বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯শে মে ১৯৬১আসামের কাছাড়ে নিরস্ত্র বাঙালি সত্যাগ্রহীদের উপর নির্মম ভাবে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে ১১জন বাঙালিকে হত্যা করে আসামের চালিহার সরকার । এরই প্রতিবাদে ২০মে ১৯৬১শনিবার কলকাতা ইউনিভর্সিটি ইনস্টিটিউ হলে নিখিল ভারত জনসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক পণ্ডিত দিনদয়াল উপাধ্যায় আসাম সরকারের নতুন করে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে , কোন গণতান্ত্রিক দেশে যে এরূপ দমননীতি চালানো যেতে পারে , তো তাঁর ধরণা ছিলনা।
প্রারম্ভে পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জনসঙ্ঘের সভাপতি দেবপ্রসাদ ঘোষ বলেন যে, ভাষা আন্দোলনে আত্মহুতি দিয়ে কাছাড়ের বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত তর্পণ করলেন। তিনি বলেন আসামে ক্ষমতায় থাকা দল বাঙালিদের শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন। তাঁরা এমন অবস্থা সৃস্টি করতে চান -যা জালিয়ানওয়ালাবাগ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সার্পে ভিল হত্যাকাণ্ডর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । সভায় আসাম মন্ত্রী সভার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
২২শে জুন বৃহস্পতিবার ভারতীয় জনসঙ্ঘের উত্তরাঞ্চলিক সম্পাদক অধ্যাপক বলরাজ মাধক , কাছাড়ের ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি আসামের বর্তমান মন্ত্রিসভা বাতিল করে অবিলম্বে সেখানে রাষ্ট্রপতির শাষন ব্যবস্থা কায়েম করা হয় তাঁর দাবি জানান । ভাষা সমস্যার সমাধানের আবেদন জানিয়ে জনসঙ্ঘ নেতা প্রস্তাব করেন যে , বিশিষ্ট আইনবিদ ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে থেকে তিনজন সদস্য নিয়ে একটি সালিশকারী পর্ষদ গঠন করে আসাম ও পঞ্জাবের ভাষা সমস্যার সমাধানের সুপারিশসহ একটি রিপোর্ট প্রণয়নের ভার ওই পর্ষদের ওপর দেওয়া হোক।
৮ই জুলাই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের অনুষ্ঠানে ‘ অবিলম্বে আসামে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবি জানানো হল। পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় সংহতি সপ্তাহ উদযাপনের শেষ দিনে ইউনিভর্সিটি ইনস্টিটিউ হলের এক অনুষ্ঠানে কাছাড়ের ঘটনাবলির দরুন অবিলম্বে আসামে বাংলার ভাষার স্বীকৃতি এবং আসাম সরকারের অপসারণের দাবি জানিয়ে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে , প্রকাশ্য দিবালোকে ভারতীয় নাগরিকগণের ওপর বিশেষত বাঙালি হিন্দুদের ওপর যে নারকীয় অত্যাচার হয়েছে তা ভারতীয় ঐক্য, সংহতি এবং সার্বভৌমত্বের ওপর প্রচণ্ড আঘাত। শুধু জনসঙ্ঘ নয় হিন্দুমহাসভাও প্রতিবাদ জানায় ১৯ শে মে গুলিচালিয়ে ১১জন সত্যাগ্রহী হত্যার প্রতিবাদে ।
২৪ শে মে বাংলায় যে ঐতিহাসিক হরতাল পালন হয় ৮ টি বামদলের ডাকে সেই হরতালকে সমর্থন করে তাতে সামিল হয় জনসঙ্ঘ হিন্দুমহাসভা হরতাল শেষে দেশবন্ধু পার্কে সুবোধমল্লিক স্কোয়ারে এবং ময়দানে আয়োজিত তিনটি বৃহৎ জনসভায় শান্তিপূর্ণ ভাবে হরতাল পালন করবার জন্য নগরবাসীর প্রতি অভিনন্দন জানানো হয় । ২৭শে মে ৮টি বামপন্থী দলের যে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন ও মিছিল করা হয় সেই মিছিলের জনসংঘ এবং হিন্দুমহাসভার নেতা ও কর্মীরা সামিল হয় মিছিলে ছিল হরিপদ ভারতী , শ্রী অনুতোষ মুখার্জি(ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির পুত্র)। মিছিলে যোগদান কারী মানুষের হাতে সেইদিন কালো পতাকা ছিল।
সৌমেন ভৌমিক