আজ সংসদে পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব বিল

প্রবল বিরোধিতার মধ্যেই আজ লোকসভায় পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল। সারা দেশে নাগরিক পঞ্জিকরণ করবে বলে লোকসভা ভোটের আগেই ঘোষণা করে রেখেছিল বিজেপি। ভোটের আগে জানুয়ারি মাসেই তারা লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পেশ করেছিল। কিন্তু লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই বিল তামাদি হয়ে গেছে। তাই আবার নতুন করে এই বিল তারা আনছে। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই বিল অনুমোদন করে দিয়েছে।

সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেন, “এই বিল কারণ নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না, বরং প্রতিবেশী দেশে যাঁরা সমস্যায় রয়েছেন, তাঁদের সুবিধা করে দেবে।” সংসদে কংগ্রেসের আক্রমণকে ভোঁতা করতে বিজেপি হাতিয়ার করতে পারে মনমোহন সিং সরকারে একটি নীতি। সেখানে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের ১০ বছর পর্যন্ত ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তারা নাগরিকত্ব না দিলেও, হিন্দুদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল।

এই বিল নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতে। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পাস করার পরের দিনই অসমের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়ে দিলেন, কেন এই বিল ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে কেউই ধর্মরক্ষার তাগিদে দেশ ছাড়েননি।

একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে মুসলমানদের উপরে ধর্মীয় নিপীড়ন হয় না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অন্য ধারাগুলির মধ্যে এটিও রয়েছে যে এইসব দেশের অমুসলমানরা যাতে সহজে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারেন।”

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে তাঁদের উদ্বেগ দূর করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই বিল অনুমোদিত হয়।

হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “যাঁরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন তাঁদের রক্ষা করার জন্যই এই বিল, এটি কী ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হবে? ভেবে দেখুন, কোনও আদালতে একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী কী ভাবে প্রমাণ করবেন যে ধর্মপালনে তাঁকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল?”

তিনি বলেন, “কেউ একজন আমাকে বলুন… কোরান পড়ার জন্য কোনও একজন মানুষকে পাকিস্তানে নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়… বা বাংলাদেশে? যদি তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে ধর্মের জন্য তাঁকে নিপীড়িত হতে হয়েছিল, তখন এই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে।”

বিলটি পাস হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলিতে শত শত মানুষ নিপীড়িত হচ্ছেন। ভারতমাতার প্রতি তাঁদের আস্থা আছে। তাঁদের জন্য ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাঁদের ভবিষ্যতে ভাল হবে।”

এই বিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে বলে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর এই বিলকে ‘মৌলিক ভাবে সংবিধানবিরোধী’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি টুইট করে বলেছেন, “ভারত কোনও মুসলমানের দেশ নয়।”

এই বিল পেশ হলে লোকসভা উত্তাল হতে পারে, তবে সংখ্যাধিক্যের কারণে বিল পাস করাতে বিজেপির কোনও সমস্যা হবে না। রাজ্যসভাতেও এই বিল বিজেপি পাস করিয়ে নিতে পারবে বলে আশাবাদী। বিরোধীরা চাইছেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে ধরা হোক শিয়া মুসলমানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.