‘বহিরাগত’ বজরংবলীর দিকে ঝুঁকছে বাঙালি! লক্ষ্মীর পাঁচালির থেকে বিক্রি বেড়েছে হনুমান চালিশার

গৃহস্থ বাড়িতে বৃহস্পতিবার দুলে দুলে মা-ঠাকুমার লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ, গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত দৃশ্য। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পাঁচালি পাঠ করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ব্যবসা-কর্মক্ষেত্রে উন্নতি এবং ইচ্ছাপূরণ হয়। এমনকী এর প্রভাবে অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং বিপদ মুক্তিও ঘটে।

ইদানীং ছবিটা একটু বদলেছে। মা লক্ষ্মীর প্রতি বিশ্বাস অটুট রেখেও আমবাঙালি ঝুঁকেছে পবনপুত্র হনুমানের প্রতি। কী করে বোঝা গেল? বই বিক্রেতারা বলছেন, লক্ষ্মীর পাঁচালি, বিশুদ্ধ নিত্যকর্ম পদ্ধতি, মেয়েদের ব্রতকথা-র মতো বইগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়ে বিক্রি বেড়েছে হনুমান চালিশা-র। বাংলার মা-বোনেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছেলেরাও প্রতি মঙ্গলবার পড়ছেন, ‘জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর, জয় কপীস তিঁহু লোক উজাগর’।

সম্প্রতি রাজনীতির কেন্দ্রে চলে এসেছে হনুমান চালিশা। মহারাষ্ট্রে মসজিদে মাইকে আজান দেওয়া বন্ধ না হলে হনুমান চালিশা পাঠের হুমকি দিয়েছেন নব নির্মাণ সেনার রাজ ঠাকরে। শুধু তাই নয়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে হিন্দুত্ব স্মরণ করাতে তাঁর বাড়ির সামনেই হনুমান চালিশা পাঠের আয়োজন করে গ্রেফতার হয়েছেন নবনীত রানা এবং তাঁর স্ত্রী। এসবের মধ্যে বাংলাতেও হঠাতই হনুমান চালিশার বিক্রি বাড়ল।

বইপাড়ার গোপাল বুক কনসার্নের দেবেশ সাহা বললেন, ‘লক্ষ্মীর পাঁচালী–সহ অন্য বাঙালী পুজো–পাঠের বইয়ের তুলনায় বিক্রি বেশি হনুমান চালিশার। দিনে চার–পাঁচটা হনুমান চালিশা বিক্রি হয়। সেখানে লক্ষ্মীর পাঁচালীর বিক্রি একটা–দুটো। সবারই ব্যস্ততা বাড়ছে। তাই বৃহস্পতিবার উপোস করে লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ার চল অনেকটাই কমছে। হনুমান চালিশা পাঠ করতে সময় কম লাগে। যে কোনও সময়েই পাঠ করা যায়।’ দেবেশ আরও বললেন, ‘শুধু হনুমান চালিশা নয়, বিক্রি বেড়েছে হনুমানের ছবিরও। পঞ্চমুখী পবনপুত্রের ছবির বিক্রি বেশ বেড়েছে।’ প্রসঙ্গত, রাম, হনুমানকে সরাসরি বহিরাগত দেবতা বলে কটাক্ষ করে কমিউনিস্ট এবং বাংলাপক্ষের মতো কিছু দল। সেই বাংলার মাটিতে হলটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বই বিক্রেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.