গত মেয়াদে প্রতিশ্রুতি পালন করা যায়নি। বলেছিলেন, কৃষি পণ্য উৎপাদনের উপর পঞ্চাংশ শতাংশ মুনাফা নিশ্চিত করবেন চাষীদের। তা যে হয়নি কৃষকদের বিক্ষিপ্ত অসন্তোষের ঘটনাই জানান দিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন থেকেই তাই কৃষক বন্ধু হয়ে উঠতে চাইলেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।
বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পর শুক্রবার নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হয়। তার পর কৃষকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য বড় ঘোষণা করে মোদী সরকার। বলা হয়, কৃষকদের জন্য এ বার পেনশন স্কিম চালু হবে। এই অবসরভাতা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন ১২ কোটি ৫০ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। সেজন্য আগামী তিন বছরে সরকারের ১০৭৭৪.৫ কোটি টাকা খরচ হবে।
এছাড়া কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের আওতায় আরও বেশি কৃষককে আনবে সরকার। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের অন্তর্বর্তী বাজেটে অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল প্রস্তাব করেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তার নাম দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান প্রকল্প। যাঁদের জমির পরিমাণ ২ হেক্টর অর্থাৎ ৪.৯ একরের কম, তাঁরা ওই সুবিধা পাবেন। এই প্রকল্পে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে ধরা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে ওই প্রকল্প চালু করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরাজ্যে প্রচারে এসে বার বার সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক বাদে বাকিরাও ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এতদিন ১২.৫ কোটি কৃষক ওই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এবার পাবেন ১৪.৫ কোটি কৃষক।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এদিন কৃষকদের অবসরভাতা প্রকল্প নিয়ে এক প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, এই অবসরভাতা প্রকল্পে আগামী তিন বছরে পাঁচ কোটির বেশি চাষির জীবন স্থিতিশীল হবে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন এই স্কিম চাষিদের আর্থিক দুর্দশা ঘোচাতে আরও বেশি সহায়তা করবে।
প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম তিন বছরে এতে লাভবান হবেন প্রায় পাঁচ কোটি কৃষক। স্বাধীনতার পরে এই প্রথমবার চাষিদের জন্য পেনশন প্রকল্পের কথা ভাবা হল। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী চাষিরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ৬০ বছর বয়স হলে তাঁদের মাসে ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা করে পেনশন মিলবে। এতে চাষিদেরও মাসে মাসে কিছু পরিমাণ টাকা সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। সরকার একই পরিমাণ টাকা দিয়ে তৈরি করবে সংশ্লিষ্ট চাষির পেনশন তহবিল।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২৯ বছর বয়সী কোনও চাষি যখন এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন তখন তাঁকে মাসে ১০০ টাকা করে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। ৬০ বছরের পর তাঁর মৃত্যু হলে পেনশনের অর্ধেক টাকা মাসে মাসে পাবেন তাঁর স্ত্রী। ফ্যামিলি পেনশন বাবদ তাঁকে ওই অর্থ দেওয়া হবে।
৬০ বছর বয়সের আগে যদি কোনও কৃষকের মৃত্যু হয়, তাঁর স্ত্রী প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবেন। তাঁকেও স্বামীর মতো মাসে মাসে সরকারের কাছে টাকা জমা দিতে হবে। এই প্রকল্পের একটি বৈশিষ্ট্য হল, যে কৃষক কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধা পান, তিনি সেই টাকারই একটা অংশ পেনশন স্কিমের জন্য জমা দিতে পারবেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দু’টি প্রকল্পের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।