শ্রী স্বামীনাথন গুরুমূর্তি পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। উনি রাষ্ট্রীয় সয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রবীণ চিন্তক, সাপ্তাহিক তুঘলক পত্রিকার সম্পাদক, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চে সহ-আহ্বায়ক এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর। তিনি সম্ভবতঃ একমাত্র ভারতীয় অর্থনৈতিক বিশ্লেষক যিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) বহুপাক্ষিক চুক্তির প্রথম দিন থেকেই ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ মডেল অর্থাৎ সবার জন্য একমাপের পোশাক, এই তত্ত্বের বিরোধী ছিলেন। স্বদেশি তত্ত্বকে যারা বিকল্প ভাবেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে উনি বলেন, এই মডেল বিকল্প নয়, এটাই ভারতের মাটির বাস্তব। বরং অবাস্তব বিকল্প তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে পঁচিশ বছর আগে। বহু শিল্পোদ্যোগী, শিল্পকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও অনাবাসী অনলাইন এই সভায় যোগদান করেন ও বক্তৃতার পর তাদের প্রশ্ন করেন।
প্রতিবেদন শুরু করার আগে বলি, ইন্দিরা গান্ধীর বদ্ধ অর্থনীতি তথা নেহরুবাদী মিশ্র অর্থনীতির সঙ্গে গুরুমূর্তিজী বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের স্বদেশি মডেলকে যাঁরা মেলানোর চেষ্টা করে পুরো তত্ত্বকে লঘু করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের শুরু করার আগেই বিনীতভাবে বলি, এই দুই মডেলের মধ্যে আকাশ আর পাতালের পার্থক্য। নেহেরু-গান্ধীরা লাইসেন্স রাজ, কোটা রাজের মাধ্যমে দেশের ৯৯.৯৯% নাগরিকের শিল্প ও বাণিজ্যের উদ্যোগের মেধাকে বন্দি বানিয়ে রেখেছিলেন, যেখানে মোদী সরকার মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অসংগঠিত ক্ষেত্রকে মুদ্রা ঋণের আওতায় এনে দেশের অর্থব্যবস্থার মূল স্রোতে এনেছেন। আরেকটি বড় পার্থক্য, নেহেরু-গান্ধীরা সোভিয়েত ছাড়া প্রায় সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখে চার দশক এবং স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর (রাজীব গান্ধীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর প্রাক্কালে) দেশ প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছিল। গুরুমূর্তিজী সারা বিশ্বের জন্য বাণিজ্যের রাস্তা খোলা রাখতে বলছেন যারা আমাদের সমমনোভাবাপন্ন; কিন্তু একনায়কতান্ত্রিক, অসৎ দেশ বাদে।
আলোচনার শুরুতে উনি কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। ভারত কি উৎপাদক দেশ হিসেবে চীনের জায়গা নিতে পারবে? আমাদের কি সেই শিল্পোদ্যোগ ক্ষমতা আছে? কোভিড সমস্যা বিশ্বের যে পরিবর্তন আনবে, তাতে আমাদের জায়গা কোথায়? উনি শুরু করেন, যেকোন বড় ঘটনার কারণ ও ফলের কোন সম্পর্ক থাকে না। উনি এক্ষেত্রে বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ টানেন। যেখানে যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যে কোন সামঞ্জস্য নেই। আলোচনায় উনি প্রথমে কিছু প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
এক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গত পঁচিশ বছরের ওয়ান সাইজ ফিটস মডেলের দিন শেষ। অর্থাৎ সব দেশের অর্থব্যবস্থা, বাণিজ্য, শিল্প তথা উন্নয়নের সোপান এক সূত্রে গাঁথা হবে না।
দুই, ঔপনিবেশত্ব, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র যথাক্রমে ২০০, ১০০ ও ৫০ বছর টিকেছিল, যদিও সবাই ভেবেছিলো এরা অমর। ঠিক তেমনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কেন্দ্রিক বিশ্বায়নকে ধ্রুবসত্য ধরা হয়েছিল এবং তা পঁচিশ বছরেই শেষ।
তিন, বিশ্বায়ন সারা বিশ্বের চিন্তার ফসল ছিল না। কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ও দেশের ছিল। ভাবা হয়েছিল এই পথ একমাত্র আদর্শ, যা কিনা দ্বন্দ্বহীন পৃথিবী উপহার দেবে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিস্পত্তি কমিটিতে আমেরিকা, জাপান ও ভারত তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বায়ন গুরুত্ব হারিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুগের আবাসনের ঘণ্টা বেজে গেছে।
চার, গ্লোবাল সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে একনায়কতান্ত্রিক দেশের সুবিধা গণতান্ত্রিক দেশের চেয়ে বেশী। যেদেশের সঠিক শ্রমিক আইন, পুনর্বাসন আইন বা বিচার ব্যবস্থা নেই, সে তো কম খরচে উৎপাদন করবেই। সেখানে, গণতান্ত্রিক দেশের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এই প্রতিযোগিতা অসম, একপেশে ও অসম্ভব।
এবং সেইজন্য কোভিড পরবর্তী বিশ্বে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নতুন অর্থ ও বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রস্তাবনা হবে। ২০০৫-এ জি২০ দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানরা ওয়ান সাইজ ফিটস অল মডেল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০০৮-এর আর্থিক মন্দার পর সবাই এই ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হয়। কিন্তু ভারতের বিশেষজ্ঞ, সংবাদমাধ্যম কিংবা রাজনৈতিক কর্তারা নির্বাক থাকে।
২০১৪-তে নীতি আয়োগ তৈরির সময় ওয়াল সাইজ ফিটস অল মডেল খারিজ করে স্বদেশি তত্ত্বকে গ্রহণ করে। কিন্তু গুরুমূর্তিজীর মতে, আমাদের দেশ এক কথায় পুরোনো মডেল পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করতে ব্যর্থ হয়। এখানে উল্লেখ্য, যারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ব্যষ্টিক অর্থনীতির (মাইক্রো ইকনমিক্স) বিভিন্ন মানদণ্ড বের করেছেন, তারা নিজেরাই ২০০৮-এর পর বিপদে পড়ে তাদের নির্দেশিকা অমান্য করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিতে থাকে অর্থাৎ টাকা ছাপাতে থাকে। এদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপান আছে। অথচ বাকি বিশ্বকে তারা টাকা ছাপাতে নিষেধ করে। এছাড়াও, রাজস্ব ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমার ব্যাপারে যে মানদণ্ড তারা বানিয়ে দিয়েছে, যার কোন তাত্ত্বিক ভিত্তি নেই। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ঊর্ধ্বসীমা কখনো এক হতে পারে না। কিন্তু ভারত মুখ বুজে এই সব মেনে নিয়ে এসেছে। এমনকি নিজেদের মধ্যেও কোন আলোচনার অবকাশ দেয়নি কেউ। আজ সংকটের মুহূর্তে এই কথা মনে পড়ছে।
এই প্রসঙ্গে উনি আমাদের দেশের আর্থসামাজিক সংস্কৃতি ও বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু প্রস্তাব দেন যা তার অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনীশক্তির উৎকর্ষতার পরিচায়ক। উনি বলেন, ভারতের অর্থব্যবস্থা বাজারভিত্তিক নয়, এটা ব্যাঙ্কভিত্তিক। আমাদের শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানি ৫% জিডিপি দেয়। অথচ আনলিস্টেড ও এমএসএমই ৫০% জিডিপি ও ৮০% চাকরি দেয়। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের ব্যাঙ্কগুলো এখনো বেসিল রুল মানে, যা উন্নয়ন ব্যাঙ্কের জন্য প্রযোজ্য নয়, শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ওদিকে আমরা উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে যুক্ত করে দিয়েছি। যার ফলে উন্নয়ন ব্যাঙ্ককে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের নিয়ম মানতে হচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য, ১৯৯৮-এ যেখানে টার্ম লোনের পরিমাণ ৮% ছিল, এখন তা ৫৮%। যত ভালো কোম্পানিই হোক, তিন মাস ঋণ শোধ করতে না পারলে, সে খেলাপকারী (ডিফল্টার) হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, দেশে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গত বছর ব্যাঙ্কগুলি তাদের ১১ ট্রিলিয়ন জমা টাকার ৬ ট্রিলিয়ন রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা করে এসেছে। এক্ষেত্রে এই খেলাপকারী কোম্পানিগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের অন্ততঃ একবার ঋণ পুনর্বিন্যাসের (রিস্ট্রাকচারিং) সুযোগ করে দিতে হবে বলে উনি পরামর্শ দিয়েছেন।
এরপর উনি ক্রেডিট সুইসের এশিয়া ইকুইটি ডিভিশনের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেন, চীনের বিভিন্ন অসচ্ছতার দরুন, আমেরিকা ও তার কিছু সহযোগী দেশ চীনের উপর ট্রেড স্যাংশন জারি করে এবং এর ফলে চীন থেকে 50 কোটি ডলারের পুঁজি বেরিয়ে এসেছে। এর একটা বড় অংশ ভারতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৩-তে যেখানে ভারত পঁচিশ কোটি মোবাইল সেট আমদানি করতো, ২০১৯-এ তা কমে শূন্য হয়ে গেছে।
উনি আরও বলেন যে, সামাজিক ব্যবস্থাকে উন্নয়ন মডেলের অংশ হিসেবে ধরতে হবে। জামনগর, মরবি, লুধিয়ানা, পাতিয়ালার বিভিন্ন এমএসএমই উৎপাদন কেন্দ্রে ঘুরে তিনি দেখেন, বিনিয়োগকারীরা ব্যাঙ্ক থেকেও ধার নেননি, স্টক এক্সচেঞ্জ তো দূরের কথা। আত্মীয়-পরিজন বন্ধুরাই তাদের পুঁজির উৎস। এখানে উনি বলেন, আমাদের বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে হবে। বাস্তবসম্মত মডেল বানাতে হবে যা দেশে চলছে। বিদেশ থেকে চাপানো কোন মডেল এখানে চলবে না। ভারতের যুবকদের মেধা, প্রযুক্তিজ্ঞান শিল্পোদ্যোগ ও সর্বপরি সামাজিক বন্ধন আমাদের পুঁজি।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হলে তিনি বিভিন্ন বক্তার প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুরু করেন। এমএসএমই বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই শিল্পের উন্নতি চাইলে, সরকারকে একনায়কতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে পুরো ক্ষেত্রকে সুরক্ষা দিতে হবে। যারা কোন শ্রমিক আইন, পুনর্বাসন আইন মানে না তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অসম্ভব। এক্ষেত্রে উনি মোবাইল ও অটোমোবাইল শিল্পের গত চার বছরের সাফল্যের খতিয়ান আবার তুলে ধরেন। মেক ইন ইন্ডিয়াকে সফল করতে অনেক সাহায্য সরকার করলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে তাঁর মত। তিনি আশা করেন, এই সংকটে আরও সুরক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এমএসএমইর ক্ষেত্রে আরেকটা বড় সমস্যা তারা বড় কর্পোরেট ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প থেকে তাদের পাওনা পাচ্ছে অনেক দেরিতে। ফলে তারা তাদের পাওনাদার, ব্যাঙ্ক ও শ্রমিকদের পাওনা দিতে পারছে না। তিন মাস লোন শোধ করতে না পারলে, সে খেলাপকারী (ডিফল্টার) হয়ে যাচ্ছে। কর্পোরেট ও পিএসইউকে এর জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করার কথা ভাবতে হবে সরকারকে। ব্যাঙ্কেরও বড় লিস্টেড কর্পোরেশন এবং এমএসএমইর ঋণের ভিন্ন নিয়ম করা উচিত। সেই প্রস্তাব উনি সরকারকে দিয়েছেন।
সোনাকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় দেশের জন্য এই প্রশ্নের উত্তরে উনি বলেন, ভারতকে পাশ্চাত্য দেশের দৃষ্টিতে সোনাকে দেখলে হবে না। আমাদের দেশে আনুমানিক ৪০০০০ টন সোনা গৃহস্থদের কাছে আছে, যার অধিকাংশই কেউ প্রকাশ করে না সরকারের কাছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০০০ টন গহনা আকারে নেই। মুদ্রা বা সোনার বাট হিসেবে আছে। সরকার যদি ঐচ্ছিকভাবে জানানোর ব্যবস্থা করতে পারে, উপযুক্ত কর সুরক্ষা দিয়ে, তবে ৫০০০ টন সোনা সরকারের ঘরে এসে যাবে। ভারত লিকুইড অ্যাসেটের দিক থেকে বিশ্বের ধনীতম দেশ হতে পারে এবং টাকার মূল্য ডলার প্রতি ৭৫ থেকে ৪৫-এ নেমে আসতে পারে। সরকার এব্যাপারে ভাবছে।
সোনা, জমি, শেয়ারবাজার না বিদেশী মুদ্রা–কোন খাতে সঞ্চয় করা উচিত, এই প্রশ্নের উত্তরে উনি বিদেশী মুদ্রা ও শেয়ার বাজারে ঝুঁকি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে বলেন। চিরাচরিত জমি ও সোনাতে বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের পক্ষে সওয়াল করেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, শিল্পপতিদের বুঝতে হবে আগামী দিনে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যাবে না। তারা শ্রমিকদের সঠিক প্রাপ্য দিলে, তারা এই সংকটে তাঁদের গ্রামে ফিরে যেত না। আগামী দিনে, তাদের ‘উৎপাদনের যন্ত্র’ না ভেবে মানুষের সম্মান দিতে হবে। ত্রিপুরা ইত্যাদি উৎপাদন হাবে তারা তাদের শ্রমিককে ধরে রাখতে পেরেছে, কারণ তারা শ্রমিকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা যুদ্ধের উপর একটি প্রশ্নের উত্তরে উনি ব্যাখ্যা করেন, মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মুদ্রা এবং এর গুরুত্ব কমবে না। আমেরিকা আমদানি-উদ্বৃত্ত দেশ, যেখানে চীন, জাপান, ভারত এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রপ্তানি-উদ্বৃত্ত। যাদের আমদানি উদ্বৃত্ত, একমাত্র তাদের মুদ্রাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। ফলে এখানে আমেরিকার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী এখনো দেখা যাচ্ছে না। আমেরিকানরা বিদেশ থেকে জিনিস আমদানি করে, নিজের ডলার অন্যেকে গছিয়ে একে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আগামী দিনে যদি বিশ্বের বড় রকম কোন আর্থিক ক্রমের পরিবর্তন না হয়, তবে ডলারই রাজত্ব করবে।
রপ্তানির ব্যাপারে উনি বলেন, আমাদের পণ্য ও প্রযুক্তি দুইক্ষেত্রেই রপ্তানির ব্যাপারে জোর দিতে হবে। সেরা মেধাকে বডি শপিং থেকে এনে সত্যিকারের প্রযুক্তিমূলক শিল্পে কাজে লাগাতে হবে।
ভর্তুকি বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে উনি বলেন, যতদিন ধনী, দারিদ্র্যের মধ্যে পার্থক্য থাকবে, ততদিন গণতান্ত্রিক দেশে ভর্তুকি চলবেই। পাশ্চাত্য দুনিয়ার কৃষি ভর্তুকি ভারতের অনেক বেশী।
ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসা সম্পর্কে উনি বলেন, ছয় মাসের মধ্যে এরা ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগের চেয়ে এগিয়ে যাবে। তবে পরিবহন, হোটেল, বিনোদন, বৃহৎ খুচরো ব্যবসা তথা শপিং মল তাদের বাজার ৫০% থেকে ৬৭% হারাবে।
গ্রামীণ অর্থনীতি বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে উনি বলেন, সরকারকে দেখতে হবে চাষী যেন ফসলের দাম পায়। এব্যাপারে পাঞ্চজন্য পত্রিকা তাদের মনোভাব সরকারকে বিস্তারে জানিয়েছে। কোভিড পরবর্তী দুনিয়ায় শিক্ষা গ্রামীণ ভারতের আরও সহজলভ্য হবে। রাস্তা, সেচের ব্যাপারে প্রচুর কাজ চলছে। কিন্তু মূল সমস্যা ফসলের দাম, যা দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে উনি বলেন, এই সরকার মুদ্রা ঋণ দেবার জন্য অসংগঠিত ক্ষেত্র সংগঠিত হয়ে গেছে গত কয়েক বছরে। গত কয়েক বছরের বিশ্বজোড়া মন্দার বাজারে ভারতে বাঁচিয়ে দেয় এই তথাকথিত অসংগঠিত ক্ষেত্র ও মুদ্রা ঋণ।
এরপর গুরুমূর্তিজিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই অনলাইন সভা শেষ হয়। আজ আমি যখন গতকালের এই অনলাইন সভার উপর এই প্রতিবেদনটি লিখতে বসেছি, তখন প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে তার ভাষণে দেশবাসীকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে আহ্বান জানালেন, তাতে মনে হল, গুরুমূর্তিজির পুরো জীবনের চিন্তা, অভিজ্ঞতা আগামী দিনে দেশ গ্রহণ করে, স্বদেশি মডেলে এগিয়ে যাবার সংকল্প করে ফেলেছে।
অনুলেখন : সুদীপ্ত গুহ
(লেখক বহুজাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা ইউআরএস কন্সাল্টিঙ ইন্ডিয়ার ভূতপূর্ব চিফ জেনারেল ম্যানেজার)