প্রাণ-রসায়নবিদ বীরেশচন্দ্র গুহর আজ জন্মদিন। ১৯৬২ সালের ২০ মার্চ ৫৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ১৯০৪ সালের ৮ জুন ময়মনসিংহে তার জন্ম। পিতার নাম রাসবিহারী গুহ।
তাদের আদি বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়ায়। মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত তার মাতুল। বীরেশ চন্দ্র গুহ কলকাতার শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালা থেকে ১৯১৯ সালে প্রবেশিকা ও সিটি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
কিন্তু বিএসসি পড়ার সময়ই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে ১৯২১ সালে তিনি কলেজ হতে বিতাড়িত হন। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে ১৯২৩ সালে রসায়নে অনার্সসহ প্রথম স্থান অধিকার করে বিএসসি পাশ করেন।
১৯২৫ সালে এমএসসিতেও প্রথম হন। ছাত্রাবস্থায় ঘোষ ট্রাভেলিং বৃত্তি লাভ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন। এমএসসি পাঠের সময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সংস্পর্শে আসেন।
আচার্যের বিজ্ঞানের প্রতি অবদান, নিঃস্বার্থ আদর্শবাদ ও স্বদেশেপ্রেম পরবর্তীতে তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। পড়াশোনা শেষে এক বছর বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করার পর ১৯২৬ সালে তিনি টাটা স্কলারশিপ
পেয়ে বিলেত যান।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি এবং ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ষণ্ডের যকৃতের মধ্যে ভিটামিন বি ২ এর অস্তিত্ব অনুসন্ধান। এরপর কেমব্রিজের বিখ্যাত প্রাণ-রসায়নবিদ এফ. সি. হপ্ কিন্সের অধীনেও তিনি গবেষণা করেন।
১৯৩২ সালে দেশে ফেরার পর কিছুদিন আবার বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করেন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগে প্রধান অধ্যাপকের পদ পান। ১৯৪৪ সালে ভারত সরকার তাকে খাদ্যদপ্তরের প্রধান টেকনিক্যাল উপদেষ্টাপদে নিযুক্ত করেন।
১৯৪৮ সালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের সভ্য হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে পুনরায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং আমরণ অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে লিপ্ত থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে গমবীজ থেকে ভিটামিন নিষ্কাশন, অ্যাস্করিক অ্যাসিড অথবা ভিটামিন সি
বিষয়ে গবেষণা করেন।
উদ্ভিদ কোষ থেকে অ্যাস্করবীজেন
বিশ্লেষণে তিনি ও তার সহযোগীরা মৌলিক কৃতিত্ব দেখান। ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষের সময়ে ঘাস-পাতা থেকে প্রোটিন বিশ্লেষণের গবেষণা শুরু করেন এবং মানুষের খাদ্যে এই উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিশ্রণের নানা পদ্ধতি দেখান।
মূলত বীরেশচন্দ্র গুহর প্রয়াসে ভারতে প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞান ও জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেকারণে তাকে ভারতের আধুনিক প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞানের জনক নামে আখ্যা দেয়া হয়। ১৯৪৪ সালে ৪১ বৎসর বয়সে বিখ্যাত সমাজসেবিকা ড. ফুলরেণু গুহকে তিনি বিয়ে করেন।
এরা দুজনেরই সমাজ সেবা সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্গীত চিত্রকলার প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল। তিনি কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ার হতে সংস্কৃত, বাংলা বা ইংরেজিতে কবিতা আবৃত্তি করে বন্ধুদের প্রায়ই মুগ্ধ করতেন। ড.ফুলরেণু গুহ স্বামীর ইচ্ছানুসারে ১৯৭২ সালে স্বোপার্জিত অর্থ ও তাদের বালিগঞ্জস্থিত বৃহৎ অট্টালিকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাণ-রসায়ন বিষয়ে গবেষণার জন্য দান করেন।
বর্তমানে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের The Guha Centre for Genetic Engineering and Biotechnology (GCGEB)।