বুলবুল-এর ত্রান নিয়ে সংঘাত বাঁধল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ৷ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বুলবুল ত্রাণ ও সহয়তা খাতে এখনও এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র৷ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান ৪১৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে৷ এরপরই বিবৃতি জারি কেন্দ্রের দাবি খারিজ করে দেয় রাজ্য সরকার৷
সোমবার বিধানসভায় বুলবুলের ত্রাণ ইস্যুতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে গেলেও ত্রান ও সহায়তা খাতে এখনও এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র৷ ওইদিন তৃণমূল বিধায়ক গীতারানি ভুঁইয়ার প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বুলবুলে বিপর্যস্ত কৃষকদের সাহায্যে রাজ্য ইতিমধ্যেই ১২০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এরপরই কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘বুলবুল ধাক্কা দেওয়ার পরের দিন প্রধানমন্ত্রী টুইট করেছিলেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন। কিন্তু এখনও কেন্দ্রীয় সাহায্য কিছু আসেনি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ শুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ও তাঁর আধিকারিকদের দেওয়া হিসেব— দু’টো আলাদা। তাই কেন্দ্র হয়তো ঘাবড়ে গিয়েছে।’’কিন্তু মঙ্গলবারই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই দাবি করেন ৪১৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে৷ রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে লিখিত জবাবে জানান, ২০১৯-২০ সালে ৪১৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। পশ্চিমবঙ্গের আপৎকালীন মোকাবিলায় যে তহবিল রয়েছে, সেই তহবিলে কেন্দ্রের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে, তাতেই দেওয়া হয়েছে ওই টাকা। বাংলা ও ওড়িশার আপৎকালীন মোকাবিলার তহবিলে কেন্দ্রের তরফে টাকা দেওয়া হয়।
এদিকে কেন্দ্র যখন এই দাবি করছে, তখন সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা সেই দাবি খারিজ করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কেন্দ্র কোনও ফান্ড দেয়নি।” একইসুর ডেরেক ও’ ব্রায়েনের গলাতেও। ফণি দুর্যোগে কেন্দ্রের সাহায্য দেওয়ার দাবি খারিজ করে দিয়েছেন ডেরেকও। টুইট করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা, মিথ্যাচারণের অভিযোগ আনেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। দু’দলে ভাগ হয়ে তারা যায় দুই ২৪ পরগনায়। কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা কথাও বলেন ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে রাজ্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধদলকে রিপোর্টে জানায় রাজ্য৷ রিপোর্টে নবান্ন জানায়, বুলবুলে রাজ্যে ৩৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ প্রায় ৫ লক্ষ ১৮ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত৷ প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ বিদ্যুত্ সংক্রান্ত ক্ষতির পরিমাণ ৫৯৭ কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷