বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখার্জীর সুযোগ্য সন্তান ছিলেন ভারতকেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। তিনি একধারে যেমন ছিলেন রাজনেতিক আর এক দিকে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, তিনি ভারতের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সংস্থার সভাপতি, সদস্য, চেয়ারম্যান হিসাবেও ছিলেন। তিনি যেমন রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ছিলেন তদ্রূপ ছিলেন একনিষ্ঠ সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য সেবক ছিলেন।
ডঃ মুখার্জীর জীবনের সবথেকে বড় অবদান হল, যা অকৃতজ্ঞ বাঙালীরা অবহেলার চোখে ফেলে রেখেছে, সেটা হল পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্থানের কবল থেকে বাঁচিয়ে আনা। যখন ইংরাজ চক্রান্ত , মুসলিম লীগের চক্রান্ত এবং জাতীয় নেতাদের গদীর লোভের বসে ভারত বিভাজন হচ্ছে। জিন্নার পাকিস্থান দাবিতে সকলেই যখন নতি স্বীকার করে নিয়েছিল, যেই সময় ১৯৪১ গান্ধীজী নির্দেশ দিয়েছিলেন যে বাংলার জনগণ যাতে জনগনণায় অংশ গ্রহণ না করেন, অথচ মুসলিম লীগের নির্দেশ ছিল যে বাংলার প্রতিটি মুসলিম নাগরিক যাতে জনগননায় অংশ নেয়, তখন ডাঃ মুখার্জী বিপদের আঁচ পেয়ে বাংলার নেতাদের বুঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু ঐ সকল কথা বুঝেও গদীর লোভের বসে সকলে মুখ বন্ধ রাখলেন, ফলস্বরূপ বিপদের আঁচ সত্যতাই প্রকাশ পেলো।
মুসলিম জনসংখ্যা ৫৮% হল , আর ফলে বাংলার বিভাজন নিয়ে আগুন আরও তীব্র হয়ে উঠলো। শুরু হল বৃহত্তর পাকিস্থানের পরিকল্পনা। কিন্তু ডঃ মুখার্জী থামবার পাত্র ছিলেন না তিনি বাংলার সকল জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যা তথ্য দেখিয়ে দাবী করলেন — “যদি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্থানে যাবে তা হলে বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্থানে কেন যাবে”? তিনি তীব্র বিরোধ শুরু করলেন, তাঁর যুক্তিকে তৎকালীন ইংরাজ সরকারও অস্বীকার করতে পারেনি। আর এরই ফলস্বরূপ আজ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্গত। অথচ পশ্চিমবঙ্গের এই স্রষ্টা কে অনেকই চেনেন না, আর যারা জানে তারা তারা এই সত্যকে অস্বীকার করে।
ডঃ মুখার্জীর ১৯৫২ সনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রর থেকে সংসদে নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ভারতের জাতীয়তাবাদী খন্ডতার প্রতীক, তাই তিনি কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা সম্পর্কে বলেছিলেন “”Ek desh mein do Vidhan, do Pradhan aur Do Nishan nahi challenge”।
তিনি ১৯৫৩ সনে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দেন, কিন্তু ভারত থেকে কাশ্মীরে প্রবেশ করার আদেশ না থাকার অপরাধের জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেখ্ আব্দুলার নির্দেশে ডঃ মুখার্জীকে ১১ মে ১৯৫৩ সনে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে তাঁর শারীরিক আসুস্থতার জন্য তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শোনা যায়, সেখানে তাঁর বারন করা সত্বেও তাঁর উপর ভুল ইঞ্জেক্সন দেওয়া হয়েছিলো। তার ফলে ভুল চিকিৎসা বা বিনা চিকিৎসার কারনে ও অন্য কিছু অজানা কারনে রহস্যময় পরিস্থিতিতে ডঃ মুখার্জীর মৃত্যু ঘটে।
পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু সারা দেশে ব্যাপক সন্দেহ উত্থাপিত হয় ও স্বাধীন তদন্তের জন্য দাবী করে ডঃ মুখার্জীর মা যোগমায়া দেবী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু কে আন্তরিকভাবে অনুরোধও করেন। কিন্তু যোগমায়া দেবীর দাবি বা অনুরোধ নেহরু গ্রহণ করেনি এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি। তাই এ কথা বলা যেতে পারে নেহেরুর উপেক্ষা এবং কোন তদন্ত কমিশন গঠন না করার ফলে মুখার্জীর ‘রহস্যময় মৃত্যু’ বিতর্কের একটি বিষয় রয়ে যায়।
ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ‘রহস্যময় মৃত্যু’ বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেন — [2004] – “Death of Dr.SP Mookherji was a “Nehru Conspiracy”.
শ্রদ্ধেয় লালকৃষ্ণ আদবানী বলেন — [2011] – “Death of SP.Mookherji is still a Mystery. No Enquiry was conducted”.