‘ফাইনাল কাউন্টডাউন’ থমকে গেছে। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রের সেই সাজো সাজো রবটা রবিবার শেষ রাত থেকেই থেমে গেছে। ভারতের মাটি কাঁপিয়ে চাঁদে দক্ষিণ মেরু ছুঁতে পারেনি ইসরোর ‘চন্দ্রযান ২।’ আবার কবে পারবে সেটাও অনিশ্চিত। কারণ নিউ মুন বা অমাবস্যার নিরিখে ১৫ জুলাই প্রথম উইনডো ব্যর্থ। জুলাইতেই রয়েছে আরও একটি। তার মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে ‘বাহুবলী’র পিঠে চাপিয়ে চন্দ্রযান-২ চাঁদে পাড়ি জমাতে পারবে কি না সেটা এখনও নিশ্চিত নন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো-র বিজ্ঞানীরা। বিবৃতি দিয়ে ইসরো জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়টা হতে পারে সেপ্টেম্বরে।
কেন ব্যর্থ হলো এত আয়োজন-আড়ম্বর?
তার আগে জেনে নিতে হবে চন্দ্রযান-২ এর গঠন কী রকম। ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযানের তিনটি ভাগ। অরবিটার, অর্থাৎ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ, যা চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’, যা চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে নামাতে সাহায্য করবে। এবং রোভার ‘প্রজ্ঞান’, অর্থাৎ মূল অনুসন্ধানকারী যান, যা চাঁদের মাটিতে জল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের সন্ধান চালাবে। এই চন্দ্রযানের বাহকও অত্যন্ত শক্তিশালী, সর্বাধুনিক ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’। সব মিলিয়ে চন্দ্রযানের তিনটি অংশ এবং মূল মহাকাশযানের মিলিত ওজন প্রায় ৩৮৫০ কেজি।
এই ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’-এরও রয়েছে একটি ‘অরবিটার’। যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে। ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর ১৭ দিন ধরে গতি বাড়িয়ে ৬ গুণ করা হবে, যার সাহায্যে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-২। প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে চাঁদের পিঠে পা ছোঁয়াবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে থাকবে মাত্র ১০০ কিলোমিটার উপরে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে ধাপে ধাপে। ইসরো জানিয়েছে, সবটাই সঠিক ভাবে নিয়ম মতো সম্পন্ন হয়েছিল। তবে গলদ ধরা পড়ে উৎক্ষেপনের মাত্র ১ ঘণ্টা আগে। মহাকাশবিজ্ঞানীদের কথায়, চন্দ্রযানের ক্রায়োজেনিক স্টেজে ধরা পড়ে গলদ। ‘বাহুবলী’ বা জিয়োসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি-তে চাপিয়ে রকেটের উড়ান শুরু হয় কঠিন জ্বালানিতে। পরে গতি বাড়াতে কাজ শুরু করে তরল জ্বালানি। বায়ুর চাপ, তাপ, ঘর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য সামনের কঠিন আবরণ খুলে যায়। সেই সময় কাজ শুরু করে দেয় ক্রায়োজেনিক অর্থাৎ শীতল জ্বালানি। এই ভাবে ধাপে ধাপে যানের বাকি অংশ থেকে আলাদা হয়ে চন্দ্রযান-২ এগিয়ে চলবে লক্ষ্যের দিকে। অর্থাৎ চাঁদের অন্ধকার পিঠে, দক্ষিণ মেরুর মুলুকে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ক্রায়োজেনিক বা লিকুইড হাইড্রোজেন ভরার পরেই এই ত্রুটি সামনে আসে। জ্বালানি লিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যার ফলে উৎক্ষেপণ থামিয়ে দিতে হয়।
ফের কবে উড়বে চন্দ্রযান-২?
ইসরো প্রধান কে সিভান জানিয়েছেন, ১৫ জুলাই রাত ২টো ৫১ মিনিট নাগাদ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রে থেকে উৎক্ষেপণের কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর। এই উৎক্ষেপণ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি সময় বা উইনডো মেনে। অমাবস্যা বা ‘নিউ মুন’-এর সময় ধরলে জুলাইয়ের উইনডো ছিল ১৫-১৬ জুলাই এবং ফের ২৯-৩০ জুলাই। ১৫ জুলাইয়ের উৎক্ষেপণ ব্যর্থ। ক্রায়োজেনিক স্টেজের গলদ সারিয়ে পরের উইনডো মাফিক উৎক্ষেপণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং পরবর্তী উৎক্ষেপণ হতে পারে সেপ্টেম্বরে।
কে সিভানের কথায়, ‘‘উৎক্ষেপণের সমস্ত রকম শর্ত ও নিয়মাবলি দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। সে ক্ষেত্রে এখনই সঠিক সময় বলা যাচ্ছে না।’’
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উল্কাপাত বা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল গর্ত (ক্রেটার) । সেখানে বালিকণার সঙ্গে কোনও মৌল বা খনিজ পদার্থ মিশে রয়েছে কি না, বা থাকলেই সেটা কী পরিমাণে রয়েছে সেটা জানাই উদ্দেশ্য চন্দ্রযান-২ এর।