ভারতের কমিউনিস্টরা শিক্ষাদীক্ষা, শালীনতা-ভদ্রতার দিক দিয়ে চিরদিনই বেশ উচ্চমানের। রামকৃষ্ণদেবকে ‘মৃগীরোগী’ কিংবা নেতাজীকে ‘তেজোর কুকুর’ বলার মতো সর্বশ্রুত ঘটনায় তারা নিজেদের বেশ উচ্চ রুচি তুলে ধরেছিলেন। তবে শুধু অতি বিখ্যাত বা দেশবাসীর শ্রদ্ধেয়, আদর্শস্থানীয় মানুষকে হেয় করতেই যে তারা পটু তা নন, তুলনায় কম বিখ্যাত, অল্প পরিচিত মানুষজনের ক্ষেত্রেও কমিউনিস্টরা কদর্যতার পরিচয় দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষকে ‘কানা অতুল’ বলা বা নির্যাতিতা রমণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা, সংসদকে ‘শুয়োরের খোঁয়াড়’ বলা— ভারতের রাজনীতিকে নােংরা, কদর্য করে তুলতে কমিউনিস্টদের অবদান সত্যিই অতুলনীয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, কমিউনিস্টদের এই চরিত্র যে আমরা কেউ জানি না তেমনও নয়।
২০১৪-য় লোকসভা নির্বাচনের পর হঠাই এই নিম্নরুচির অধিকারীরা খুব ‘সুরুচি সম্পন্ন’, ‘শিক্ষিত’, ‘ভদ্র’, এমনকী ‘সহিষ্ণুও হয়ে উঠলেন। যারা ভুক্তভোগী তারা জানেন কমিউনিস্ট অভিধানে এই ধরনের শব্দ-বন্ধনের কোনও ঠাই নেই। আসলে তারা ভোলও পাল্টায়নি, মুখোশও পরেনি। এসবই ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হওয়া এক ধরনের প্রোপাগান্ডা। যে প্রোপাগান্ডাকে মানুষের মনে আরও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য অতিবাম পরিচালিত একটি দৈনিকের ‘সম্পাদকীয় দপ্তরও চেষ্টার বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি। কিন্তু এত ‘শিক্ষিত’ হরেক প্রজাতির কমিউনিস্টদের দেখেও ‘অশিক্ষিত, ‘গুটকাখোর’, ‘ভক্ত’, এমনকী ‘হিন্দু বাঙ্গালি’ (জামাত বাঙ্গালির বিরোধী যারা আর কী!) পাবলিকও ভোটের বাজারে এদের প্রতি বিন্দুমাত্র করুণার দৃষ্টিতে চাইলেন না। ফলে কমিউনিস্ট হাহাকার তীব্র বেগে নিনাদিত হলো ভারতবর্ষের পাহাড় থেকে সমুদ্র সর্বত্র ‘এ দেশে (ওটা ভাবতে হবে) জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম। তো পদাঘাত প্রাপ্ত কমিউনিস্টরা দ্রুত সেই ‘পদাঘাতে’র ধাক্কা সামলাচ্ছেন। ধাক্কা সামলাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এতকাল ধরে সযত্নে প্রচারিত ‘ন, ভদ্র, শিক্ষিত, সচ্চরিত্রে’র ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন অকুতোভয়ে। দেশে রাজনৈতিকভাবে কমিউনিস্টদের যা হাল, তাতে পানি’পেতে পেতে পৃথিবী আর টিকবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়াতে। দাঁত-নখ বের করতেই আর আপত্তিটা বা কী! গত বছরের স্বাধীনতা দিবস থেকে এখনও অবধি রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি তার সেরা সময়ে অবস্থান করলেও সময়টা খুব সুখের হয়তো নয়। গত বছর ১৬ আগস্ট অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যু দিয়ে শুরু। এবছর প্রথম মোদী সরকারের ‘কিচেন ক্যাবিনেটে’র তিন সদস্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিপক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি একে একে অমৃতলোকের যাত্রী হয়েছেন। এই দুর্ভাগ্য স্বাধীন ভারতবর্ষে আর কোনও রাজনৈতিক দলের হয়নি।
প্রতিটি মৃত্যুর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কমিউনিস্ট সুলভ উল্লাসের নােংরামি দেখা গিয়েছে। বাজপেয়ীর ক্ষেত্রে যাও বা রাজনৈতিক কমিউনিস্টরা প্রকাশ্য বিবৃতিতে অন্তত ‘রাইট ম্যান ইন আ রং পার্টি’ স্ট্যান্ড নেওয়ায় উল্লাসে লাগাম টানা গিয়েছিল, বাকি তিনজনের অকাল মৃত্যুর ক্ষেত্রে আর সেই রাশও টানা গেল না। বিশেষ করে সম্প্রতি অরুণ জেটলির মৃত্যু ঘিরে যে ইতরামির উৎসব পালন করেছে কমিউনিস্টরা তা দেখে যে কোনও শুভচিন্তক মানুষ আঁতকে উঠবেন। এক হিন্দু নামধারী বাংলাদেশের জামাত সমর্থক তথ্যচিত্র নির্মাতা ফেসবুক পোস্টে লেখেন :‘আমাকে দেশদ্রোহী বলুন আর যাই বলুন, অরুণ জেটলির মৃত্যুতে দুঃখিত হতে পারবো না।
সার্বিক ভাবে কমিউনিস্টদের পোস্টগুলি ছিল নোটবন্দি নিয়ে, কারণ এতে এদের কালোটাকা বিশালভাবে ফেঁসে গিয়েছে। তবে জামাত-পন্থী, পিঠ বাঁচাতে তৃণমূলে আশ্রয় নেওয়া কমিউনিস্টরা আরও এককাঠি ওপরে। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানীকেও ‘লাইন’-এ রেখে মানবসভ্যতার মাথা খেয়ে নােংরামির চূড়ান্ত করতে আর কিছু বাকি রাখেনি। আসলে এই ধরনের কমিউনিস্টরা মোদী-শাহকে কোনওমতে কাবু করতে পারছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিত শাহ এঁদের ঘেঁটি চেপে ধরছেন, ফলে ঈশ্বর অবিশ্বাসী এই কালাপাহাড়ি ‘ভদ্দরনোক’ বিরোধীরা যদি শাহ-মোদীর মৃত্যুর জন্য মানতও করে তাহলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। এদের হত্যা-টত্যার যে স্বতন্ত্র ‘ক্যালি’ ছিল তাও সময়ের তালে শিকেয়, তাই ‘অভিশাপের’চরণেই এদের মাথা নুইছে, কিন্তু শকুনের অভিশাপে কী আর গোরু মরে। পশ্চিমবঙ্গের অরণ্য প্রবাদ!
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-08-30