সাবধান! এবার রান্নার গ্যাসের KYC আপডেটের নামে প্রতারণা, শহরে সক্রিয় নতুন গ্যাং

এটিএম কার্ড বা ব্যাঙ্কের বদলে এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় সাংসারিক আবশ্যিক সামগ্রী ও পরিষেবার নাম ভাঙিয়ে গৃহস্থকে প্রতারণা চক্র সক্রিয় হল শহরে। গ্যাস সিলিন্ডার বুকিং, বিদ্যুতের বিল, রেশন কার্ড, গাড়ির লাইসেন্স এবং জীবন বিমার তরফে ‘ফোন করছি’ বলে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নয়া ছক চালু করেছে বড় মাপের গ্যাং।

কলকাতা ও শহরতলিতে একাধিক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটারের নাম ভাঙিয়ে ফোন করে কয়েকজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে পুলিশের কাছে খবর। ‘কেওয়াইসি অনলাইন আপডেট’ না করলে গ্যাস বুকিং ও ভরতুকির টাকা বন্ধ হয়ে যাবে বলে ফোন করে কার্যত হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও দুই প্রধান গ্যাস কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম স্পষ্ট জানিয়েছে, গ্রাহকদের কোনওরকম অনলাইন আপডেট করার কোনও সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ নেওয়া হয়নি। পুরোটাই প্রতারণা চক্রের কাজ

পুজোর মুখে গ্যাস বুকিং ও ডেলিভারি নিয়ে এমনিতেই উদ্বেগে রয়েছেন গ্রাহকরা। দিন কয়েক হল কিছু গ্রাহক ডিস্ট্রিবিউটারের নাম করে পুরুষ কণ্ঠের ফোন পাচ্ছেন। ‘কেওয়াইসি অনলাইন আপডেট’ করার জন্য প্রথমে কনজিউমার নম্বর বলে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করছে। জানতে চাইছে, গ্যাস কোম্পানি থেকে আলাদা করে নতুন নিয়মে এটিএম কার্ডের মত কিছু দিয়েছে কি না? এরপর বলছে, গত মাসে ৬৩৪ টাকা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়েছেন তো? জেনে নিচ্ছে কোন ব্যাঙ্কে আপনার ভরতুকির টাকা জমা পড়ে। যে অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে তার ডেবিট কার্ড আছে কি না? এরপরই ফোনে বলা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার বুকিংয়ের বই এবং ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড দু’টি নিয়ে আসুন। যদি গ্রাহক বলেন, হাতের কাছে তো গ্যাস বুকিং বই নেই, তখন বলছে শুধু এটিএম কার্ড হাতে থাকলেই হবে।
পুলিশের হাতে জমা পড়া একটি ভয়েস রেকর্ডিংয়ে তথ্য এসেছে, একজন গ্রাহক বলছেন, “আমি অফিসে আছি কার্ড বা বই কিছুই সঙ্গে নেই। শনিবার বা রবিবার গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটারের কাছে গিয়ে সমস্ত কিছু জমা দিয়ে আসব। তখন ফোনে কার্যত ধমকের সুরে বলা হচ্ছে, তা হল এখন অনলাইনে গ্যাস বুকিং কেটে দেওয়া হবে। বলছে, “ঠিক আছে, আমি এখন ফোন করে গ্যাস বুকিং সিস্টেম কেটে দিচ্ছি। পরে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফের নতুন করে গ্যাস কানেকশন নিয়ে নেবেন।” এতেই ভয় পেয়ে যাচ্ছেন অনেক গ্রাহক।

গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটারের নাম ভাঙিয়ে ফোন করা প্রতারকদের কার্যত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চাপের মধ্যে পড়ে গ্রাহক এটিএম নম্বর ও পিন বলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কনজিউমার নম্বর ও গ্রাহকের ফোন নম্বর কিভাবে জোগাড় করছে ওই চক্রটি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক শ্রেনির গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি বয়দের হাত করে বিলের নম্বর জোগাড় করছে চক্রের সদস্যরা। স্বভাবতই কনজিউমার নম্বর ও বিলের ডেট বলে গ্রাহকের অনেকটাই বিশ্বাস অর্জন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট কার্ড মারফত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। পুলিশের কাছে জমা পড়া ভয়েস রেকর্ডের গ্রাহক অবশ্য চাপের মুখে ভেঙে পড়েননি, তবে ধমক খেয়েছেন। একইভাবে বিদ্যুতের বিল ও রেশন কার্ড ডিজিটাল করার নাম ভাঙিয়েও গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারক চক্রটি টাকা আত্মসাত শুরু করেছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.