিশোরী গ্রেটার শুরু করা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। সুইডেন থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরিবেশ রক্ষায় মানুষের সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করছেন তাদের সকলেই।
মাত্র ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরীর এমন একটি অসাধারণ উদ্যোগকে সম্মান জানিয়েই, ২০১৯ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করেছে নোবেল কমিটি। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনীত হয়ে এক টুইট বার্তায় গ্রেটা জানান, “শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ায় আমি সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞ।”
সুইডেনের পার্লামেন্টে বক্তৃতা রাখার সময়ে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশে বিশ্ব উষ্ণায়নের কুফলের কথা জানায় গ্রেটা। অনুরোধ করে, রাষ্ট্রনেতারা এই ভয়াবহ বিপদকে যেন এড়িয়ে না যান। এই রাষ্ট্রনেতাদের তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামও নেয় গ্রেটা।