চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান-২, সফল ল্যান্ডার বিক্রমের শেষ পদক্ষেপও

ইতিহাস গড়ার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিনের। সফল হয়েছে দ্বিতীয় ডি অরবিটিং ম্যানুভারও। ল্যান্ডার বিক্রমের লক্ষ্য এখন শুধুই চাঁদ। বুধবার ভোররাতে দ্বিতীয় ডি অরবিটিংয়ের মাধ্যমে চাঁদের একদম কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার বিক্রম। ৯ সেকেন্ডের এই ডি অরবিটিং বা রেট্রো অরবিটিং সম্পন্ন হয়েছে বুধবার ভোররাতে ৩ টে ৪২ মিনিট নাগাদ। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, এই ম্যানুভারের মাধ্যমে দূরত্ব আরও কমেছে।

পরিকল্পনামাফিক সোমবার চন্দ্রযান-২  থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ল্যান্ডার বিক্রম। মঙ্গলবার সকালে সেই কক্ষপথের দূরত্ব কমিয়ে চাঁদের দিকে একধাপ এগিয়ে যায় বিক্রম। চাঁদকে ৩৫x১০১ কিলোমিটার দূরত্বের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রম। আপাতত ল্যান্ডিংয়ের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠ স্ক্যান করবে বিক্রম। সব কিছু ঠিক থাকলে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টো ৩০ মিনিটের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করবে বিক্রম।

১৪৭১ কেজি ওজনের ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ৬৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। অরবিটারের মাধ্যমেই ল্যান্ডার আইডিএসএনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। চাঁদের থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে সে অরবিটারের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের আরও ছবি ও তথ্য পাঠিয়ে দেবে আমাদের নীল গ্রহে।

ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ও পৃথিবীর মধ্যে যোগাযোগের সেতু অরবিটার

ইসরো জানিয়েছে, অরবিটার (Orbiter) থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ‘বিক্রম’। লুনার সারফেস (Lunar Surface) অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে তার দূরত্ব এখন ১১৯ কিলোমিটার ও ১২৭ কিলোমিটার। আগামিকাল আরও কিছুটা এগিয়ে শেষে চাঁদের মাটি থেকে তার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ১০০ কিলোমিটারে। ৬ সেপ্টেম্বর মাঝরাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ‘সফট ল্যান্ডিং’ করবে ‘বিক্রম’।

ল্যান্ডার কতটা এগোচ্ছে তার বিবরণ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিচ্ছে এই অরবিটার। যার থেকে এখন আলাদা হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ‘বিক্রম’। তবে এখনও পর্যন্ত ‘বিক্রম’ ও পৃথিবীর মধ্যে যোগাযোগের মূল মাধ্যমই হলো এই ২৩৭৯ কিলোগ্রাম ওজনের এই অরবিটার।  প্রায় ১০০০ ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা যুক্ত অরবিটার নিয়মিত ‘ইন্ডিয়ান ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক’ (IDSN)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এই অরবিটারেই রয়েছে ‘টেরেন ম্যাপিং ক্যামেরা ২ (টিএমসি ২)’ যা দিয়ে প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলেছিল সে। তা ছাড়াও অরবিটারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নিউট্রাল মাস স্পেকট্রোমিটার, সিন্থেটিক অ্যাপারেচার র‍্যাডার, রেডিয়ো অকুলেশন এক্সপেরিমেন্ট, সফট এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার ও সোলার এক্স-রে মনিটর। ভারতের চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ার পরেও এক বছর কক্ষপথে বসে থেকে নজরদারি চালাবে সে।

কী কী হতে চলেছে…

২ সেপ্টেম্বর বেলা  ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে চন্দ্রযান থেকে আলাদা হয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য ছক সাজানো শুরু করে দিয়েছে সে।

৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এবং ৪ সেপ্টেম্বর ভোররাত ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে দু’দফায় বিক্রমের পথ বদল করা হবে। কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার এটি বিশেষ পক্রিয়া (Deorbit Manoeuvres) । এর পর শুরু হবে চাঁদকে ঘিরে পরিক্রমা।

৬ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৫৫মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) পালকের মতো নেমে যাবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।

৭ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ থেকে বেরিয়ে যাবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘরে শুরু করবে কাজ।

চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নামার আগে আরও চার দিন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে ল্যান্ডার। তার পর ধীরেসুস্থে নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) । ইজেক্ট করবে ২৭ কেজি ওজনের ৬ চাকার রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ছবি ও তথ্য পাঠাবে সে।

চাঁদের এক পক্ষকাল সময় অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে কাজ করতে পারবে ‘বিক্রম।’  রোভারও সচল থাকবে ১৪ দিন ধরে। প্রতি বারে ১৫০-২০০ মিটার অবধি গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকবে সে। পরীক্ষামূলক ভাবে চাঁদের মাটি, তার রাসায়নিক উপাদানের কাটাছেঁড়া করতে পারবে। প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর অরবিটারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠাবে রোভার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.