মানুষ যেদিন থেকে সঞ্চয় করতে শিখেছে, সেদিন থেকেই আবিষ্কার করেছে জমানোর নানা উপায়। কখনও গাছের কোটর বা গাছের তলা, কখনও নিজের বিছানার নিচ – এমন গোপন জায়গা বেছে নিয়েছে। লুকিয়ে রাখা হল আদিম অভ্যাস। এরপর সঞ্চয় করার সঙ্গে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধির যোগ তৈরি হয়। এর থেকেই মনে হয় লক্ষ্মীর ভাঁড়-এর উৎপত্তি। বিভিন্ন জায়গার কুমোররাই এই ভাঁড় বানান। প্রায় গোলাকার এই ভাঁড়ের ওপরের দিকে একটু চুড়ো করা, যার কাছে থাকে খুচরো ফেলার জন্য কাটা অংশ। প্রতি বৃহস্পতিবার এই ভাঁড়ে বাড়ির গৃহিণী পয়সা ফেলেন সংসারের কল্যাণ কামনা করে। ভাঁড় পূর্ণ হলে তা ভেঙে যে টাকা পাওয়া যায় তা ঠাকুরকে দেবার রীতি। এই লক্ষ্মীর ভাঁড় খুব সাদামাটা দেখতে। সস্তার সাদা রং করে তাতে লাল সবুজ রং-এর ডোরাকাটা। আবার হালফিল কেউ শুধু লাল রং করছেন। তাতে বার্নিশ লাগানোও হচ্ছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাঁড়ের ধরনেও কিছু বদল ঘটেছে। শিশুদের জন্য নানা খেলনার আদলে এখন ফল, মাছ, পাখি, খোকা, বুড়োবুড়ি, গোপাল ঠাকুর এমনকি গ্যাস সিলিন্ডারের রূপও নিয়েছে মাটির ভাঁড়। এই সব ভাঁড় বিভিন্ন মেলাতে শিল্পীরা বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
আবার কলকাতা ও শহরতলিতে কিছু বিক্রেতা দেখা যায় যাঁরা দুই কাঁধে বাঁশের ঝোলাতে এই ভাঁড় নিয়ে ফেরি করেন। মানিক বিশ্বাস এমনি একজন ফেরিওয়ালা যিনি নদিয়া জেলার বীরনগর থেকে প্রতিদিন এই শহরে নানা ভাঁড় ফেরি করে বেড়ান। স্থানীয় কুমোরদের কাছ থেকে এই সব ভাঁড় কিনে পাড়ায় পাড়ায় যেমন বিক্রি করেন, তেমনই বেশ কিছু দোকানেও নিয়মিত এই ভাঁড়ের যোগান দেন। বেশ ভালো লাভও হয় তাঁর। মানিকবাবু এভাবেই তাঁর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে সংসার প্রতিপালন করছেন।
হাবড়ার অরুণ পাল নানা ফলের আকৃতির ভাঁড় তৈরি করে বিক্রি করেন মেলায় আর কলকাতার আর জি কর রোডের দোকানে। এমন ফল আর জীবজন্তুর আকৃতির ভাঁড় তৈরি করেন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ আর সুভাষগঞ্জের কুমোরেরা।
বর্তমানে বাচ্চারা টাকা জমানোর জন্য ‘পিগি ব্যাঙ্ক’ ব্যবহার করে। এই মাটির ভাঁড় যদি তাদের মধ্যে প্রচলন করা যায় তাহলে আমাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।