আরও এগিয়ে আসছে সময়। ইতিহাস গড়তে চলেছে ভারত। পৃথিবীর কক্ষপথের মায়া কাটিয়ে ফেলেছে চন্দ্রযান-২। পরের মিশন চাঁদের কক্ষপথ। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো জানিয়েছে, এই ভাবেই নির্দেশ মেনে চললে, আগামী ২০ অগস্ট চাঁদের কক্ষপথে এন্ট্রি নিয়ে নেবে চন্দ্রযান। তার পর..চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযান।
গত ২২ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয় চন্দ্রযান-২। জিয়ো সিনক্রোনাইজড লঞ্চ ভেহিক্যাল থেকে বাহুবলী রকেটের পিঠে চড়ে চন্দ্রযান উড়ে যায় তিনটি অংশ— অরবিটর স্যাটেলাইট, বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার নিয়ে। তিনটি অংশ মিলিয়ে ওজন ৩৮৫০ কেজি।
উৎক্ষেপণের কয়েক ঘ্টার মধ্যেই পৃথিবীর কক্ষপথে হই হই করে ঢুকে পড়েছিল চন্দ্রযান-২। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এতদিন লাট্টুর মতো পৃথিবীর চারধারেই পাক খাচ্ছিল সে। ভারতীয় সময় রাত ২টো ২১ মিনিট নাগাদ অভিকর্ষজ বলকে পিছনে ফেলে পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যায় চন্দ্রযান। ইসরো সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল, পৃথিবী এবং চন্দ্রের কক্ষপথে ঘোরার মধ্যে মোট ১৫টি ধাপে শক্তি বাড়ানো হবে। এই ভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে দেওয়া হবে চাঁদের দিকে। তার পর সব শেষে চাঁদের মাটিতে নামবে বিক্রম ল্যান্ডার। ইসরো সূত্রে খবর, ১২০৩ সেকেন্ডের মধ্যে রকেটের লিকুইড চেম্বারের ইজেকশন হয়। চন্দ্রযান এখন সফল ভাবে চাঁদের পথে ‘লুনার ট্রান্সফার ট্রাজেক্টরি’-তে ঢুকে পড়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অগস্টের ২০-র মধ্যেই চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে যাবে চন্দ্রযান-২।
‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’-এরও রয়েছে একটি ‘অরবিটার’। যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে। ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদের কক্ষে পা রাখবে ‘বাহুবলী।’ সময়সূচী মতো পৃথিবী ছাড়ার ৫৪ দিনের মাথায় চাঁদে জমিয়ে বসার কথা চন্দ্রযানের, তবে প্রথম উইনডো নষ্ট হওয়ায় সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা হবে। দক্ষিণ মেরু (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে) দিন অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই কাজ শুরু দেবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান’।
চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে। কক্ষপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উপরে থাকতেই চন্দ্রযানের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম।’ নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) । ল্যান্ডার থেকে বের হবে ২৭ কেজি ওজনের ৬ চাকার রোভার। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ছবি ও তথ্য পাঠাবে সে। ১৪ দিন ধরে চাঁদের আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সফর করবে এই রোভার। ঘুরে ফিরে সূর্যের আলো না পৌঁছনো চাঁদের অংশ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠিয়ে দেবে চন্দ্রযানের রোভার।
প্রথম চন্দ্রযান অপ্রত্যাশিত ভাবে চাঁদে বরফের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। সেই বরফ কত দূর বিস্তৃত এবং তার মোট পরিমাণ কত, সেটা কিন্তু এখনও আমাদের জানা নেই। চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অবতরণ করার চেষ্টা করবে। কারণ, মেরু অঞ্চলেই বরফ থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেই বরফের পরিমাণ থেকে তার গভীরতা সবকিছুই খুঁটিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ২। চাঁদে জল কোথা থেকে এল, কী ভাবে এল এই সব প্রশ্ন নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি, পৃথিবীর উৎসের অনেক রহস্যেরও সমাধান করতে পারে চন্দ্রযান ২।