তুমি রয়েছ বলেই – বাংলা এখনো গুজরাট হয়ে যায়নি

গুজরাটে কংগ্রেস এবং আপ ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎসহ বহু জিনিস বিনামূল্যে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয় l তবু কেন বিজেপি? একটা তুলনা করি সেই পৃথিবীর সঙ্গে যা আমরা চোখে দেখতে পাই?

এক : গুজরাটের মানুষের গড় আয় বাংলার ৭৬% বেশী l যেখানে ওখানকার পেট্রল, ডিজেলের দাম আমাদের থেকে ১০ টাকা কম l বিদ্যুতের দাম প্রায় আধা l আজ ০৮.১২.২০২২ তে আলুসহ অধিকাংশ সবজির আহমেদাবাদে কলকাতার চেয়ে কম l (commodityonline.com)

দুই : গুজরাট রাজ্য সরকারের ঋণের পরিমান ওদের GSDP র ১৯%, যেখানে আমাদের ৩৭% l অর্থাৎ রাজ্যে সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলার অভাবের জন্য আমাদের একটি শিশুকে দুগুন ঋণ নিয়ে জন্মাতে হচ্ছে l ওদের রাজস্ব ঘাটতি শুন্য, যেখানে আমাদের রাজ্যে প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার ঋণ নেয় মাইনে দেবার জন্য l

তিন : ওদের জলসম্পদ এবং খনিজ সম্পদ নেই l ওরা নর্মদা থেকে জল এনে কচ্ছ এবং সৌরাষ্ট্রকে ইসরায়েল বানিয়ে দিয়েছে l বানিয়েছে সোয়া লক্ষ চেক ড্যাম l আজ তাঁরা কৃষি রপ্তানি করে কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে বহুগুন l আমাদের অতিরিক্ত জল l অথচ আমরা সেচ ব্যাবস্থার কোন উন্নতি ১৯৭৭ এর পরে করিনি l গত কয়েক বছরে কিছু কাজ হয়েছে l কিন্তু তবু অনেক পিছিয়ে l আমাদের রাজ্যের লক্ষ লক্ষ চাষী প্রতিদিন জমি ফেলে গুজরাট যাচ্ছে রাস্তা, রেল, বন্দরের নির্মাণ কাজ করছে l হাওড়া স্টেশনে যে কোন দিন যে কোন গুজরাটগামী ট্রেনে যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলেই সত্য জানা যাবে l

চার, গুজরাটে ৪২ টা বন্দর, ১৯ টি বিমানবন্দর l ওই রাজ্যে কোন রাজ্যে সড়ক নেই যা ১+১ =২ লেন l কম করে চার বা ছয় লেন l আমাদের ১৯৬৭ র পরে কোন বন্দর বানানো হয় নি l একটা নতুন বিমাননগরী হয় অন্ডালে l কিন্তু রাজ্যের শিল্প নীতির জন্য সেই বিমানবন্দর আজ ধুকছে l ৯০% রাজ্যসড়ক দুই লেন l

গুজরাট ১০০ দিনের কাজে পিছিয়ে l কারণ ওখানে কাজের অভাব নেই l চাষীর মজুরি ১০০ দিনের আয়ের দ্বিগুন l ওদের বিদ্যুৎ সস্তা কারণ ওরা রিনিউএবল এনার্জি উৎপাদনে বিপ্লব এনেছে l বানিয়েছে ফিনান্সিয়াল হাব l আর আমরা ফিনান্সিয়াল হাবের জন্য তিনবার টেন্ডার করে বিডার না পেয়ে সেখানে বানিয়েছি ম্যাডাম ওয়াক্স মিউসিয়ামl

যে রাজ্যে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার থেকে চাষী, করো জন্যই ভদ্রভাবে বেঁচে থাকার প্রায় সব রাস্তা বন্ধ, তাঁদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই গর্বের বিষয় দুই নোবেল লরিয়েট l করার কথাও l ডঃ সেনের মতে, গুজরাত নাকি মানবসম্পদ সূচকে পিছিয়ে কেরালার চেয়ে l কিন্তু বাস্তব কি? আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে হাজার হাজার কেরালার মহিলা স্বামী সংসার ছেড়ে এসে নার্সের কাজ করছেন l তাঁরা গুজরাটের বিভিন্ন হাসপাতালেও আছেন l আমাদের রাজ্যের ৫০ লক্ষ মানুষ পারিযায়ী যার একটা বড় অংশ গুজরাটে এবং কিছু কেরালাতেও l আমি শ্রাদ্ধেয় অর্থনীতিবিদদের বলবো, আপনাদের ট্রাস্টকে একটা সমীক্ষা করে একবার দেখবেন একজন গরিব গুজরাটি পুরো পশ্চিমবঙ্গ বা কেরালায় কোন ছোট চাকরি করতে এসেছে নাকি?হ্যা একজন এসেছে l পশ্চিমবঙ্গে তাজপুর বন্দর এবং কেরালায় ভিজহিঞ্জাম বন্দর বানাতে, যা এই দুই রাজ্যের পারিযায়ী সাংস্কৃতিকে অনেকটা কমিয়ে দেবে l সেই গুজ্জু যাকে আপনারা গালি না দিয়ে দাঁত মাজেন না l গৌতম আদানি l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.