সাবধান! ব্যাঙ্কিং-ঋণখেলাপি নিয়ে রাখাল বালক আবার বাঘের ভয় দেখাতে শুরু করেছে

রাখাল বালক আবার বাঘের ভয় দেখাতে শুরু করেছে l এর আগে রাফেলের পচা শামুকে পা কেটেও শিক্ষা হয় নি l তাই এই সংকটের মুহূর্তে নতুন যাতে সরকার তার পরোক্ষ কর সংগ্রহের ঘাটতি মেটাতে কোন নতুন কর ( Tax ) বা উপকর ( cess ) না বসাতে পারে, তাই একটা পুরোনো RTI কে ঢাল করে নতুন আক্রমণ l

একটা তথ্যের অধিকার আইন ( RTI ) সম্বন্ধীয় প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, 50 ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র সরকার 68000 কোটি টাকা লোনWrite off‘ করেছে এবং তাঁদের মধ্যে মেহুল চোকসি, বাবা রামদেব (Father Ramdev) আছে l Waive off‘ এবং ‘write off‘ এই দুটি শব্দেরই হিন্দি ও বাংলা প্রতিশব্দ ‘মুকুব ‘ আর তার উপর ভিত্তি করেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণ l

প্রথমে, সংজ্ঞাতে আসি l

Waive off মানে সম্পূর্ণ ঋণ মাপ যা কৃষকদের সরকার করে থাকে l ব্যাংকের খাতায় লোনকে শুন্য করা এবং ভবিষ্যতে এনিয়ে কৃষকের আর কোন দায় থাকলো না l সরকার কৃষকদের হয়ে ওই টাকা ব্যাংককে মিটিয়ে দেয় l

আর write off মানে ব্যাংকের খাতা থেকে এই টাকা পাবার আসা ছেড়ে দেয়া হল, কিন্তু ব্যাংক খেলাপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পারবে l বর্তমানে মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়াদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে l 2014 র আগে শুধু এই ব্যাবস্থা মধ্যবিত্তদের বিরুদ্ধে বাড়ি,গাড়ির ঋণের খেলাপির বিরুদ্ধে হত কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে l 2014 র আগে ভারতবর্ষ কোনোদিন কোন বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসি, নীরব মোদীকে দেশ থেকে পালতে হয়েছে? কোনদিন শোনা গেছে ব্যক্তিগত সম্পদ বেঁচে রুইয়ার মতো শিল্পপতি ব্যাংককে টাকা শোধ করেছেন? কিংবা দাদার থেকে টাকা নিয়ে অনিল আম্বানির মতো বড় শিল্পপতি আদালতে এসে পুরোনো দেনা মিটিয়ে গেছেন? গত বছর দেখছে l কারণ নরেন্দ্র মোদীর একটি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত l Insolvency and Bankruptcy code ( IBC 2016) আইন প্রবর্তনl

এবার আসি ঋণখেলাপি কেন হয়?

  1. ব্যবসায়ী তার ব্যবসার জন্য লোন নিয়ে পুরো টাকাটাই বেক্তিগত কারণে সরিয়ে ফেললো l
  2. মূল প্রোমোটার খরচা বেশী দেখিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে ঘুষ নিয়ে কোম্পানিকে বিপদের ফেলে,ব্যাংকের টাকা দিতে অস্বীকার করা l
  3. সব আইন মেনে ব্যবসা করা হল, কিন্তু ব্যবসায় ব্যর্থ হলাম l

তিন ক্ষেত্রেই ব্যাংকের পয়সা ফেরাতের কোন সম্ভাবনা থাকে না l 2016 র আগে আমাদের দেশে ব্যবসা বন্ধ করার নিয়ম ছিল অসচ্ছতায় পূর্ণ, ভয়ঙ্কর কঠিন ছিল কিংবা অসম্ভব l মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেকশন 11 র মতো কোন নিয়ম ছিল না l অসৎ ব্যবসায়ীরা BIFR এ কোম্পানিকে পাঠিয়ে, ওই ধারের টাকা বারংবার পুনর্বিন্যাস করে আত্মস্যাৎ করতো l অনেকেই এই টাকা অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করে নতুন ব্যবসা শুরু করতো নতুন নামে ; আবার নতুন লোন ; আবার এক নাটক; নতুন চক্র l এই অসচ্ছতা ব্যাবস্থায় বিদেশী বিনিয়োগ ভারতে আসতে ভয় পেত l ছোট ব্যবসায়ীরা নাকানিচোবানি খেতেন l নরসিমা রাও ব্যবসা শুরু করার তালা খুলে দিয়েছিলেন ইন্দিরা জামানার বিভিন্ন কাল আইন তথা লাইসেন্স রাজ, কোটা রাজ, মাসুল সমীকরণ তুলে দিয়ে l কিন্তু ব্যবসা বন্ধ করার তালাটি ভারতকে দিয়ে যাননি, যা মোদী এই IBC 2016 এর মাধ্যমে দিলেন l

অন্যদিকে, সরকারি ব্যাংক ম্যানেজাররা লোনকে পুনর্বিন্যাস ( restructuring) করে কয়েকবছর পর অবসর কিংবা বদলি নিয়ে নিজের পিঠ বাঁচাতো l অসচ্ছ এই ব্যবস্থা বাইরে থেকে বেশ স্বচ্ছ লাগতো l কারণ পুনর্বিন্যাসের পর খাতা তো পরিষ্কার হয়ে গেল I ব্যাবসায়ীরা টাকা মেরে কোম্পানিকে BIFR এ পাঠিয়ে দিত l ক্ষতি হত খুচরো শেয়ার হোল্ডার, ব্যাংক, ও শ্রমিকদের l

2016 র আগে দেশে যে লক্ষ লক্ষ পাট /বস্ত্র /ইলেকট্রিক কারখানা, খনি, চা বাগান বন্ধ হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই ক্রেডিটর, ব্যাংক কিংবা শ্রমিকদের সঙ্গে লেনদেনের খাতা কোনোদিন বন্ধ করেছে বলে শোনা যায়নি lপশ্চিমবঙ্গের বন্ধ হাওয়া হাজার হাজার কারখানার 1% ও তার পাওনাদারদের সব পাওনা মিটিয়েছে? তার জন্য কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে কোন সরকার ? কোন কমিউনিস্ট পার্টি একবারও আইন পরিবর্তন করতে বলেছে? কোন ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি করে সরকারি ব্যবস্থার ভয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে? এরা নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরতো,কারণ আইনের ফাকই ওদের রক্ষাকবজ ছিল l

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই ঋণখেলাপি ও ব্যবসা বন্ধের সংজ্ঞা বেঁধে দিলেন IBC 2016 এ l তিন থেকে ছয় মাস ঋণ না দিলে ব্যাংক আর তার দায় নেবে না, যেমন আমাদের মধ্যবিত্তদের বাড়ি ও গাড়ির ঋণের ক্ষেত্রে হয় l একদিকে লোনের খাতা বন্ধ ও অন্যদিকে আইনানুগ ব্যবস্থা l 2 বছরের লোন পুনর্বিন্যাস করে পরবর্তী 30 বছর নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর দিন শেষ l মেহুল চোকসি, নীরব মোদী, বিজয় মালিয়াদের ক্ষেত্রেই তাই করা হয়েছে l ব্যাংক তার লোনের খাতা বন্ধ করেছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে l ব্রিটিশ কোর্টের রায়ে মালিয়া ফেরা সময়ের অপেক্ষা l মেহুল চোকসির বহু সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে lঅন্যদিকে, পয়সা মিটিয়ে দেওয়ায় অনিল আম্বানি, রুইয়ারা তাঁদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়েছে l SBI এর write off হওয়া এক ট্রিলিয়ন ডলার এর মধ্যে 31512 কোটি 2019 র মে মাসের মধ্যে ব্যাংক ফেরত পেয়েছে l স্বাধীনতার পর এতো বড় সাফল্যের নিদর্শন আছে কেউ দেখাতে পারবে? আগে সরকার টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে বাঁচাতো, কিন্তু জনগণ জানতেই পারতো না l

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা সরিয়ে ব্যবসা বন্ধ করাই ছিল দেশের কিছু প্রথম সারির ব্যবসায়ীর মূল ব্যবসা l IBC 2016 সেই রাস্তা অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে l FRDI নামে আরও একটি কঠোর অর্থ বিল আনতে চেয়েছিল সরকার l কিন্তু ব্যাংক ইউনিয়নের ঘুঘুরা এবং বিরোধী দল বেঁকে বসায় সরকার রাজ্যসভায় 2017 তে সেটা পাশ করাতে পারে নি l এবার আরও কড়া ও পরিশোধিত বিল আসছে FSDR নাম নিয়ে l আরও অসৎ ব্যাবসায়ী ধরা পড়বে l ব্যাংকের খাতা পরিষ্কার হবে l সমুদ্রমন্থন চলছে l অমৃত আসবে, বিষও আসবে l বিষ অসুরদের পাঠিয়ে দেয়া হবে l

সুদীপ্ত গুহ

(লেখক বহুজাতিক পরামর্শদাতা কোম্পানি URS Consulting India র ভূতপূর্ব চিফ জেনারেল ম্যানেজার)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.