জন্মাষ্টমী চলে গেল। শ্রদ্ধেয় গুণিজন বলবেন, তোর তাতে কী? তুই সায়েন্স পড়েছিস, বিজ্ঞানের কথা কিছু বল। জন্মাষ্টমী মানে কৃষ্ণের জন্মদিন, কৃষ্ণ একটা মিথিক্যাল ক্যারেক্টার। এ নিয়ে হুজ্জুতি করার কী আছে? আগে লোকেরা বিজ্ঞান-ফিজ্ঞান জানত না, হুজুগ নিয়ে থাকত, এখন তো তা নয়। সুতরাং জন্মাষ্টমী-ফন্মাষ্টমী নিয়ে আদিখ্যেতা করার কিছু নেই।
আছে। কেন, সেটা পরে কখনও বলব। এখন কিঞ্চিৎ সায়েন্সের কথা – ওয়েল, সায়েন্স মানে তো প্রশ্ন করা আর তার উত্তর খোঁজা, তাই তো, তো সেটাই – হোক।
তো গুণিজনদের কাছে প্রথম প্রশ্ন – জন্মাষ্টমী যেন কবে ছিল?
অন্তত নিরানব্বই শতাংশ উত্তর আসবে, কেন, গতকাল অর্থাৎ ৩০শে অগাস্ট। তখন আবার প্রশ্ন করা যাবে, গত বছর কবে ছিল? সামনের বছর কবে হবে? তার পরের বছর? এবার হান্ড্রেড পার্সেন্ট জনতা হাল ছেড়ে দেবে। বলবে, ধুর, জানি না, ওসব জেনে কী হবে?
কথা হচ্ছে, জন্মাষ্টমীর সংজ্ঞা এখন সম্ভবত কেবলমাত্র কিছু প্রাচীনপন্থী গৃহবধূ মহিলারাই জানেন। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি হচ্ছে জন্মাষ্টমী। নব্য আধুনিকদের কাছে ভাদ্রমাস শব্দটাই অশোভন, কৃষ্ণপক্ষ জিনিসটা কী, তা কতজন জানে খোদায় মালুম আর তিথি কয় প্রকার ও কী কী জিজ্ঞেস করলে অনেক আই এ এস পরীক্ষার্থীও আকাশের দিকে তাকাবে।
এরা সায়েন্স নয়, তাই না?
তাহলে এবার সায়েন্সের দিকে তাকানো যাক। গতকালের পুরো তারিখ বলতে গেলে লিখতে হয় ৩০শে অগাস্ট, ২০২১ এ ডি। হোয়াট ইজ দিস এ ডি? এর উত্তর অনেক বাচ্চারাও জানে – অ্যানো ডোমিনাই। এর মানে কী? অ্যানো মানে ইয়ার বা বছর, ডোমিনাই মানে ডমিনেটর তথা লর্ড। অ্যানো ডোমিনাই মানে ইয়ার অভ আওয়ার লর্ড। হু ইজ দিস লর্ড? অফ কোর্স যিশুবাবা। কিন্তু তিনি আমার লর্ড হতে যাবেন কোন দুঃখে? কৃষ্ণ শুনলেই যদি ভারতবর্ষীয় আমি নাক সিঁটকাই – কেননা আমি ‘সেক্যুলার’ – জিসাস শুনলে তাঁকে লর্ড ভাবাটা একটু বাড়াবাড়ি না?
এবার সাইটস্ক্রিনের পাশ থেকে আওয়াজ শোনা যাবে – ওরে, কৃষ্ণ হচ্ছে মিথিক্যাল আর জিসাস হচ্ছে হিস্টোরিক্যাল।
হিস্টিরিয়া থেকেই হিস্টোরিক্যাল শব্দটার উৎপত্তি কিনা, সেটা আমার ঠিক জানা নেই। কৃষ্ণ কী, সেটা আপাতত উহ্য থাক, জিসাস যে হিস্টোরিক্যাল ক্যারেকটার এর সপক্ষে সায়েন্টিফিক কোনো প্রমাণ আছে? একটাও? নেই। ভার্জিন মেরি, ক্রুসিফিকেশন, রেজারেকশন, অ্যাপোক্যালিপ্স – সব গাঁজাখুরি গপ্পো। এদিক ওদিক থেকে টোকা। কৃষ্ণ মে বি মিথিক্যাল, জিসাস ইজ এ লাই। না, না, বাইবেল থেকে এর সত্যতা খোঁজ করতে যাবেন না। বাইবেলের চারটে ডিফারেন্ট সংস্করণ, সবগুলোই কাল্পনিক জিসাসের মৃত্যুর কয়েকশো বছর পরের সৃষ্টি। বাইবেলের প্রথম দিকের কিছু সংস্করণ ভারতের পশ্চিম উপকূলের চার্চগুলোতে ছিল। পর্তুগিজরা জাহাজে চড়ে এ দেশে এসে সেই বাইবেল দেখে – যেহেতু তা তাদের বাইবেল থেকে আলাদা – সব পুড়িয়ে ফেলেছিল।
সো মাচ অ্যাবাউট সায়েন্টিফিক এ ডি! বিদ্রোহীদের মুখ বন্ধ করতে প্রস্তাব দেওয়া হল, ঠিক আছে, এ ডি লেখার দরকার নেই, তার বদলে লেখো সি ই। সি ই মানে ‘ক্রিশ্চান এরা’। সেক্যুলার? নো! যারা ক্রিশ্চান নয়, সেক্যুলার, তারা ক্রিশ্চান এরা অনুসরণ করবে কেন?
তারও উত্তর এসে গেল। বলা হল, ঠিক হ্যায়, ক্রিশ্চান এরা নয়, ধরে নাও এটা হচ্ছে ‘কমন এরা’। হোয়াট ইজ কমন? ক্রিশ্চান কেটে কমন বসিয়ে দেওয়া ছাড়া ওর মধ্যে আর কী আছে, যাতে ওটা কমন হয়?
দিস ইজ কল্ড ইউনিভার্সালিজম। আমি যা বলব, সেটাই ঠিক, সেটাই ‘ইউনিভার্সাল’, সেটাই ‘কমন’। আমি যদি বলি ‘মাংকি’ শব্দটা রেসিস্ট, তবে ওটা রেসিস্ট, তুমি কখনই কাউকে বাঁদর বলতে পারবে না, নিজের ছেলে বাঁদরামি করলেও না। ইতিহাস-বিজ্ঞানও তাই। আমি যাকে ইতিহাস বলব, সেটা ইতিহাস, যাকে বিজ্ঞান বলব, সেটাই বিজ্ঞান। আমি যদি বলি সার্স-কোভ-২ ন্যাচারাল ভাইরাস, তবে ওটা ন্যাচারাল এবং ওটাই বিজ্ঞান।
স্টেপ জাম্প করছি? আরে, এখনও তো স্রেফ এ ডি-তে আটকে আছি। গত কালকের তারিখের বাকি অংশটা এখনও বলাই হয়নি। এবার আসি ২০২১-এ।
একটা সংখ্যা বেড়ে বেড়ে এখন ২০২১ হয়েছে, কিন্তু আজ থেকে ২০২১ বছর আগে কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল, যার জন্যে একটা বছর তৈরি হল, এর কোনো প্রমাণ নেই। আমরা যাকে খ্রিস্টাব্দ বলি, তার সূত্রপাত এর অনেক পরে! এর প্রয়োজন হয়েছিল কেন? অন্য কারণে নয়, ইস্টারের দিন ঠিক করতে। খ্রিস্টানদের কাছে ইস্টার হচ্ছে পবিত্র দিন – ‘কুসংস্কৃত’ ভারতবর্ষীয়দের কারও কারও কাছে যেমন কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা রামনবমী – কেননা ইস্টারের দিন জিসাসের রেজারেকশন ঘটেছিল, হুয়িচ অফ কোর্স ইজ ভেরি ‘সায়েন্টিফিক’! এই এডি-র আগের সময়কে বলা হয় বিসি (আমাদের বাংলায় এই বিসি শব্দটার অর্থ সম্ভবত বেশি অ্যাপ্রপ্রিয়েট!) যেটা হচ্ছে বিফোর ক্রাইস্ট। অনেকে ভাবে জিসাসের সারনেম ক্রাইস্ট। আরে বাবা, তা নয়, ক্রাইস্ট মানে সেভিয়ার। এডি বললে আমাদের ডমিনেটরের বছর, বিসি বললে আমাদের সেভিয়ারের আগে! বোঝো!
তো এডি জিনিসটা পেছতে পেছতে ব্যাক ক্যালকুলেট করে শূন্যে পৌঁছে যাওয়া যায়, কিন্তু জিরো এ ডি নেই! থাকবে কী করে? রোমানরা জিরো লিখতে পারত না। ওদের I-II-III-IV-V-VI-VII-VIII-IX-X সিস্টেমে জিরো কোথায়? জিরো-সমেত ভারতীয় সংখ্যাপদ্ধতি লেখা ইওরোপে চালু করেছিলেন লিওনার্ডো ফিবোনাচ্চি – যার নামে ফিবোনাচ্চি সিরিজ, যেটা আপনারা দা ভিঞ্চি কোড-এ পড়েছেন বা দেখেছেন। এই ফিবোনাচ্চি সেই পদ্ধতি শিখে এসেছিলেন মিশর থেকে, যেখানে এর আরবি অনুবাদ নিয়ে গেছিল ব্যবসায়ী আরবরা। ভারত থেকে আরবে যাওয়া ভারতীয় সংখ্যাপদ্ধতি আরবিতে অনুবাদ করেছিলেন আল-খোয়ারিজমি, সেই বইয়ের নাম হিসাব-আল-হিন্দ্। একেই ইওরোপিয়ানরা নাম দেয় অ্যালগোরাসমাস, তাঁর নামেই চালু হয় অ্যালগরিদম্ শব্দটা। আসল অ্যালগরিদম পুরোটাই ভারতীয়, বহু শতবর্ষ পূর্বে নির্মিত ও বহু পরবর্তী টীকাকারদের হাতে বর্ণিত ও সংস্কৃত। ফিবোনাচ্চির বহু বছর আগে অবশ্য ৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে গেরবার্ট, যিনি পরে হয়েছিলেন পোপ সিলভেস্টার, করডোবা থেকে আল-খোয়ারিজমির অনুবাদ ইওরোপে নিয়ে গেছিলেন, কিন্তু জিনিসটা দেখে ঠিক বোঝেননি, তাঁর মনে হয়েছিল ওটা আরবি ম্যাজিক। ফলত ভারতীয় সংখ্যালিখন পদ্ধতির নামকরণ হয়ে গেল অ্যারাবিক নিউমেরালস।
আমরা যাকে বছর বলি, যার ইংরাজি ইয়ার, তার আবার সাইডেরিয়াল আর ট্রপিক্যাল দুটো ব্যাপার আছে। আর্যভট ক্যালকুলেট করেছিলেন সাইডেরিয়াল ইয়ার – সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে পৃথিবীর যা সময় লাগে, সেটা। ট্রপিক্যাল ইয়ার মানে এক ইকুইনক্স থেকে পরবর্তী ইকুইনক্সের অন্তর্বর্তী সময়।
ক্যালেন্ডারের ইতিহাস অতিশয় চমকপ্রদ। সেটা জানলে গ্রেকো-রোমান সভ্যতার বিশাল বিশাল গণিতবিদদের অন্তঃসারশূন্যতা চোখের সামনে চলে আসে ম্যাজিকের মতো। ব্যাটারা শুধু ফাঁকা বুলিই আউড়ে যায়নি, পাটিগণিত-বীজগণিত-ত্রিকোণমিতি এসব বুঝত না। ইউক্লিডের পুরোটাই ঢপবাজি, ইউক্লিড নামে আসলে কেউ ছিল না।
কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে ক্যালেন্ডারের। আপনারা নিশ্চয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার – এইসব শুনেছেন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার জুলিয়াস সিজারের নামে। তিনি মিশর দখল করেছিলেন এখনকার হিসাবে ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ঢাকঢোল পিটিয়ে সে সময় চালু করা হল নতুন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। কিন্তু চালু যে করবে, উপযুক্ত লোক কোথায় তার? মিশরের এক জ্যোতির্বিদ সসিজেনেস-কে ধরে সেই ক্যালেন্ডার তৈরি করিয়ে নেওয়া হল। এর জন্যে কী করার দরকার হল? সসিজেনেস গণনা করে বললেন, আপনাদের ক্যালেন্ডার আগে যিনি করেছিলেন, তিনি তো পুরোটাই ধেড়িয়ে রেখেছেন। এখন ইকুইনক্স মেলাতে হলে এই বছরটাকে ৪৪৫ দিনের করতে হবে! লে হালুয়া!
এই ঘাপলা কেন? কেননা পৃথিবী ঠিক ৩৬৫ দিনে একবার করে তো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে না, সময় লাগে তার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি। প্রায় ছ’ ঘন্টার মতো বেশি। কিন্তু এই ফ্র্যাকশন যে হিসাবে আনবে, রোমানদের সংখ্যা-লেখার পদ্ধতিতে ফ্র্যাকশন লেখার উপায় কোথায়? নেই। কোনোকালে ছিল না।
সসিজেনেস পরামর্শ দিলেন তিন বছর বাদ দিয়ে দিয়ে বছরে একদিন অতিরিক্ত যোগ করতে, সেটাই লিপ ইয়ার। কিন্তু জিনিস সিম্পল হলেই যে সেটা মাথায় ঢুকবে, এমন তো না। ফলে এই সামান্য জিনিসটা চালু করতেও ধেড়াতে লাগল তারা। সেটা নজরে এল বেশ কিছু বসন্ত পেরিয়ে গেলে।
দেখেছেন, সামান্য একটা জন্মাষ্টমীর তারিখ নিয়ে বলতে গিয়ে কোত্থেকে কোথায় চলে এলাম! স্যরি। ২০২১ এডি সম্বন্ধে বলা হয়ে গেছে। বাকি আছে ৩০শে অগাস্ট অংশটুকুর ব্যাখ্যা। সেটা দিয়েই আপনাদের অব্যাহতি দেব।
সসিজেনেস শুধু ঐটুকু না, বলেছিলেন ১২ মাসে ৩৬৫ দিন করতে হবে তো? তার মানে গড়ে ৩০ দিন, পাঁচখানা মাসে ৩১ দিন। তাঁর পরামর্শ ছিল অল্টারনেট মাসে ৩১ আর ৩০ দিন করে মাস। এর অর্থ মাস বস্তুটার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কেন ৩১ দিন, কেন ৩০ দিন? ইস্টারের দিন ফিক্সড হলেই হল।
তো সেটাও হল না। দুটো লিপ ইয়ারের মধ্যে গ্যাপ তিন বছর না, চার বছর, এটা বুঝতেই অনেক সময় চলে গেল। এসে গেল অগাস্টাস সিজারের শাসনকাল। তিনি বললেন, এ নিয়ম চলবে না, হটাও। নতুন করে আবার ক্যালেন্ডার সাজানো হল। অগাস্টাস সিজার বললেন, জুলিয়াস সিজারের নামে জুলাই মাস, আমার নামেও মাস রাখো। ফলে তৈরি হল নতুন মাস – অগাস্ট! জুলাই-এর পরেই সেটা, সসিজেনেসের নির্দেশ অনুযায়ী সে মাস ৩০ দিনে হওয়ার কথা। সিজার বললেন, কিঁউ? ম্যায় জুলিয়াস সিজার সে ছোটা হ্যায় ক্যা? ফলে ওটাও জুলাইয়ের মতোই ৩১ দিনে করতে হল। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। এই গ্যাঁড়াকলে বেচারি ফেব্রুয়ারির হাত-পা কেটে ছোটা করে দেওয়া হল। সে শিশু হয়ে গেল ২৮ দিনের। লিপ ইয়ার এলে ২৯ দিন।
৩০শে অগাস্টই অগাস্টের শেষ দিন হওয়ার কথা ছিল, এর ফলে এক দিন বেড়ে গেল, এর মাহাত্ম্য বোঝা গেল আশা করি। ৩০, অগাস্ট, ২০২১ এবং এডি – এই চারটে অংশই ধাপ্পাবাজি। এর মধ্যে সায়েন্স কাঁহা? সবই তো মামদোবাজি।
কথা অনুযায়ী এখানেই ইতি করে দিতে হয়। আর সামান্য একটু বলে নিই। এই ক্যালেন্ডারও চলেনি। এর পরে এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। কিন্তু গ্রেগরি তো পোপের নাম। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের রিফর্মজাত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মূল হোতা ক্লাভিয়াস। কিন্তু ক্লাভিয়াস বা তাঁর দলবল কি কোনো পরীক্ষা করে এই রিফর্মের নিদান দিয়েছিলেন? দিলে সেই পরীক্ষাগুলো কী ছিল? উত্তর হচ্ছে – না, কোনো পরীক্ষা করে নয়, তাঁরা এই রদবদল সম্ভব করেছিলেন বাইরে থেকে ডকুমেন্ট নিয়ে এসে। সমকালীন জ্যোতির্বিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন টাইকো ব্রাহে, কিন্তু তাঁর কাছে এমন কিছু ছিল না, যা দিয়ে এইসব সূক্ষ্ম পরিমাপ করা সম্ভব। এমনকি স্যার আইজ্যাক নিউটনও বলেছিলেন এ হচ্ছে পোপের ঘাপলা! তাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে এ নিয়ম চালু হয়।
এই বাইরে থেকে ডকুমেন্ট এনে যে একটা নতুন নিয়ম চালু করা হল, সেই বাইরেটা কোথায়?
একটা ছোট্ট ক্লু দিই। ক্লাভিয়াসের ছাত্র মাত্তেও রিচ্চি জেসুইট পাদ্রি হয়ে কেরালায় এসেছিলেন ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা ও সময় গণনা সংক্রান্ত যাবতীয় গ্রন্থাদি ল্যাটিনে অনুবাদ করে রোমে পাঠানো। কেরালা চার্চে রক্ষিত তাঁর একপিস চিঠির খসড়ায় লেখা আছে – Brahmane muito intelligente que saiba as cronicas dos tiempos, dos quais eu procurarei saber tudo. অস্যার্থ, বুদ্ধিমান ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে সময়-সংক্রান্ত ও অন্যান্য গণনা শিখছি। জাহাজ ভর্তি বইপত্তর চলে গেছিল ক্লাভিয়াসের কাছে রোমে ও পরে তার আশেপাশে। ১৬০৮ সালে ক্লাভিয়াস হঠাৎ ত্রিকোণমিতির টেবিল পাব্লিশ করে ফেললেন, যে টেবিল তৈরি করেছিলেন কেরালা অ্যাস্ট্রনমির গণিতবিদরা।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর তারিখ বাদ দিন, আমরা যখনই যে-কোনো তারিখ বলি, যার মধ্যে একটা হচ্ছে নিজের জন্মসালটাও, যে দিনটা আমার নিজস্ব একটা আইডেন্টিটিও বটে, তখনই সেই সংখ্যার মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে একটা বিশ্বাস, যে অত বছর আগে কোনো এক মহৎ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, যার বিন্দুমাত্র প্রমাণ নেই। পুরোটাই একটা ধোঁকা। আর তারিখ জিনিসটার ব্যবহার এত বেশি যে ‘আদ্যন্ত মিথ্যাও বহু ব্যবহারে সত্য’ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা ওতেই হয়ে যায়। নিউ ইয়ার কবে, সেটা কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না, ক্রিসমাস কবে, সেটাও না, অথচ কবে দোল, কবে দীপাবলি, আমাদের নিজস্ব উৎসবের তারিখের জন্যেও আমরা পরমুখাপেক্ষী।
ব্যাঙ্কের bad debt-কে ধরা হয় আপদ, পৃথিবীব্যাপী এই bad date-কে কী বলা উচিত? সায়েন্স, যুক্তি, সেক্যুলারিজম, ব্লা ব্লা ব্লা …
৩১শে অগাস্ট ২০২১
শ্রী অমিতাভ প্রামাণিক