“उत्तरं यत्समुद्रस्य हिमाद्रेश्चैव दक्षिणम् ।
वर्षं तद् भारतं नाम भारती यत्र संततिः ।।”
“The country (Varsam) that lies north of the ocean and south of the snowy mountains is called Bharatam; there dwell the descendants of Bharata. ” – Vishnu Puran..
দেশের নাম সংশোধন করে ‘ভারত’ হওয়া নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। পার্লামেন্টে ১৮-২২ সেপ্টেম্বর বিশেষ অধিবেশন হতে চলেছে। সেখানে দেশের নাম পরিবর্তন করার প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পার্লামেন্টের আসন্ন অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি আনা হতে পারে। ভারতের সংবিধান বর্তমানে দেশকে “ইন্ডিয়া, এটাই ভারত…” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই “ভারত”-এ সংশোধন করা হতে পারে এমনই জল্পনা।
সংবিধান সংশোধন করে ‘ভারত’ নামকরণের দাবি তীব্রতর হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্র ভারতের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি প্রস্তাব আনতে পারে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই পরিবর্তনের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ভাগবত আগেই “ভারত” শব্দটি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একই অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। ১৫ অগাস্ট, ২০২২-এ, লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে, তিনি নাগরিকদের কাছে পাঁচ অঙ্গীকার গ্রহণের আবেদন করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল দাসত্বের প্রতিটি চিহ্ন থেকে মুক্তি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য যে বিশেষ বিমান ব্যবহার করা হয় তাতেও “ভারত” নাম খোদাই করা আছে।
সংসদের সদ্য সমাপ্ত বর্ষা অধিবেশন চলাকালীন, বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ নরেশ বনসাল সংবিধান থেকে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি বাদ দেওয়ার দাবি করেছিলেন। তাঁর যুক্তি, এটি ঔপনিবেশিক দাসত্বের প্রতীক।
১৮ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তন কার্যকর করার জন্য একটি সাংবিধানিক সংশোধনী বিল পেশ করা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে।
অধিবেশনের আলোচ্যসূচি এখনও প্রকাশ না হলেও এ ধরনের বিলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নাম পরিবর্তনের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে দেশের জন্য একটি একক, আদিবাসী নাম রাখা জাতীয় গর্ববোধ জাগিয়ে তুলবে এবং দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করবে।
দ্রৌপদী মুর্মু’-কে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’- বলে সম্বোধন
এদিকে, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে G20 প্রতিনিধিদের একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আমন্ত্রণ প্রকাশিত হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে ‘ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রপতি’র পরিবর্তে ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি’ লেখা ছিল।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সর্বপ্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি ভবন ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’- বলে সম্বোধন করেন। এরপর থেকেই উঠেছে বিতর্কের ঝড়।
ইন্ডিয়া’ নাম বদল করে ‘ভারত’ করা নিয়ে জোর রাজনৈতিক আকচাআকচি চলছে। কিন্তু কেন? সংবিধানের প্রথম লাইনেই রয়েছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত, শ্যাল বি আ ইউনিয়ন অফ স্টেটস।’ এক জাতি, এক রাষ্ট্র তত্ত্ব অন্তত ভারতের মতো ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’ দেশের ক্ষেত্রে খাটে না।
শকুন্তলা-দুষ্মন্তের ছেলে ভরতের নামে ভারত নামটি এসেছে। চন্দ্রবংশীয় এই রাজা রাজচক্রবর্তী অর্থাৎ অখণ্ড ভারতের সর্বময় ক্ষমতাধারী ছিলেন। ভারত মূল সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ ধারণ বা বহনকারী। কারও মতে, যিনি আলো ও জ্ঞানের অনুসন্ধানী, তাঁকে ভরত বলে।
ইন্ডিয়াকে ভারত কেন বলে?
এ বিষয়ে অসংখ্য মত রয়েছে। ঐতিহাসিক রোশেন দালাল তাঁর দি রিলিজিয়ন অফ ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন,
১। ঋগ্বেদে উল্লিখিত ভরত রাজার নাম থেকে দেশের নাম ভারত হয়েছে।
২। দুষ্মন্ত-শকুন্তলার ছেলে ভরত। যার উত্তরসূরিরা হল পাণ্ডব ও কৌরব।
৩। রামায়ণের রামের ভাই ভরতের নামে এই নামকরণ।
৪। প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর আদিনাথ বা ঋষভের ছেলে ভরত।
৫। নাট্যশাস্ত্রের লেখক ভরতের নাম থেকে এসেছে।
৬। এছাড়াও এই একই নামে অনেক রাজা ও মুনি-ঋষির নাম থেকে আসতে পারে।
তবে সবথেকে বেশি মানুষ বিশ্বাস করেন ভরত রাজার নাম থেকে এই দেশের নাম ভারত হয়েছে। পুরাণমতে, ভারতবর্ষ জম্বুদ্বীপের একটি অংশ ছিল। জম্বুদ্বীপ হল পৃথিবীর সাতটি দ্বীপ বা মহাদেশের একটি দ্বীপ। তবে লেখিকার মতে, ভারতমাতার ধারণাটি উনিশ শতকের দিকে এসেছে। তারও অনেক পরে ১৯৩৬ সালে বারাণসীতে ভারতমাতা মন্দির নামে একটি মন্দিরের উদ্বোধন করেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী।
যদিও ভারতমাতার জন্ম এই বাংলায়। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জলরংয়ে একটি ছবি আঁকেন স্বদেশী আন্দোলনের সময়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কল্পিত রূপের প্রতিকৃতি তৈরি করেন অবন ঠাকুর। প্রবাসী পত্রিকায় ছাপার সময় ছবির নাম ছিল মাতৃমূর্তি। যদিও অবন ঠাকুর ভেবেছিলেন ছবির নাম রাখবেন বঙ্গমাতা। ভগিণী নিবেদিতা এই ছবির নাম দেন ভারতমাতা। ছবির প্রশংসায় নিবেদিতা লিখেছিলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই ছবির আবেদন অনস্বীকার্য। তা নামেই হোক কিংবা ভারতবাসীর মনে। আমার পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তাহলে এই ছবি হাজার হাজার ছাপিয়ে আমি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ছড়িয়ে দেব। কৃষকের কুঁড়েঘর হোক বা শ্রমিকের ঘর সকলের দেওয়ালে যাতে এই ছবি টাঙানো থাকে।
‘ইন্ডিয়া’র বদলে নাম পাল্টে ‘ভারত’ করতে হবে। এই দাবি নিয়ে সংসদে বিল এনেছিলেন কংগ্রেসের দু’জন সাংসদ। বলরাম জাখর লোকসভায় (১৯৯১), শান্তারাম নাইক রাজ্যসভায়(২০১২)। আজ সেই কংগ্রেস অদ্ভুতভাবে ‘ভারত’ নামের বিরোধী। সমাজবাদী পার্টি ২০০৪ সালে লোকসভায় দাবি জানায়, দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ হোক। প্রস্তাবকঃ মুলায়ম সিং যাদব।
সংবিধান সভার সদস্যগণ শেঠ গোবিন্দ দাস, কমলপতি ত্রিপাঠী, রাম সাহাই, হরগোবিন্দ পন্থের মত ব্যক্তিত্বরা সংবিধানে ‘ভারত’ নামই রাখতে চেয়েছিলেন। শেঠ গোবিন্দ দাসের মত কংগ্রেসীর মত ছিল,
“The name Bharat is ‘befitting our history and our culture’, because it was found in the old Hindu literature, whereas the ‘word India does not occur in our ancient books’, ‘We fought the battle of freedom under the leadership of Mahatma Gandhi by raising the slogan of ‘Bharat Mata Ki Jai’.”
তাঁরা সকলেই এই মর্মে সম্মত হয়েছিলেন, ‘ভারত’ নামটাই আমাদের অস্তিত্বের পরিচায়ক কিন্তু সংবিধানকে ‘Worldwide comprehensive’ করার জন্য “India, that is Bharat” এই Phraseটির অবতারণা। [ Conclusion of Discussion, The Constituent Assembly, 17th September, 1949 ]
সংবিধান সভার বিতর্কে অংশগ্রহণকারী বামপন্থী প্রতিনিধি হরিবিষ্ণু কামাথের মত ছিল, “‘India’ denotes a territorial concept, whereas ‘Bharat’ signifies much more than the mere territories of India.”
তবে আজকের বামপন্থীরা ‘ভারত’ নামের মধ্যে একটি ‘Communal approach’ খুঁজে পাচ্ছেন।
যারা আজ ‘ভারত’ নামের বিরোধিতা করছেন, তাদের সামনে অতীতের আয়না টা দেখানো প্রয়োজন বলে একটু লিখলাম।
“প্রেসিডেন্ট অফ ভারত” লেখা নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি। তাদের বক্তব্য তাদের জোটের নামকে ভয় পেয়ে ইন্ডিয়া র বদলে ভারত ব্যবহার করা হয়েছে।
১ ) দেশ বলতে এই দেশের মানুষের ধারণার সাথে মাতৃভূমির কনসেপ্ট যুক্ত। “ভারতমাতা” বলা যায়। “ইন্ডিয়া মাতা” বলা যায় না।
২ ) এই দেশের নাম ভারত তার উল্লেখ আমাদের দেশের বহু প্রাচীন গ্ৰন্থে পাওয়া যায়। যেমন বিষ্ণুপুরাণে উল্লেখ আছে, “বর্ষং তদ্ ভারতং নাম ভারতী যত্র সন্ততি।”
৩ ) যখন সংবিধান রচিত হয় তখন অনেক বেশী ইংরেজী বা বিদেশী কালচারের প্রভাব ছিল। কারণ ১৯০ বছর ইংরেজ শাসন সবে শেষ হয়েছিল। তারপরেও কিন্তু সংবিধানের প্রস্তাবনাতে “ইন্ডিয়া দ্যট ইজ ভারত” লেখা হয়েছিল। কারণ ভারত নামটাই এই দেশের মূল বৈশিষ্ট্য বহন করে।
৪ ) বিরোধীদের বক্তব্য, ইন্ডিয়া নাম তো দেশকে বোঝায়। সেই নাম কেন ব্যবহার হবে না ? আপনারা যখন জানেন যে ইন্ডিয়া নামটা গোটা দেশকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তাহলে নিজেদের জোটের নাম “ইন্ডিয়া” বলে উল্লেখ করছেন কেন ? দেশের নামকে কেবল নিজেদের সঙ্কীর্ণ রাজনীতির মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন কেন ?
৫ ) নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে জোট করার আপনাদের প্রধান কারণ আপনারা বলেন মোদি ও বিজেপি সাম্প্রদায়িক আর আপনারা ধর্মনিরপেক্ষ। সেক্যুলার। তাহলে secular শব্দটা আপনাদের জোটের নামে নেই কেন ? INDIA লিখতে S পরেনা সেইজন্যে তো ?
৬ ) I,N,D,I,A নাম করেছেন যাতে INDIA বলে কিছুটা অতিরিক্ত সহানুভূতি পাওয়া যায়। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছেন সেই ভয়ে। আর এখন বলছেন আপনাদের জোটের ইন্ডিয়া নাম থেকে নরেন্দ্র মোদি ভয় পাচ্ছেন। নিজেদের ভয় অপরের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন।
৭ ) আপনারা তো I,N,D,I,A কে INDIA বলে সেটাকে ভারত বলেও ভাষণে চালিয়ে দিচ্ছিলেন। এখন তাহলে ভারত নামে ভয় পাচ্ছেন কেন ?
৮ )অনৈতিকভাবে ইন্ডিয়া শব্দের এডভান্টেজ নিতে চাইছেন। Inclusive শব্দটার একটা জোটের নামকরণে কোন প্রয়োজন আছে কি ? কেবল I,N,D,I,A লিখতে দ্বিতীয়বার I অক্ষরটার জন্য এই শব্দটা নিয়েছেন।
আপনারা কি ভাবছিলেন, আপনারাই শুধু বুনো ওল হবেন। আর প্রতিপক্ষ বাঘা তেঁতুল হবে না ? আপনারা অফ সাইড থেকে গোল করবেন আর প্রতিপক্ষ গোল হজম করে নেবে ?