ভারতীয় সংসদে যখন ৩৭০ ধারা বিলোপ প্রস্তাব পাশ হচ্ছে, তখন ইসলামাবাদে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ওই বৈঠকের পরই ইসলামাবাদ ঘোষণা করে দিয়েছিল, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব কমাতে চলেছে তারা। ইসলামাবাদ স্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়াকে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
তার পর পোড় খাওয়া কূটনীতিক অজয় বিসারিয়া দেশে ফিরলেন ঠিকই। কিন্তু তার আগে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে একটি গাছের চারা পুঁতে দিয়ে এলেন। সেই ছবি আবার টুইট করে বললেন, “পাকিস্তান ছাড়ার আগে একটা গাছের চারা পুঁতে দিয়ে এলাম,… আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। অনেক দিক থেকে এটা অর্থবহ”।
পর্যবেক্ষকরা বলেন, কূটনীতিতে কখনও কখনও শরীরের ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এখানে তো অজয় বিসারিয়া নিজেই বোঝাতে চেয়েছেন, গাছের চারা পোঁতার ব্যাপারটা প্রতীকী মাত্র। তা বহু দিক থেকে অর্থবহ।
সাউথ ব্লকের কূটনীতিকদের কথায়, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপের পর পাকিস্তান পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে। কখনও রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে যাচ্ছে, কখনও বা ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিকে খ্যাপাতে চাইছে। বলছে, কাশ্মীরে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলছে।
কিন্তু নয়াদিল্লির কৌশলগত অবস্থানই হল, ইসলামাবাদের এই ফাঁদে পা না দেওয়া। বরং পাকিস্তানের উদ্দেশে বারবার এই বার্তাই দেওয়া যে সংঘাত ও ভারত বিরোধী সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার পথ ছেড়ে আলোচনায় আসুক ইসলমাবাদ। কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব কমানো, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রদ করে দেওয়া, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিশেষ ট্রেন ও বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। তাতে ক্ষতি হচ্ছে পাকিস্তানের মানুষেরই।
নয়াদিল্লি গোড়াতেই স্পষ্ট করেছে কাশ্মীরে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনও আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সে কথার বলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে নয়াদিল্লি এই বার্তাও ধারাবাহিক ভাবে দিয়ে যেতে চায় যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সুষ্ঠু সহাবস্থান চায় ভারত। সংঘাত কোনও ভাবেই উদ্দেশ্য নয়। গাছের চারা পুঁতে দিয়ে আসার ছবিটা সেই দিক থেকে ইঙ্গিতবাহী।
অজয় বিসারিয়া জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে ১৫০ টি গাছের চারা লাগানোর কথা ঠিক হয়েছিল। ১৫০তম চারাটি পুঁতে দেশে ফিরলেন তিনি।