ডঃ সুব্রমনিয়ম স্বামী ও গবেষক টি মোহনদাসের আলোচনায় বহু তথ্যসমৃদ্ধ প্রশ্ন তোলা হয়েছে যার উত্তর আজও আমাদের অজানা।
১। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি আধঘন্টা বেঁচে ছিলেন। রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল ওখান থেকে মিনিট সাতেকের দুরত্ব। তবু ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা কারুর মনে হোল না কেন?
২। মরদেহের কোন ময়না তদন্ত বা post-mortem করা হয়নি কেন?
৩। থানায় যিনি ডায়রি করেন তিনি এক হোটেলের মালিক। তাঁরই হোটেল থেকে নাথুরাম গোডসে ও তাঁর সঙ্গীরা এসেছিলেন বিড়লা হাউজে। তাঁর এমন ভূমিকা কেন?
৪। নাথুরাম গোডসের হাত থেকে যে পিস্তলটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়, সেটি ‘ব্যারেতো’, ইতালিয়ান পিস্তল। শক্তিশালী উচ্চমানের অস্ত্র; কিন্তু ভারতের বাজারে পাওয়া যেত না। ব্রিটেন যখন আমেরিকার সাহায্য ইতালিকে দখল করে তখন কিছু ইংরেজ সেনা স্মরণিকা হিসেবে কয়েকটা ‘ব্যারেতো’ পিস্তল হস্তগত করে। তারই মধ্যে একটা কিভাবে গোডসের হাতে এল?
৫। হত্যার দশ দিন আগে, অর্থাৎ ২০’শে জানুয়ারি গান্ধী’কে আর একবার হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল। বিড়লা হাউজেই বোমা পড়েছিল। ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতেই দ্বিতীয় একটি বোমা সরাসরি গান্ধীকে লক্ষ্য ক’রে ছোঁড়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কাজটি যার করার কথা সে ভয় পেয়ে যায়। সবাই ধরা পড়েছিল, তার মধ্যে নাথুরাম গডসেও ছিলেন। কিছুকাল পরেই সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কেন? নাথুরাম গোডসে চলে যান বম্বেতে। মোরারজি দেশাই, তখন বম্বের রাজ্যমন্ত্রী, খবর পান যে গান্ধীকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল এমন একজন বেশ স্বাধীন ভাবে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রকের কাছে অনুমতি চান নাথুরামকে গ্রেপ্তার করার জন্য। তাঁকে নিষেধ করা হয়। কেন?
৬। গান্ধীর দুই পাশে ছিলেন মনু ও আভা। এই দুই নারীকে কেন আদালতে সাক্ষী দিতে ডাকা হয়নি? কেন পুলিশ তাঁদের কোন বয়ান নেয়নি?
৭। পরে মনু জানিয়েছিলেন যে তিনি বেলা ১২’টার সময়ে নাথুরামকে সেদিন দেখেছিলেন বিড়লা হাউজে, গান্ধীকে প্রণাম করতে এসেছিলেন। কথাটার সত্যতা কেন যাচাই করা হয়নি?
৮। আজও নিশ্চিত ক’রে কেন কেউ বলতে পারে না যে ঠিক কটা গুলি ছোঁড়া হয়েছিল গান্ধীর দিকে? কেউ বলেন ‘তিন’, অনেকেই বলেন ‘চার’। এমনকি তার চাদরটিও কখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি কেন যে তাতে কটা ফুটো তৈরি হয়েছে? মাঠের উপর একটা কার্টরিজ মনু খুঁজে পেয়ে পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই সামান্য প্রাথমিক তল্লাশীটুকু পুলিশ নিজেরা করতে পারেনি কেন?
৯। নাথুরাম গোডসের সেই ইতালিয়ান পিস্তলটিও পরে বেপাত্তা হয়ে যায়। কিভাবে? যাতে সেটাকে পরে পরীক্ষা করে বোঝা না যায় যে কটা গুলি ছিল আর কটা খরচা হয়েছিল?
১০। নাথুরাম গোডসে পালাতে পারতেন, চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে ধরে ফেলেন আমেরিকান এমব্যাসির এক সিকিউরিটি অফিসার। পুলিশের কাছে তাঁর বয়ান আজও classified. আমেরিকান এমব্যাসির কাছে সেই দলিল জমা আছে। ৭৩ বছর হয়ে গেল, আজও ভারত সরকার একবারও সেই দলিলটি চায়নি কেন আমেরিকার কাছ থেকে?
১১। কেন মনু পরে বলেছিলেন যে কংগ্রেসের সবাই বাপুর মৃত্যুই কামনা করছিল কিছুকাল ধরে?
১২। গান্ধীজী জানিয়েছিলেন যে আর একবার শেষ চেষ্টা করবেন ভেঙে যাওয়া ভারতকে জোড়া লাগাতে। তাতে কেন অতিশয় বিরক্ত ও অসহিষ্ণু হয়েছিলেন তথাকথিত স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লুইস মাউন্টব্যাটন?
১৩। প্রতিদিন বিকেলে কাঁটায় কাঁটায় ৫’টায় তিনি বেরিয়ে আসতেন বিড়লা হাউজের ঘর থেকে। বাগানের মধ্যে কিছুটা হেঁটে এসে বসতেন ছোট্ট মঞ্চে প্রার্থনা ও প্রবচন করতে। সেদিন, অর্থাৎ, ৩০’শে জানুয়ারি, তাঁর দশ মিনিট দেরি হয়েছিল। তাঁকে অনেক্ষণ কথা বলতে হয়েছিল সর্দার পটেলের সাথে। পটেল তখন কাশ্মীর নিয়ে নেহেরুর হঠকারি সিদ্ধান্তে রীতিমত ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে ছিলেন। গান্ধী তাঁকে কী বুঝিয়েছিলেন? যে কথাটা কয়েকদিন আগে থেকেই বার বার বলে আসছেন? যে তিনি কংগ্রেস ভেঙে দেবেন? এবং দুটি দল তৈরি করবেন? একটির নেতৃত্বে জহরলাল নেহেরু এবং অন্যটির দায়িত্বে সর্দার পটেল? এবং লৌহ মানবকে সেদিন তিনি কি এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন যে পটেল যেহেতু কংগ্রেসে অনেক বেশি জনপ্রিয় ও দেশের মানুষের কাছেও অধিক গ্রহণযোগ্য তাই তাঁর আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা সুগম হবে?
১৪। কেন তাঁর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছিল সেই ১৯৪৪ সাল থেকেই? কেন তিনি এক প্রকার একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন? কেন তাঁর বিশ্বস্তজনেরা তাঁকে ত্যাগ করেছিলেন? কেন দিল্লির রাস্তায় রিফিউজিরা তাঁর মৃত্যু কামনা করে মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলেন?
১৫। গান্ধী মৃত্যুতে কে বা কারা সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছিল?
১৬। বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত কোথায় শুনেছিলেন যে গান্ধী হত্যা আসলে একটি ব্রিটিশ চক্রান্ত?
এমন আরও বহু বিকর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয় উঠে এসেছে এই মনোজ্ঞ ও খোলামেলা আলোচনায়। উঠেছে RSS ও বীর সাভারকারের কথাও।
✍️- জয়দীপ