নাগা শান্তি চুক্তি: কাশ্মীরে বাতিল, তবে নাগালিমের বিশেষ পতাকা মানতে পারে কেন্দ্র

রক্তাক্ত নাগা পাহাড়ে এবার কি নামবে চিরশান্তি। এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার বহু প্রতীক্ষিত নাগা শান্তি চুক্তির চূড়ান্ত পর্বটি হওয়ার কথা নয়াদিল্লিতে। সূত্রের খবর পৃথক নাগালিমের পতাকাটি আপাতত মেনে নিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। এমনই জানাচ্ছে, নাগাল্যান্ডের কিছু সংবাদ মাধ্যম।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও পতাকা অবলুপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু উত্তর পূর্বাঞ্চলের নাগাল্যান্ড থেকে কি মুছে দেওয়া হবে তাদের পৃথক পতাকা ? এই প্রশ্ন ঘিরেই সরগরম কোহিমা থেকে নয়াদিল্লি।

বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বহু প্রতীক্ষিত নাগা শান্তি চুক্তির চূড়ান্ত পর্বটি হওয়ার অপেক্ষা। সূত্রের খবর, নাগা স্বশাসিত এলাকার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন(আই-এম) এর দাবি মেনে আলাদা নাগা পতাকা থাকলেও পৃথক সংবিধান ও আইনের বিষয়ে পরে ভাবনা চিন্তা করা হবে।

নয়াদিল্লিতে বেলা ১১টার পর থেকেই নাগা শান্তি চুক্তির চূড়ান্ত বৈঠক শুরু হচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে থাকবেন নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল আরএন রবি ও, এনএসসিএন(আই-এম) গোষ্ঠীর সুপ্রিমো টি মুইভা। থাকছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকরা।

প্রবীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মুইভার নেতৃত্বেই পৃথক নাগাভূমির দাবিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসছে ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগালিম(আইজাক-মুইভা) গোষ্ঠী। সংগঠনটির কট্টরপন্থী শাখা তথা এনএসসিএন (খাপলাং) গোষ্ঠী মায়ানমারের গোপন ঘাঁটি থেকে সশস্ত্র পথেই ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে রেখেছে।

এদিকে ৩১ অক্টোবর নাগা শান্তি চুক্তি ঘিরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এই চুক্তির একটি ভাগে বৃহত্তর নাগালিম অর্থাৎ স্বশাসিত নাগা এলাকা গঠনের কথা বলা হয়েছে। আর সেটা করা হবে মণিপুরের কিছু অংশ কেটে নিয়ে। এই কারণে মণিপুরে ছড়িয়েছে ক্ষোভ।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আশঙ্কা, মায়ানমার সীমান্তের দিক থেকে হামলা চালাতে পারে এনএসসিএন খাপলাং শিবিরের জঙ্গিরা। সেনাবাহিনি, অসম রাইফেলসের জওয়ানরা রুট মার্চ শুরু করেছেন।

কোনওভাবেই মণিপুরের কোনও অংশ কাটা যাবে না বলে ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন। এর জেরে মণিপুরি ও নাগাদের মধ্যে জাতিগত সংঘাত তৈরির সম্ভাবনাও প্রবল। ফলে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি। পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও জারি হয়েছে বিশে, সতর্কতা।

নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ঠাণ্ডা রাখতে রাজ্য সরকার সর্বত চেষ্টা করবে।

অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন (আই-এম) সদর দফতর অর্থাৎ ক্যাম্প হেব্রন ঘিরেও সতর্কতা। সংগঠনের বর্তমান সুপ্রিমো টি মুইভা জানিয়েছেন কোনওভাবেই পৃথক নাগালিমের পতাকা ছাড়তে রাজি নই।

ফলে কেন্দ্রের সরকার পক্ষের সঙ্গে নুন্যতম মতবিরোধ হলেই বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।

এক নজরে পৃথক নাগালিম আন্দোলন:

১. নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯১৮ সালে কোহিমার নাগা ক্লাব প্রতিষ্ঠা দিয়ে
২. নিজেদের ভারতীয় হিসেবে ভাবতে নারাজ তারা। এর জন্য ব্রিটিশ সাইমন কমিশনের কাছে স্মারক লিপিও দেওয়া হয়।
৩. ১৯৪৬ সালে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এনএনসি) তৈরি হয়। সংগঠনটি নাগা হিলস সহ উত্তর পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকায় পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি জানায়।
৪. সেই দাবি অনুসারে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মায়ানমারের অংশ নিয়ে তৈরি হবে নাগালিম।
৫. ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট এনএনসি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ভারতের সঙ্গে কোনওভাবেই থাকতে রাজি হয়নি এনএনসি।
এর পরেই তৈরি হয় নাগা স্বশাসিত এলাকার দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ। বিচ্ছিন্নতাবাদী এই পথে বারে বারে রক্তাক্ত হয়েছে নাগাভূমি। একাধিক নাশকতা হয়েছে। যার কেন্দ্রে রয়েছে অন্যতম শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন।

এক নজরে এনএসসিএনঃ
১. পৃথক নাগালিমের দাবিতে ১৯৮০ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর।
২. নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী এনএসসিএন সংগঠনের প্রধান তিন নেতা আইজ্যাক চি চি সু, টি মুইভা এবং এস এস খাপলাং।
৩. পরে এনএসসিএন দুটি অংশে ভাগ হয়। একটির নেতৃত্বে থাকেন আইজ্যাক ও মুইভা। এর নাম হয় এনএসসিএন (আইএম)। আর খাপলাঙের নেতৃত্বে অপর অংশটির নাম হয় এনএসসিএন (কে)।
৪. নরমপন্থী গোষ্ঠীর চি চি সু ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর খাপলাং দুজনেই প্রয়াত। বর্তমানে এনএসসিএন আলোচনাপন্থী শিবিরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরই অপর সহযোগী মুইভা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.