নাগরিকত্ব বিল সংসদের দুই সভায় পাশ করানোর পর বিষ্যুদবার রাতে তাতে সইও করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তা এখন আইনে পরিণত হয়েছে। এবার তা নিয়ে বাংলায় বিজয়োৎসব করতে চান দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়রা। সেই সঙ্গে আরএসএস এবং তাদের অনুগামী সব সংগঠন কোমর বেঁধেছে ঘরে ঘরে নাগরিকত্ব আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দিতে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে বাংলায় নিমন্ত্রণ করে একটা বড় সভা করার পরিকল্পনাও করছে গেরুয়া শিবির।
সম্প্রতি বাংলায় তিনটি আসনে উপনির্বাচনে ডাহা হেরেছে বিজেপি। তার পর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলতে শুরু করেছেন, এনআরসি তথা নাগরিক পঞ্জিকরণ নিয়ে বিভ্রান্তির খেসারত দিতে হয়েছে বিজেপিকে। যদিও বাস্তবে এর সত্যতা কতটা তা স্পষ্ট করে কেউই বলতে পারছেন না। কেন না উপনির্বাচনে এও দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুরে লোকসভার তুলনায় ভোট বেড়েছে বিজেপির।
বিজেপি সূত্র বলছে, এনআরসি নিয়ে যদি বিভ্রান্তি থাকেও সংসদে ক্যাব পাশ করানোর পর তা কাটানো এবং হিন্দু শরণার্থীদের আস্থা অর্জন এখন দলের বড় লক্ষ্য। কলকাতায় এসে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই প্রতিশ্রুতি ৬ মাসের মধ্যে পালন করে দেখিয়েছে মোদী সরকার। বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে দলও। এবার মানুষের কাছে পরিষ্কার করে বিষয়টি পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। দলের এক নেতার কথায়, তৃণমূল সমূহ বিপদ দেখে মানুষের মধ্যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক জিইয়ে রাখতে চাইছে। বিজেপি ও আরএসএস কর্মীরা চাইবেন সেই আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষকে আশ্বস্থ করতে ও তাদের নাগরিক অধিকার পাইয়ে দিতে। সুতরাং রাজনৈতিক সংঘাতও অনিবার্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “লিফলেট-পুস্তিকা প্রকাশ করে মানুষের কাছে গোটা আইনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হবে। নাগরিকত্ব পেতে যে রেশন কার্ড বা সে ধরনের কোনও নথি লাগবে না—তাও জানানো হবে বিশদে। বিভ্রান্তির লেশমাত্র যাতে না থাকে।” মেদিনীপুরের সাংসদ আরও বলেছেন, “কেউ কেউ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমরা মানুষের কাছে গিয়ে বলব, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই আইনের মাধ্যমে সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।” কী ভাবে নাগরিকত্ব পেতে হবে, তার কী প্রক্রিয়া সেটাও বিজেপি কর্মীরা শিবির করে মানুষকে সাহায্য করবে বলে জানান দিলীপ ঘোষ।
শনিবার লখনউয়ে বিজেপির বৈঠক রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই বৈঠক থেকেই সারা দেশে একটি অভিন্ন কর্মসূচিরও ডাক দেওয়া হতে পারে। শুধু বিজেপি নয়। বিশ্বহিন্দু পরিষদ, আরএসএস, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ গেরুয়া শিবিরের সমস্ত সংগঠন এই কর্মসূচিতে নামছে বলে খবর। ইতিমধ্যেই বাংলায় উদ্বাস্তু এলাকায় প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। শুক্রবার যাদবপুর এলাকায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি সভা রয়েছে। তা ছাড়া উত্তর চব্বিশ পরগণা, নদিয়া, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ইত্যাদি জেলায় উদ্বাস্তু এলাকায় ধারাবাহিক প্রচারের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি।
গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, ডিসেম্বর মাসের শেষেই বাংলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এনে সংবর্ধনা দিতে পারে রাজ্য বিজেপি। যাতে তিনি জনসভা করে বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারেন। তবে এরই মধ্যে একটি নতুন সংকটও মাথা তুলেছে। সংসদের ভাষণে অমিত শাহ বলেছিলেন, “মমতা দিদি যতই বাধা দিন বাংলায় এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন—দু’টোই কার্যকর হবে।” কিন্তু এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আইন পাশ হলেই হল না। কার্যকর তো করবে রাজ্য সরকার। বাংলার সরকার করবে না, করবে না, করবে না।”
এই দ্বৈরথের পরিস্থিতিতে কোথাকার জল এখন কোথায় গড়াবে সেটাই দেখার।