দু’মাস আগেও এই পরিস্থিতি নাকি ছিল না। কিন্তু রবিবার বিকেলে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘সি ভোটার’ তাদের সমীক্ষায় জানিয়ে দিল, সপ্তদশ লোকসভাতেও বিজেপির পাল্লাই ভারী থাকবে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের থেকে সরকার গঠনের দৌড়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
তাদের হিসেব অনুযায়ী, ৭ মার্চ পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক সংখ্যা অর্জন করতে না পারলেও তার ঘাড়ের কাছেই থাকবে মোদীর নেতৃত্বাধীন জোটের শক্তি। এনডিএ পেতে পারে ২৬৪ টি আসন। তুলনায় রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেতে পারে মাত্র ১৪১ টি আসন। পরিস্থিতি এমন হলে, সংশয় নেই পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর।
সি ভোটার জানিয়েছে, তাদের সমীক্ষা জানাচ্ছে ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রশ্নে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা এ বছরের গোড়ায় ছিল ৪৭ শতাংশ। কিন্তু তা মার্চের ৭ তারিখ আসতে আসতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশ। একই ভাবে বছরের গোড়ায় রাহুলের গ্রহণযোগ্যতা ২৬ শতাংশ ছিল ঠিকই। কিন্তু তা কমে ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সি ভোটার আরও জানিয়েছে, তাঁরা যখন নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গান্ধী তুল্যমূল্য বিচার করে কোনও ভোটারের মত জানতে চেয়েছেন, তখন ৬৪ শতাংশ মানুষই মোদীর পক্ষে সওয়াল করেছেন। রাহুলের পক্ষে ছিলেন মাত্র ২৭ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে চন্দ্রবাবু নায়ডু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতীদের ব্যাপারে খুব কম সংখ্যক মানুষই উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।
সি ভোটার যখন এই সমীক্ষা চালিয়েছে, তখন পুলওয়ামার ঘটনা ঘটে গিয়েছে। পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি শিবিরে আঘাত হেনে ফেলেছে বায়ুসেনা। হতে পারে তার প্রভাবও পড়েছে মানুষের মনে। তাই, নভেন্বর মাসে যে তিন রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল বিজেপি, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে সেই মধ্যপ্রদেশ,রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ে অনেকটাই জমি উদ্ধার করতে সফল হয়েছেন মোদী বাহিনী। সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, হিন্দিবলয়ের এই তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের থেকে বেশি আসন পাবে বিজেপি। একই ভাবে দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে বিজেপি-র প্রভাব প্রায় অটুট থাকবে।
তবে সমীক্ষা অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশে ভাল সংখ্যায় আসন কমতে পারে বিজেপি-র। গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের ৮০ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭১ টিতে বিজেপি একাই জিতেছিল। তা এ বার অর্ধেকেরও কমে নেমে আসতে পারে বলে সমীক্ষার ইঙ্গিত। তবে বিজেপি মুখপাত্ররা বলছেন, সামগ্রিক ভাবে হিন্দিবলয়ে বিজেপি ভাল ফল করবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ তার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না।
অন্য দিকে সমীক্ষার মতে, বাংলায় তৃণমূল এ বারও ৩৪ টি আসন পেতে পারে। তবে বিজেপি-র আসন সংখ্যা চারগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বারের দু’টির তুলনায় বিজেপি এ বার বাংলায় ৮টি আসন জিততে পারে বলে মত সি ভোটারের। সন্দেহ নেই বাংলায়, ৮টি আসন জিতলেও তা হবে বিজেপি-র জন্য বড় সাফল্য। বিশেষ করে বিজেপি শিবিরে বিশেষ কোনও মুখ যখন নেই।
তবে সি ভোটার একাই সমীক্ষা চালায়নি। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রাক ভোট সমীক্ষা চালিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা প্রকাশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এমন নয় যে এ ধরনের সব সমীক্ষার ফল বাস্তবের সঙ্গে মিলে যায়। তবে এটা ঠিক সমীক্ষা থেকে ভোটের একটা ট্রেন্ড পাওয়া যায়। সে দিক থেকে বাস্তব হল, রাহুলের তুলনায় মোদীকে অনেকটাই এগিয়ে রাখল সি ভোটারের সমীক্ষা।