জাতিভেদ প্রথা মিথ্যে‚ একাংশ পুরোহিতদের সৃষ্টি কৃত্রিম বিভেদ মাত্র: সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত গত রবিবার সাধক শিরোমণি রোহিদাসের ৬৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্র নাট্যমন্দির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে‚ “জাতিভেদ প্রথা মিথ্যে‚ ভগবানের কাছে সবাই সমান, জাতিভেদ সৃষ্টি করেছে পুরোহিতরা।”
কর্মভেদ সম্পর্কে বলার সময় তিনি জানান‚ “আমরা যখন কোনো জীবিকা নির্বাহ করি তখন সমাজের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব থাকে। প্রতিটি কাজই যখন সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য, তখন কোন কাজ বড়, আবার কোনো কাজ ছোট বা ভিন্ন হতে পারে কী করে? আমাদের নির্মাতার কাছে আমরা সবাই সমান।”
দেশে প্রচলিত বিভিন্ন মতপার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন‚ দেশে বিবেক ও চেতনা সবই এক, শুধু মতামতের পার্থক্য আছে।
মোহন ভাগবত বলেন‚ সন্ত শিরোমনি সাধু রোহিদাস অনেক মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাদের ঈশ্বরে বিশ্বাসী করেছিলেন। সাধক রোহিদাস সমাজকে চারটি মন্ত্র দিয়েছেন – সত্য, করুণা, মনের বিশুদ্ধতা এবং নিরন্তর কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা।”
তিনি একইভাবে আম্বেদকরকে স্মরণ করে বলেন যে‚ সাধক রোহিদাস ও বাবাসাহেব সমাজে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। সাধক রোহিদাস দেশ ও সমাজের উন্নয়নের রাস্তা দেখিয়েছিলেন, কারণ সমাজকে শক্তিশালী ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ঐতিহ্য প্রয়োজন তা তিনি আমাদের দিয়েছেন।………দেশের মানুষ নিজেদের মনকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। সমাজে যখনই সখ্যতা শেষ হয় তখনই স্বার্থপরতা বড় হয়ে দেখা দেয়।”
সাধারণ মানুষের প্রতি সরসঙ্ঘচালক আহ্বান জানান চারপাশে সব ঘটনার উপর মনোযোগ দিতে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ধর্ম ত্যাগ না করতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সঙ্ঘ তার প্রথম দিন থেকেই জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। শোনা যায় স্বয়ং গান্ধীজি একবার সঙ্ঘের বর্গে গিয়ে সব জাতের স্বয়ংসেবকদের পাশাপশি বসে খেতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে‚ হাজারও চেষ্টা করে যে জাতিভেদকে তিনি মানুষের মন থেকে দূরে সরাতে পারেননি‚ সঙ্ঘ কিভাবে তা এত অনায়াসে পারল।
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন ভারতবাসীর মধ্যে জাতপাতের বিভেদের লড়াই লাগানোর চেষ্টা চলছে হিন্দুসমাজকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে‚ তখন জাতিভেদের বিরুদ্ধে সরসঙ্ঘচালকের এই দ্যার্থহীন দাবি অবশ্যই জাতিবাদীদের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় সতর্কবার্তা।