পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা, আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন-ভোকাট্টা,মাচা গান, আকাশ জোড়া ঘুড়ি, চাইনিজ মাঞ্জা, মন্ডপের সামনে কর্মঠ মাতাল ছাড়াও কিছু ভূত দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বকর্মা ভূত। সাহাগঞ্জ বাজারের কথা মনে আছে? গমগম করতো একসময়। এখন ভূত ঘুরে বেড়ায়? ভূত বাজার করে? মৃত শ্রমিক? মেলে?
সাধারণ মানুষ যারা রিক্সাওয়ালা চারগুন ভাড়া চাইছে বলে খিস্তী করে, শপিং মলে মিনারেল ওয়াটার সহ রাম ফুচকা খেয়ে বমি করে, বিকট জোরে গানওলা ডিস্কে যায় গলা অব্দি মদ খেতে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভাসানের নাচ নাচতে, তারা ওই ভূত দেখতে পারেনা।
এই ভূত গুলো ঘুরে বেড়ায় উষা কারখানার সাইরেনের চারপাশে। এখন যে জমিতে সাউথ সিটির সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাট বাড়িটার সবচেয়ে উঁচু ছাদ উঠেছে। কিংবা বাটা কারখানার গেটে। যেখানে এখন বহুতল আবাসন। ভূত বসত করে হাওড়া, হুগলি, নৈহাটি, ব্যারাকপুর চত্বরে। চটকলে, মেটালিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং নাম শুনলেই।
ঝুপ করে ঢুকে পরে জয় ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টাফ কোয়াটারে। দয়াল বিশ্বকর্মা যে ঘরটায় গলায় দড়ি দিয়েছিল। কিংবা নর্থব্রুকের ওই অফিস ঘরটার সামনে যেখানে পিটিয়ে মারা হয়েছিল ম্যানেজার হরেকৃষ্ণ মাহেশ্বরীকে। অথবা ডুয়ার্স চা বাগানে। হাড় গিলগিলে, গা ছমছমে। একটু সাদা ভাত নুন দিয়ে পেলে কাঁমড়া কাঁমড়ি করে খাবে।
প্রতি দুর্গা পুজোর আগে লকআউট হয়ে যেত কারখানা, একদিন তালা মেরে দিল সাহেব। কেউ চাকরি করে না, কেউ না। বাড়িতে ২৩ বছরের মেয়েটা একদিন বোম্বে পালালো এক দালালকে বিয়ে করে। টাকা পাঠাতো প্রথম প্রথম, তারপর বন্ধ। বিশ্বকর্মা ভূত হতে গেলে প্রথমে হতে হয় টিবি। তাই হল। তারপর চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা, অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য না করতে না পেরে একদিন অপঘাতে মৃত্যু।
বিশ্বকর্মা সৌখিন বাঙালির অরুচি। তার ওপর আবার ভূত। কোন ইতিহাস বই, নিষিদ্ধ ইস্তেহার, সরকারি গেজেটে এদের উল্লেখ নেই। থাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ, চপ শিল্প, শ্রমিক অসন্তোষ, ভিনদেশে কাজের খোঁজে পাড়ি।
বিশ্বকর্মা ভূতেরা অতৃপ্ত আত্মা হয়ে বন্ধ কল কারখানা, ফ্যাক্টরি, জুটমিলগুলোতে, ভারি শিল্প ছিল যা কিছু ছিল তার আশেপাশে খালি পায়চারী করে। “কোন বৃদ্ধি নেই, কোন বৃদ্ধি নেই” বলে ফিসফিস করে। তারপর সেই সব কারখানার জমি যেদিন গুড়িয়ে উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ি বা শপিং মল হয়ে ওঠে সেদিন ভ্যানিশ হয়ে যায়। বিশ্বকর্মা পুজোও তো প্রায় ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব কর্মাদের মতো৷ পরে থাকছে কিছু অকর্মা একে অপরকে দোষারোপ করছে, কার আমলে কী কারখানা বন্ধ হয়েছে, কে বন্ধ করেছে!
©——- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ