ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্ভীক সৈনিক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, খালি হাতে বাঘ মারার জন্য তাঁর নাম হয়েছিল বাঘা যতীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ব্রিটিশ সরকারের ওপর চরম আঘাত হানতে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। ওড়িশার বালেশ্বরে বুড়িবালাম নদীর তীরে মাত্র চার জন সঙ্গী নিয়ে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে অকুতোভয় লড়াই চালিয়ে শহিদ হন। আজ বাঘা যতীনের জন্মদিন।
বাঘা যতীনের জন্ম হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলায়। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি স্টেনো টাইপিং শেখেন। বেঙ্গল গর্ভনমেন্টের স্টেনোগ্রাফার নিয়োজিত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিপ্লবী কার্যকলাপ। তিনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত। নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। কুস্তিতেও পারদর্শী ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষের আহ্বানে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। কলকাতার ১০২ নং আপার সার্কুলার রোডে বিপ্লবীদের এক গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন কয়েকজন মিলে। বোমা তৈরিও শুরু করেন গোপনে।
পুলিশ অফিসার মৌলভি শামসুল আলমকে হত্যা করার নেপথ্য নায়ক ছিলেন বাঘা যতীন। এই হত্যার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ বাঘা যতীন এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে শুরু হয়েছিল হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা। বিচারে যতীন্দ্রনাথ নির্দোষ ঘোষিত হন। তবে, এই মামলার অভিঘাতে তাঁর চাকরিটি আর থাকে না। ছাড়া পেয়ে দিদি এবং স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঝিনাইদহে বসবাস শুরু করলেন বাঘা যতীন। কিন্তু চুপ করে বসে থাকার মানুষ ছিলেন না তিনি। সারা দেশের বিপ্লবীদের তিনি ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিলেন। সেই উদ্দেশ্যে নরেন সন্ন্যাসী ছদ্মনামে ভারতব্যাপী ঘুরে বেড়ালেন। দু’বছর এভাবেই তিনি বিপ্লবীদের সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯১৩ সালে বন্যার ত্রাণে একত্রিত হন ভারতের নানা প্রান্তের বিপ্লবীরা। তাঁরা সবাই আলাপ আলোচনা করে বাঘা যতীনকে বাংলা এবং রাসবিহারী বসুকে উত্তর ভারতের নেতার পদ প্রদান করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জার্মান সরকারের সঙ্গে ভারতীয় বিপ্লবীদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। জার্মান প্রশাসন ভারতীয় বিপ্লবীদের অস্ত্র এবং রসদ জোগান দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাঘা যতীন ওড়িশার বালেশ্বরে লুকিয়ে থাকেন। আর নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য পাড়ি দেন বাটাভিয়া। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশবাহিনীর সঙ্গে এক ভয়াবহ গুলিযুদ্ধে গুরুতর আহত হন বাঘা যতীন। পরের দিন বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।