ভারত নিয়ে ব্রিটিশ অফিসারের ঠাট্টা! সপাটে চড় মারলেন মনোহর আইচ, ফল হল ভয়ংকর

দৈহিক শক্তি কম। বুদ্ধিতে আমরা যতটা স্বাবলম্বী, শরীরে নাকি তত নই। যদিও ইতিহাস কিন্তু উলটো সাক্ষ্য দেয়। তেজি বাঙালিরা চমকে দিয়েছেন সবাইকে। শরীরচর্চার জগতে আজও কিংবদন্তি ভীম ভবানী (Bhim Bhabani), গোবর গোহ, মনোতোষ রায় (Manotosh Roy), মনোহর আইচ (Manohar Aich)।

অল্প বয়সে মনোহর আক্রান্ত হয়েছিলেন কালাজ্বরে। স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। তার আগে অবশ্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। কুস্তি, ভারোত্তোলনে আগ্রহ ছিল বেশি। ফলে অসুস্থতার পর কঠোর পরিশ্রম করে হারানো স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনেন। ঢাকায় পিসি সরকারের (PC Sircar) সামনে দৈহিক কসরত দেখিয়ে প্রশংসা অর্জন করেন। দাঁত দিয়ে ইস্পাত বেঁকানো, গলার সাহায্যে বল্লম নুইয়ে দেওয়া, পেটের নিচে তলোয়ার রাখা – এগুলো করতে পারতেন সহজেই।

ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগ দেন মনোহর আইচ (Manohar Aich)। সঙ্গে চলত শরীরচর্চা। ব্যায়ামের নতুন নতুন আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে থাকেন। ইংরেজ অফিসারদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন ভালো ব্যবহারের জন্য। তবে মনে প্রবল দেশপ্রেম ছিল তাঁর। এক ব্রিটিশ অফিসার ভারত নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করলে চড় কষিয়ে দেন সপাটে। ফলে যেতে হল জেলে। সেইখানে আরও মনোযোগী হলেন শরীরচর্চায়। কারাগারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দৈহিক অনুশীলন করতে দেখে ইংরেজরা অবাক হয়ে যান। মনোহরের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেন।

তখনই মনোহর আইচ ভাবতে থাকেন, বিশ্ব বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে কেমন হয়? চলতে থাকে প্রস্তুতি। শাস্তির মেয়াদ ছিল ৭ বছর। কিন্তু ৪ বছরেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলেন। কারণ দেশ স্বাধীন হল। ১৯৫০ সালে মনোহর জিতলেন ‘মিস্টার হারকিউলিস’ খেতাব। উচ্চতায় তিনি ছিলেন মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। তাই পরিচিত হন ‘পকেট হারকিউলিস’ নামে। পরের বছর মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তবে এখানেই থামেননি। তার পরের বছর ১৯৫২-তে জিতে নিলেন মিস্টার ইউনিভার্স সম্মান। দেশ-বিদেশের আরও নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

সারা বিশ্বে খ্যাতি পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে মনোতোষ ছিলেন সাদাসিধে। মদ ও সিগারেট কখনও ছুঁয়ে দেখেননি। বলিউডের নায়কদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন রোল মডেল। ৯০ বছর বয়সে শেষবারের মতো তিনি বডিবিল্ডিংয়ের মঞ্চে ওঠেন। সুস্থতার এক নজির গড়ে সেঞ্চুরি পার করে সবার কাছেই হয়ে উঠেছিলেন বিস্ময়।

২০১৬ সালে ১০২ বছর বয়সে প্রয়াত হন মনোহর আইচ। চোখ এবং দেহ দান করে গিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্টি করেছেন অমর চরিত্র ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’। যদিও নারায়ণ দেবনাথ বলেছিলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডিডি ওয়াটকিনসের জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র ডেসপারেট ডান থেকে বাঁটুলের আইডিয়া পান নারায়ণবাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.