কাজে ফের বহাল করার দাবি জানিয়ে বাঁকুড়া জেলার একটি ফ্লাওয়ার মিলে লাগাতার অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মচ্যুত শ্রমিকরা। শ্রমিক বিক্ষোভের এই ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া-১ ব্লক এলাকার পাতাকোলার একটি ফ্লাওয়ার মিলে। জানা গিয়েছে কর্মচ্যুত ওই শ্রমিকদের কাজ ফেরতের দাবীতে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে জেলার শাসকদল তৃণমূলও।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এই ফ্লাওয়ার মিলে তারা কাজ করছেন। জানা গিয়েছে এই মিলে শ্রমিকদের প্রতিদিন তিনটে সিফ্টে কাজ করতে হয়। জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত তারা এখানে ৩১ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। পরে পুজার ছুটির পর একাদশীর দিন তারা কাজে যোগ দিতে গেলে কর্ত্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয়। কাজে বাধা দেওয়ার কারন জানতে চাইলে ওই মিল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনও উত্তর দেয়নি বলে জানিয়েছেন মিল শ্রমিকেরা।
এদিকে পুজোর ছুটির পর থেকে বাইরে থেকে নতুন শ্রমিক নিয়ে এসে মিলে কাজ করানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে মিলের আগের পুরনো শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, এখন ওই মিলে বাইরে থেকে আসা নতুন কর্মচারীরাই কাজ করছেন। শুধু তাই নয় আগের পুরনো শ্রমিকদের মিলে ঢুকতে দেওয়া এবং কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শ্রমিকরা ।
সূত্রের খবর, আন্দোলনে অংশ নিয়ে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের পক্ষে মনোজ সিং, রাজেশ মল্লিকরা বলেন, পুজোর ছুটির পর একাদশীর দিন তাঁরা সবাই কাজে যোগ দিতে গেলে মিল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দেখেই মিলের গেট বন্ধ করে দেয়। এমনকি জানা গিয়েছে, পুরনো শ্রমিকদের সঙ্গে মিল কর্তৃপক্ষ কোনও রকম আলাপ আলোচনা ছাড়াই নতুন শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত করেছেন।জানা গিয়েছে, নতুন শ্রমিক এনে কাজ চালানোর ঘটনার পর থেকে তারা গেটের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন। এদিন বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, ‘আমরা কাজ হারানো শ্রমিক’। জানা গিয়েছে যতদিন না পর্যন্ত মিল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিয়ে কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সূত্রের খবর, মিল কর্তৃপক্ষ অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত লোকেদের দিয়ে নানাভাবে শ্রমিকদের উত্যক্ত করে তাঁদের বিক্ষোভ হটানোর চেষ্টা করলেও, তারা কোনও প্ররোচনায় পা দেননি। একই সঙ্গে যারা এখন মিলে কাজ করছেন তাদেরও বাধা দেননি আগের পুরনো শ্রমিকরা। এই অবস্থায় কাজ ফেরতের দাবীতে শ্রমিকদের এই আন্দোলনকে তৃণমূলের তরফে সমর্থণ জানানো হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে কাজ ফেরতের দাবীতে তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে এই বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষের তরফে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের দায়ভার নিতে অস্বীকার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার এস এস আরোরা এদিন বলেন, ওই শ্রমিকরা ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছিল। ঠিকাদার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নতুন কর্মী নিয়োগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কর্মীদের আন্দোলনের বিষয়টি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর বাইরে তিনি নতুন করে আর কোনও মন্তব্য করতে পারবেননা বলে জানিয়েছেন ওই মিলের ম্যানেজার এস এস আরোরার।
এই বিষয়ে বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, রাজ্যে শিল্প কারখানা বন্ধে শ্রমিকদের উস্কানির পিছনে ৩৪ বছরের বাম সরকারের পাশাপাশি বর্তমানে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারও সমানভাবে দায়ী । তিনি বলেন, তৃণমূলের ‘উস্কানী’তে শ্রমিকরা তাদের দলীয় পতাকা নিয়ে আন্দোলন করছে। এর পিছনে রাজ্যে এখনও চালু থাকা শিল্প গুলি বন্ধের চক্রান্ত হচ্ছে বলেও তিনি দাবী করেন।