পশ্চিমবঙ্গের প্রসূতি মায়েদের জন্য রাজ্য সরকার এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে প্রসবের সময় প্রসূতি মায়ের সঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারবে তাঁর মা কিংবা স্বামী।এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর।
রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের বক্তব্য, প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভরতির সময় থেকে প্রসবের সময় পর্যন্ত লেবার রুমেও থাকতে পারবেন অন্ত্বঃসত্তার নিকট আত্মীয়। মা কিংবা মাতৃস্থানীয়া একজন থাকতে পারবেন প্রসূতির সঙ্গে। তবে প্রসূতি যদি ইচ্ছাপ্রকাশ করে তবে লেবার রুমে তাঁর স্বামীও হাজির থাকতে পারেন।
এতদিন বিদেশে এবং রাজ্যে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে মূলত প্রসব সাথীর সুবিধা পাওয়া যেত। তবে এখন থেকে রাজ্য সরকারের সমস্ত হাসপাতাল, মাতৃসদন এমনকী, জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও প্রসব সাথীর সুবিধা মিলবে।তবে শুধুমাত্র ‘নরম্যাল ডেলিভারি’র সময় এই সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে সিজারিয়ান প্রসবের ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে না।
স্বাস্থ্যভবন মারফত খবর, প্রসব সাথীদের ব্যাজ বা কার্ড দেওয়া হবে। ব্যাজ দেখিয়ে তিনি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে বা হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন। প্রসূতির সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন তিনি। প্রথমে হাসপাতালে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম ফিলাপ করে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে লিখে ফর্মটি জমা দিতে হবে। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হলে তবেই হওয়া যাবে প্রসব সাথী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ফার্টিলিটি রেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমের দিকে। নরমাল ডেলিভারি হাতে গোনা। সেই তথ্য উঠে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার।তাই রাজ্য জুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে কেন মাত্রাতিরিক্ত সিজারিয়ান বেবি? আদৌ কি সি-সেকশন ডেলিভারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজারিয়ান হওয়ার পর দ্বিতীয় গর্ভধারণের মায়ের শরীরের নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশজুড়ে বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের ডেলিভারির (Cesarean Delivery) ট্রেন্ড। সিজার করার তালিকায় অনেকটাই উপরের দিকে রয়েছে বাংলা। MFHS-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে দেশজুড়ে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির হার ১৭% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৫%। এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সেই হার বেড়েছে ৩৪%। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছে ১০ থেকে ১৫%-র বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজনই পড়ে না গর্ভবতী মায়েদের। শিশুমৃত্যুর হারও এই কারণেই বাড়ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই বাংলায় সেই পরিস্থিতির বদল আনতে এই অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।